জেলার পঞ্চয়েতের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ২৬ জুন। পরবর্তী নির্বাচিত পঞ্চায়েত বোর্ড গঠন করতে অগস্ট গড়িয়ে যাবে। ফলে পারিবারিক আয়, পেশা ও বাসস্থানের শংসাপত্র যোগাড় করতে আতাম্তরে পড়েছেন মুর্শিদাবাদ জেলার লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রী। শংসাপত্র জোগাড় করতে কালঘাম ছুটে যাওয়া ওই সব ছাত্রছাত্রীরা হয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের, নয়তো তফসিলি জাতির অথবা বিড়িশ্রমিক পরিবারের। পারিবারিক আয়, পেশা ও বাসস্থানের শংসাপত্র যোগাড় করতে না পারায় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ফলে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের অনুদান থেকে জেলার বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে লক্ষাধিক ছাত্রছাত্রীর। একই ভাবে সরকারি চিকিত্সা পরিষেবা সংক্রান্ত খরচের ছাড় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন দরিদ্র পরিবারের হাজারেরও বেশি প্রসূতিরা।
বিড়ি শ্রমিক ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুসিত লালগোলার লস্করপুর হাইস্কুলের কথাই ধরা যাক। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৪০০ জন ছাত্রছাত্রীর প্রত্যেকের জন্য বৃত্তি হিসাবে হাজার টাকা থেকে বারোশো টাকার চেক পাওয়ার কথা। সরকারি দফতর থেকে সেই চেক স্কুলে পাঠানো হয়েছে গত ৪ জুলাই। স্কুলের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গির আলম বলেন, “অ্যাকাউন্ট খুলে চলতি জুলাই মাসের মধ্যে ব্যাঙ্কে ওই সব চেক জমা দিতে হবে। নইলে চেক তামাদি হয়ে যাবে। বিড়ি শ্রমিক পরিবারের ৪০০ ছাত্রছাত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকউন্টও এ মাসের মধ্যে তৈরি করতে হবে। তারপর ওই অ্যাকউন্ট নম্বর-সহ ছাত্রছাত্রীদের নামের তালিকা সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরে এ মাসের মধ্যেই পাঠিয়ে দিতে হবে। নইলে হতদরিদ্র পরিবারের ওই সন্তানরা সরকারি আর্থিক অনুদান থেকে বঞ্চিত হবে।” আর ওই সব ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্যই আয়, পেশা ও বাসস্থানের শংসাপত্র আবশ্যিক।
এই বিষয়ে একমত কংগ্রেস, সিপিএম এবং তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের জেলানেতারাও। ডব্লিউবিটিএ-র মুর্শিদাবাদ জেলা সভাপতি মহফুজ আলম ডালিম বলেন, “প্রধানদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা আর শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষমতা হারিয়েছেন। তার ফলে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করতে বিপাকে পড়ছে ছাত্রছাত্রীরা।” সমস্যার কথা মেনে নিয়েও একটু ভিন্ন সুরে কথা বলেন ‘‘ তৃণমূল কংগ্রেস মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র জেলা আহ্বায়ক শেখ ফুরকান আলি। তিনি বলেন, “পঞ্চায়েত নিয়ে বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সমস্যা একটা তৈরি হয়েছে ঠিকই।
কিন্তু ওই সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য বিডিও অথবা তাঁর প্রতিনিধিকে শংসাপত্র দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।” লালগোলার বিডিও প্রসেনজিত্ ঘোষের অবশ্য দাবি, “শংসাপত্র দেওয়ার জন্য পঞ্চায়েতের সচিবদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁরাই শংসাপত্র দিচ্ছেন।” লালগোলা ব্লকের যশোইতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব মহম্মদ গাজিরুদ্দিন বলেন, “শংসাপত্র দেওয়ার জন্য আজ পর্যন্ত আমার হাতে সরকারি কোনও নির্দেশিকা পৌঁছয়নি। ফলে আমার পক্ষে কাউকে শংসাপত্র দেওয়ার কথাই ওঠে না।” বেশ কয়েকদিন ধরে শংসাপত্র যোগাড়ের চেষ্টায় বিধ্বস্ত লালগোলা ব্লকের দেওয়ানাসরাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মইদুল ইসলাম বলেন, “আমার ভাইঝি নবম শ্রেণির ছাত্রী। তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউণ্টর খোলার জন্য শংসাপত্র খুব জরুরি। কিন্তু সেই শংসাপত্র যোগাড় করতে ৫ দিন ধরে পঞ্চায়েত ভবনে হত্যে দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। অবশেষে সদ্য ক্ষমতা হারানো এক পঞ্চায়েত কর্তার ‘ব্যাক ডেটে’ দেওয়া শংসাপত্র নিয়ে অবস্থা সামাল দিয়েছি।” |