|
|
|
|
|
|
|
এক প্রাচীন জনপদের ইতিবৃত্ত |
ঐতিহ্যের হাওড়া |
উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে হাওড়ার বর্ণনা পাওয়া যায় আ স্ট্যাটিস্টিক্যাল অ্যাকাউন্ট অব বেঙ্গল-এর তৃতীয় খণ্ডে। ঔপনিবেশিক উদ্যোগে হান্টারের সেই তথ্য-সংকলন প্রকাশিত হয় ১৮৭৬-এ। কিন্তু সাহেবদের আগেই বাঙালি অনুসন্ধানী চন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়-এর (১৮৪১-১৯০৫) প্রচেষ্টার কথা কে মনে রেখেছেন? হাওড়াবাসী খ্রিস্টান চন্দ্রনাথ নিজস্ব উদ্যোগে হাওড়া শহরের ভূগোল, ইতিহাস, মন্দির-মসজিদ-গির্জা, উৎসব, শিল্পোদ্যোগ, বাণিজ্য, লবণ-গোলা, রাস্তাঘাট, গঙ্গার প্রবাহ-পরিবহণ, ডক, ফেরিঘাট, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদির তত্ত্বতালাশ করে ১৮৭২-এ প্রকাশ করেন ৯৮ পৃষ্ঠার এক বই, লাইট প্রেস থেকে তা ছেপেছিলেন ড্যানিয়েল ঘোষ। স্মারক-সূত্র, পারিবারিক ধারা, সমসাময়িক ঘটনাপঞ্জির সঙ্গে ক্ষেত্রসমীক্ষা মিলিয়ে তৈরি বইটিতে আঞ্চলিক ইতিহাসের বয়ানে বৃহত্তর সংযোগ-সম্পর্কের হদিশ ছিল। কিন্তু সে বই এখন সুদুর্লভ বললেও অত্যুক্তি হয় না। চন্দ্রনাথ সম্পর্কেও বিশেষ তথ্য পাওয়া যায় না, সরকারি চাকরি করতেন বলে সার্ভিস রেকর্ডে সামান্য তথ্য আছে, তা ছাড়া মাইকেল মধুসূদনের বন্ধু ছিলেন, এইটুকুই। |
|
এ বার রাজ্য সরকারের উচ্চশিক্ষা দফতরের অধীন ‘পশ্চিমবঙ্গ জেলা গেজেটিয়ার্স’ থেকে অ্যান অ্যাকাউন্ট অব হাওড়া পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট (৪২৫.০০) পুনর্মুদ্রিত হল-- সঙ্গে মূল লেখার যোগসূত্রে রয়েছে শতাধিক পাতার টীকা-মন্তব্য, মানচিত্র, নকশা-চিত্র ও আলোকচিত্র। উনিশ শতকের মধ্যভাগে আঁকা কাজিপাড়া মসজিদের তৈলচিত্রের প্রতিলিপিও সংযোজিত হয়েছে (ডান দিকে কাজিপাড়া মসজিদের সাম্প্রতিক ছবি: দীপঙ্কর ঘোষ)। সংযোজিত হয়েছে ১৮৭২-এর হুগলি-সহ হাওড়ার জনগণনা তথ্য, ইস্ট ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কোম্পানি, বটানিক্যাল গার্ডেনের বর্ণনা। প্রকাশনাটির নবরূপায়ণ হাওড়ারই প্রবীণ গবেষক শিবেন্দু মান্না-র সম্পাদনায়।
অতীতের শহর হাওড়ার পরিসরের বাইরে সম্প্রতি প্রকাশিত শিবেন্দু মান্নারই হাওড়া: ইতিহাস-ঐতিহ্য (সহজপাঠ, ২৪০.০০) হাওড়া জেলার প্রত্নক্ষেত্র, মূর্তি-ভাস্কর্য, দেবালয়, ইসলামি সংস্কৃতি, নদ-নদী, স্থলপথ ইত্যাদি নিয়ে গভীর আলোকপাত। আবার, সুকান্ত মুখোপাধ্যায়ের পুরোনো হাওড়ার কথা-য় (ন্যাশনাল বুক এজেন্সি, ৭৫.০০) আছে নগর হাওড়ার প্রাচীনত্ব, দলিল-দস্তাবেজ, মুদ্রা ইত্যাদি তথ্য। নগর গড়ে ওঠা আর বৃহত্তর ভৌগোলিক সংযোগে বেড়ে ওঠা জনপদের পরিচয় উজ্জ্বল হয়েছে এই সব বইয়ে।
