কার্ডিওলজি বিভাগে শয্যা ২২০টি। আউটডোরে দৈনিক দেখাতে আসা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০০। কিন্তু, ইকোকার্ডিওগ্রাফির (ইকো) যন্ত্র মাত্র একটি। তাই সেই পরীক্ষা করানোর জন্য সময় পেতেই ঘুরে যাচ্ছে বছর। যার জেরে ভুগতে হচ্ছে অসংখ্য রোগীকে। এমনই হাল রাজ্যের একমাত্র সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ‘শেঠ সুখলাল কারনানি মেমোরিয়াল’ (এসএসকেএম)-এ।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, টেন্ডারের জটিলতায় মেটানো যাচ্ছে না এই সমস্যা। অথচ, এই হাসপাতালের পরিষেবার উপরে বিশেষ নজর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি নিজেও পরিদর্শনে গিয়েছেন সেখানে। এ দিকে, এমন একটি সমস্যা সম্পর্কে কোনও খবরই ছিল না রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কাছে।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, মাস ছয়েক আগেও দোতলা ও তিনতলায় দু’টি ইকো মেশিন কাজ করত। তিনতলার মেশিনটিও এখন খারাপ হয়ে পড়ে আছে। যদিও রোগীর যা চাপ, সেই অনুযায়ী ওই হাসপাতালে কমপক্ষে পাঁচটি মেশিন জরুরি বলে মনে করেন কর্তৃপক্ষ। |
হার্টের অসুখের চিকিৎসা করাতে সিউড়ি থেকে এসএসকেএমে এসেছিলেন রতন দাস। দিন পাঁচেক আগে। আউটডোরে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানোর পরে ডাক্তারের কাছে পৌঁছন। এক বার দেখেই ডাক্তারবাবু তাঁকে ইকোকার্ডিওগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেন। হাসপাতালেই তা করা হয় জানতে পেরে ছেলেকে নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরেও যান তিনি। কিন্তু ইকোর তারিখ নিতে গিয়ে চোখ কপালে ওঠে রতনবাবুর। বললেন, “নাম লেখাতে গিয়ে জানলাম, ২০১৪ সালের মে মাসের আগে কোনও ডেট নেই।”
ডাক্তারের কথা অনুযায়ী যে পরীক্ষা দ্রুত করা প্রয়োজন, কম খরচে হাসপাতালে তা করাতে হলে অন্তত ১০ মাস অপেক্ষা করতে হবে রোগীকে। বাবার শরীরের কথা ভেবে সেই ঝুঁকি নিতে চাননি ছেলে অমল দাস। বললেন, ‘‘হাসপাতলের বাইরে ১২০০ টাকা খরচ করে ওই পরীক্ষা করাতে হল।” এসএসকেএমের কার্ডিওলজি বিভাগ সূত্রের খবর, হাসপাতালে ওই পরীক্ষা করাতে মাত্র ৩৫০ টাকা লাগে।
শুধু অমলবাবুরা নন, মুর্শিদাবাদের বেলডাঙার সখিনা বিবি, কৃষ্ণনগরের গৌতম বিশ্বাস বা শিলিগুড়ির দীপক প্রধানেরাও তাঁদের আত্মীয়দের নিয়ে একই সমস্যায় ভুগছেন। কত দিন চলবে এই অব্যবস্থা রোগীদের ওই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি বিভাগের কোনও চিকিৎসকই।
শহরের এক হৃদ্রোগ-বিশেষজ্ঞের কথায়, কোনও ব্যক্তির হৃদ্রোগ হয়েছে কি না, প্রাথমিক ভাবে তা জানা সম্ভব হয় ইকো পরীক্ষা করেই। হাসপাতালের প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, হৃদরোগ বিভাগে ১৯০টি সাধারণ শয্যার পাশাপাশি আইসিসিইউ ওয়ার্ডে ৩০ জন রোগী রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। একটি মাত্র ইকো মেশিনে ইন্ডোরে ভর্তি থাকা রোগীদেরই সামলানো যায় না। এর উপরে প্রতিদিন আউটডোরে শ’চারেক রোগীর ভার সামলানো অসম্ভব। স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, ওই হাসপাতালে রোগীর যা চাপ, তাতে সাতটি ইকো মেশিন থাকা জরুরি।
তবে কেন এই হাল?
এসএসকেএমের সুপার তমালকান্তি ঘোষ বলেন, “এই হাল আজ থেকে নয়। অনেক দিন আগে থেকেই এ ভাবে চলছে। স্বাস্থ্যভবনও বিষয়টি সম্পর্কে অবগত।”
তা হলে কাজ হচ্ছে না কেন?
তমালবাবুর কথায়, “এক বার টেন্ডার ডাকা হয়েছিল একটি মেশিনের জন্য। কমপক্ষে তিনটি সংস্থাকে টেন্ডারে অংশ নিতে হয়। তিন জন দরপত্র না দেওয়ায় পুরো প্রক্রিয়াটি আটকে গিয়েছে।” তা হলে করণীয় কী? সুপারের কথায়, “এটি সরকারি ব্যাপার। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ইচ্ছে থাকলেও কিছু করার নেই।” অর্থাৎ, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হলে সরকারকেই তার জন্য জরুরি পদক্ষেপ করতে হবে বলে জানান তিনি।
নাম লিখিয়ে পরীক্ষা করাতে ১০ মাস সময় লাগার কথা শুনেও এতটুকু বিচলিত নন সুপার তমালবাবু। তিনি বলেন, “ইকো পরীক্ষা করানোর জন্য প্রতিদিন ৪০-৫০ জন রোগী নাম লেখালে দেরি তো হবেই।”
সমস্যার কথা শুনে স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “বিষয়টি অবশ্যই দেখব। সমস্যা দূর করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।” |