|
নাটকের উৎসব |
বাঙালি এখন পুরোদস্তুর গ্লোবাল। পাশাপাশি আবার আত্মসংস্কৃতিতেও তন্নিষ্ঠ। তারই প্রমাণ মিলবে ১৫-২৪ জুলাই প্রাচ্য আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক বাংলা নাটকের উৎসব’-এ। বাংলাদেশের ঢাকা যশোর চট্টগ্রাম থেকে আসছে যেমন নাট্যদল, তেমনই আসছে ইলাহাবাদ মুম্বই দিল্লি বেঙ্গালুরু থেকেও। সব্বাই বাংলা নাটক করতেই আসছে, বেলঘরিয়ায় কামারহাটি নজরুল মঞ্চে। বেলঘরিয়ারই মানুষ পানু পাল, যাঁর পোশাকি নাম পূর্ণেন্দু পাল, যাঁর দিন কেটেছে অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির ছত্রচ্ছায়ায়, পথনাটক-এর পুরোধা ছিলেন যিনি, তাঁকেই উৎসর্গ করা এ-উৎসব শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থনেও বটে। দুই বাংলার মিলনবিন্দু বলে উদ্বোধনে গাইবেন ওপার বাংলার শিল্পীরা। ঢাকার নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার সে দিন সন্ধ্যায় ‘প্রথম প্রাচ্য সম্মান’ তুলে দেবেন এ-বাংলার রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের হাতে। উৎসব চলাকালীন থাকবে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জীবন ও শিল্প নিয়ে একটি প্রদর্শনীও। সহযোগিতায় বেঙ্গল ফাউন্ডেশন।
|
একটি নক্ষত্র |
প্রথম বইতেই স্বনামধন্য। ১৯৬৫-তে প্রকাশিত হয় একটি নক্ষত্র আসে। জীবনানন্দ চর্চার আদি পর্বের এই সুপরিচিত বইটি লেখেন অম্বুজ বসু। ’৮৩-তে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণ ও ’৯৯-এ তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। অম্বুজ বসুর জন্ম ১৯৩১-এর ১ অগস্ট। ১৯৫৮ থেকে অধ্যাপনা করেছেন আরামবাগ কলেজে। বিদ্যাসাগর ও রামমোহনকে নিয়ে লিখেছেন নানা প্রবন্ধ, ’৯১-এ লেখেন বিদ্যাসাগর বইটি। আরামবাগ সাহিত্য পরিষদের একদা প্রাণপুরুষ, অঞ্চলের ইতিহাস ছিল তাঁর নখদর্পণে। বাংলার মন্দির টেরাকোটা-র ইতিহাস রচয়িতা ডেভিড ম্যাককাচ্চন আরামবাগে কাজ করার সময় পেয়েছিলেন তাঁর প্রভূত সাহায্য। ব্যক্তিজীবনে লাজুক, সংস্কারহীন মানুষটি সম্প্রতি প্রয়াত হলেন ।
|
বাংলার জন্য |
বাংলা ভাষার জন্যই ঢাকায় সম্প্রতি জন্ম হয়েছে এই গোষ্ঠীর। গান, সাহিত্য, নাটক ও সিনেমাকে হাতিয়ার করে পৃথিবীব্যাপী বাংলা ভাষার প্রচার। এই উদ্দেশ্যেই ঢাকার কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি তৈরি করেছেন বাংলা ফাউন্ডেশন। এই শহরের সঙ্গেও এ বার গাঁটছড়া বাঁধবে সংস্থাটি। অবশ্যই রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ করে। সেই উপলক্ষে ১৪ জুলাই মধূসুদন মঞ্চে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় ‘কবি প্রণাম’। ও পার বাংলার অদিতি মহসিন ও আজিজুর রহমান তুহিনের সঙ্গে থাকবেন এ পারের মনোময় ভট্টাচার্য, জয়তী চক্রবর্তী, সৌমী ভট্টাচার্য, শমীক পাল, প্রবুদ্ধ রাহা। উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ও বাংলা ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবু হেনা রেজ্জকী ও কলকাতার নগরপাল সুরজিৎ করপুরকায়স্থ।
|
বীতশোক স্মরণ |
সত্তর দশকের অন্যতম প্রধান কবি তিনি, কিন্তু তাঁকে নিয়ে আলোচনা হয়নি বিশেষ। প্রচারের আড়ালে থাকতেই পছন্দ করতেন। আর তাই, বীতশোক ভট্টাচার্য বলতেই মনে পড়ে এক কবিতাপাগল মানুষকে, গদ্যেও যাঁর দাপুটে দখল। ১৯৬৯-এ জগদীশ ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘কবি ও কবিতা’ পত্রিকায় প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়, ‘কখনো পাগল’। ২০১২-য় মৃত্যু পর্যন্ত বেশ কয়েকটি কবিতার বই, জেন গল্প জেন কবিতার অনুবাদ, লোকনাথ ভট্টাচার্য রচনাবলি সম্পাদনা না-হাঁটা পথেই বারেবারে হেঁটে যাওয়া তাঁর। তারই বিশ্লেষণ এ বার প্রভাত মিশ্রের কবি বীতশোক (সৃজন) বইয়ে। আর ১৪ জুলাই তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে ‘এবং মুশায়েরা’ পত্রিকার উদ্যোগে থিয়জফিক্যাল সোসাইটি হলে বীতশোক সন্ধ্যা। থাকবেন ভূমেন্দ্র গুহ, রণজিৎ দাশ, মৃদুল দাশগুপ্ত, রবিন পাল, সংযম পাল, রতন জানা, গোপা দত্ত ভৌমিক প্রমুখ।
|
শঙ্খমালা |
বিহারীলাল থেকে জয় গোস্বামী, জীবনানন্দ থেকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং অবশ্যই রবীন্দ্রনাথের কবিতাকণা পোস্টারে পোস্টারে চলমান। প্ল্যাকার্ডে শম্ভু মিত্র, কাজী সব্যসাচী প্রমুখর বাচিক শিল্প নিয়ে নানা ধারণা। শুধু কবিতা আর আবৃত্তি-সহ বাচিক শিল্প নিয়ে অভিনব এক মিছিলের আয়োজন করেছে ‘শঙ্খমালা’। পঁচিশ বছর ধরে বাচিক শিল্পে কাজ করছে তারা। মিছিলে পা মেলাবেন পার্থ ঘোষ, গৌরী ঘোষ, ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজয়লক্ষ্মী বর্মনের সঙ্গে শঙ্খমালার শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবার। ১৪ জুলাই সংস্থার পঁচিশতম জন্মদিনে মিছিল যাবে বেলঘরিয়া থেকে কামারহাটি। পরিকল্পনায় সুমন্ত্র সেনগুপ্ত।
|
আশ্চর্য যান |
কলকাতার আড্ডাকেও টেনে নিয়ে চলে টানা রিকশা! কী করে? কেন, রিকশা-ই তো সেই যান যা অপেক্ষা করতে পারে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, বেপাড়ায় আড্ডাধারী প্রবীণটিকে আড্ডাশেষে স্বপাড়ায় ফেরাবে বলে! কলকাতার অলিগলির সঙ্গে লেপ্টে থাকা এই আশ্চর্য যানটিকে নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে এমনই নানা দিক তুলে ধরেছেন শিরিন হিরিপিয়েত এবং অ্যালিসন গ্রেনার। ‘দ্য জিয়োগ্রাফিক্যাল রিভিউ’ পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে দু’জনের দীর্ঘ গবেষণাপত্র। ওকলাহোমা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অ্যালিসন ভূগোলের অধ্যাপক, শিরিন গবেষক। গবেষণার জন্য দীর্ঘ সময় এ শহরে কাটিয়ে শিরিন দেখেছেন বর্ষার সময় এই বাটির মতো শহরটায় কী করে টানা-রিকশাই হয়ে ওঠে ত্রাতা মধুসূদন, কিংবা গলি থেকে গলি ভারী জিনিসপত্র বহনে কী অমানুষিক পরিশ্রম করেন রিকশাচালকেরা। ঔপনিবেশিক শাসন থেকে শুরু করে এখন তাঁদের অবস্থা কী, সরকারি আইনের কোন ফল ফলছে তাঁদের জীবনে সেটাও খুঁটিয়ে দেখেছেন ওঁরা।
|
অপরাজিতা |
খবরের কাগজের পাতা খুললেই নারী নির্যাতনের সংবাদ। প্রতিবাদ, ধিক্কার পেরিয়েও চলতে থাকে নারীদের উপর অত্যাচার। কিন্তু মেয়েরা অবলা নয়, তারাও পারে। মেয়েদের কথা বলতেই তাদেরই উৎসর্গ করা বিভিন্ন কবির কবিতা নিয়ে সংকলন ‘অপরাজিতা’ তৈরি করেছেন বৃষ্টি। ১২ জুলাই রবীন্দ্রসদনে সন্ধে সাড়ে ছ’টায় এই অনুষ্ঠানে বৃষ্টি ছাড়া থাকবেন দেবাশিস চক্রবর্তী, সঙ্গে আবৃত্তির ব্যান্ড মহুল। প্রতিশ্রুতি ও ওরিয়ন এন্টারটেনমেন্ট-এর উদ্যোগে।
|
পাতাবাহার |
মহারাজ বিক্রমাদিত্য ইন্দ্রের কাছে বর চেয়েছিলেন যেন তাঁর বেতাল-বৃত্তান্ত সংসারে প্রসিদ্ধ হয়। ইন্দ্র বলেছিলেন ‘মহারাজ, যাবৎ চন্দ্র, সূর্য, পৃথিবী ও আকাশমণ্ডল বিদ্যমান থাকিবে, তাবৎকাল পর্যন্ত তোমার এই বৃত্তান্ত ধরাতলে প্রসিদ্ধ থাকিবে।’ —বিদ্যাসাগরের প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ বেতাল পঞ্চবিংশতি-র উপসংহারে আছে এ সব। অর্ণব নাগের আলোচনা-সহ এটি পুনর্মুদ্রণ করেছে পাতাবাহার পত্রিকা (সম্পা: প্রবীর সেন), ত্রৈমাসিকের প্রথম সংখ্যাটি ইন্দ্রনাথ মজুমদারের স্মৃতিতে নিবেদিত। ১০ জুলাই সন্ধ্যা ৬টায় রামদুলাল সরকার-এর ঠাকুরবাড়িতে (৬৭ই বিডন স্ট্রিট) এটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন অলোক রায়।
|
চার-মূর্তি |
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
কুমোরটুলির শিল্পী সুনীল পাল (৭১) ছেলে মন্টিকে সঙ্গে নিয়ে তৈরি করলেন চার ব্যক্তিত্বের মূর্তি। দুই শিল্পীর এই সৃজনে সময় লেগেছে প্রায় তিন মাস। বিধায়ক পরেশ পালের উদ্যোগে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, মহাত্মা গাঁধী এবং খান আবদুল গফ্ফর খানের আট ফুট লম্বা ফাইবারের মূর্তিগুলি সম্প্রতি বসানো হল নারকেলডাঙা সেতুর উপর। পথচলতি মানুষ এর আগে একই শিল্পীর তৈরি মূর্তি দেখেছেন বেলেঘাটা সেতুর উপর। উদ্যোগী ছিলেন একই বিধায়ক।
|
শুরুর কথা |
এই শহর জানে তাঁর প্রথম সব কিছু। কুমোরটুলির অলিগলি থেকে কফিহাউসের আড্ডা সবই বড় ‘মিস’ করেন দেবযানী মিত্র। কর্মসূত্রে বহু দিন সিঙ্গাপুরে। ঘরের বাইরে বাংলা শুনতে না-পাওয়ার বেদনাটা আজও অনুভব করেন। আর তাই একটি সংস্থা তৈরি করেছেন দেবযানী, জোয়ী প্রাইভেট লিমিটেড। সিঙ্গাপুরের বাঙালিদের মধ্যে বঙ্গসংস্কৃতির টাটকা বাতাস বইয়ে দিতে চান তিনি। সে উদ্দেশ্যে সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের এসপ্লানেড বে থিয়েটারে আয়োজন করেছিলেন ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়ের কবিতা আবৃত্তির অনুষ্ঠান। দেবযানী নিজেও কবিতা লেখেন। তাঁর ফেলে আসা দিনগুলোর কথা, কবিতা। তেমনই পনেরোটি কবিতার আবৃত্তি রেকর্ড করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘অনন্যা: দ্য জার্নি বিগিনস...’ (আশা অডিয়ো) নামে অ্যালবামটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ ১২ জুলাই অক্সফোর্ড বুকস্টোরে, থাকবেন সৌমিত্র, ব্রততীও। প্রথম কবিতাটি অবশ্য পড়েছেন কবি নিজেই, কবিতার নাম? ‘কলকাতা’।
|
মামাবাবু |
মিথ সরিয়ে অ্যান্টনি কবিয়ালকে এ বার মঞ্চে নামাচ্ছেন ‘মামাবাবু’। ‘মামাবাবু’ মানে সৌমিত্র মিত্র, তাঁর নতুন নাটক ‘অ্যান্টনি-সৌদামিনী’তে তিনি অভিনয় করছেন মামাবাবু চরিত্রে। যে মামাবাবু গল্প বলেন, অ্যান্টনি আর সৌদামিনীর গল্প, ভোলা ময়রার গল্প এবং সেই সূত্রে সেই কবিয়ালের কলকাতার গল্প। কিন্তু মামাবাবু কি ঐতিহাসিক চরিত্র? “মামাবাবু আসলে পূর্ণচন্দ্র দে উদ্ভটসাগরের আদলে তৈরি একটা কাল্পনিক চরিত্র। পূর্ণচন্দ্র (১৮৫৭-১৯৪৬) ভোলা ময়রার জীবনী লিখেছিলেন, অ্যান্টনি ফিরিঙ্গিরও জীবনী লিখেছিলেন। সে দুটি জীবনী পড়লে অনেক মিথের আড়াল সরে যায়। যেমন, ফিরিঙ্গি কালীবাড়ির সঙ্গে যে কবিয়াল অ্যান্টনির কোনও সম্পর্ক নেই সেটা জীবনী আর সেই সময়ের কলকাতার ইতিহাস পড়লেই বোঝা যায়,” বলছেন সৌমিত্র। কথা হচ্ছিল মিনার্ভা থিয়েটারে ‘অ্যান্টনি-সৌদামিনী’র মহড়ার ফাঁকে। ৮ অগস্ট উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের লেখা নাটকটির প্রথম অভিনয় মধুসূদন মঞ্চে। অ্যান্টনির ভূমিকায় অভিনয় করছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, গার্গী রায়চৌধুরী সৌদামিনী, ভোলা ময়রা-র ভূমিকায় রজত গঙ্গোপাধ্যায়। অ্যান্টনি কবিয়াল-ভোলা ময়রার গল্প নিয়ে এর আগে সিনেমা হয়েছে বেশ কয়েকটি, নাটকও লিখেছেন বিধায়ক ভট্টাচার্যের মতো নাট্যকার। ইতিহাসের তথ্যের উপর নির্ভর করে নতুন করে আবার অ্যান্টনির গানে-গল্পে মেতে উঠবে এ শহর, আশা নির্দেশক সৌমিত্র মিত্রের। |
|
|
|
|
নাট্যকার |
সেটা ছিল ১৮৯৭-এর ২০ নভেম্বর। ক্লাসিক থিয়েটারে অভিনীত হল প্রায় নতুন এক নাট্যকারের লেখা ‘আলিবাবা’। হাস্যতরল ঘটনাবহুল নাটকটিতে শোনা গেল গ্রাম্য চলিত ও শহুরে ভাষার সঙ্গে উর্দু হিন্দি-র বিচিত্র মিশ্রণ। গানেও মজাদার হিল্লোল। আরব্য রজনীর কাল্পনিক জগতে মধ্যবিত্ত জীবনের ছোঁয়া। অসম্ভব জনপ্রিয় হল নাটক, প্রতিষ্ঠা পেল ক্লাসিক থিয়েটার এবং বিখ্যাত হলেন ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদ।
ক্ষীরোদপ্রসাদের জন্ম খড়দহে, ১৮৬৩-এর ১২ এপ্রিল। ১৮৮১-তে এন্ট্রান্স, ১৮৮৯-এ রসায়নে এম এ। স্কটিশ চার্চ কলেজে রসায়নের অধ্যাপক হিসেবে কর্মজীবন শুরু। ১৮৯৫-এ তাঁর প্রথম নাটক ‘ফুলশয্যা’ অভিনীত হয় এমারেল্ড থিয়েটারে। একেবারেই অসফল। দ্বিতীয় নাটক ‘প্রেমাঞ্জলি’ মঞ্চস্থই হয়নি। তৃতীয় নাটক ‘আলিবাবা’ খ্যাতি নিয়ে এল। স্কটিশের অধ্যক্ষ রেভারেন্ড জন মরিসন রঙ্গালয়ের সংস্রব ছাড়তে বলায় নাকি অধ্যাপনা ছেড়ে স্টার থিয়েটারে বেতনভোগী নাট্যকার হন তিনি। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এক বার তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, নিশ্চিন্ত মাইনের চাকরি ছেড়ে তিনি অনিশ্চিতকে বাছলেন কেন? উত্তরে তিনি বলেন ‘ওহে ছোকরা একটু বড় হও, তারপর বুঝবে এই নেশা যাকে পেয়ে বসেছে সে চাকরি কেন, ঘরবাড়ি, আত্মীয়স্বজন সব কি করে ছাড়তে পারে কিন্তু এই নেশাটুকু কেন ছাড়তে পারে না।’ ১৯০৩-এ ‘বঙ্গের প্রতাপাদিত্য’ নাটকটি তাঁকে প্রভূত খ্যাতি দেয়। উল্লেখযোগ্য অন্য নাটক ‘রঘুবীর’, ‘বভ্রুবাহন’, ‘আলমগীর’, ‘নরনারায়ণ’। ১৯২৭-এর ৪ জুলাই তিনি প্রয়াত হন। স্মরণ সংখ্যায় ‘নাচঘর’ লেখে, ‘ক্ষীরোদপ্রসাদের নাটক অভিনয় করে যথেষ্ট অর্থ উপার্জন করে নাই এরূপ নাট্যশালা কলকাতায় নাই।’ এ বছর তাঁর জন্মের সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে সুতানুটি বইমেলা কমিটি তাদের বার্ষিক স্মারক সংকলন ‘ভাষভূমি’ (সম্পা: বাসবী রায়) প্রকাশ করেছে তাঁকে নিয়েই। আছে তাঁর অগ্রন্থিত রচনা, তাঁকে নিয়ে নানা দুর্লভ লেখা, নাট্যসারণি। |
|
|
|
|
|
|