হাওড়া স্টেশন
অস্বাস্থ্য-চত্বর
সার দিয়ে খাবারের দোকান। অধিকাংশ দোকানেরই ছাউনি নেই। ভাত, মাছ, মাংস থেকে চাউমিন, রোল, প্যাটি এ সব দোকানে মেলে সবই। অভিযোগ উঠেছে, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করেই এই সমস্ত দোকান চলছে। এ সব দোকানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্না হয় না। দোকানের বর্জ্য গঙ্গায় ফেলা হয়। সেই জলই আবার পানীয় জল হিসাবে ব্যবহার করেন দোকানদারেরা। এই ছবি হাওড়া স্টেশন চত্বরের।
রেল সূত্রের খবর, হাওড়া স্টেশন দিয়ে প্রতি দিন প্রায় ১০ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। পুরনো কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে রাস্তার উল্টো দিকেই রয়েছে বহু খাবারের দোকান। হাওড়া বাসস্ট্যান্ডের কাছেও রয়েছে বেশ কিছু খাবারের দোকান। এগুলি সম্পর্কেই অভিযোগ উঠেছে।
২০০৯-এ কলকাতা হাইকোর্টের গ্রিন বেঞ্চ এক রায়ে বলে, হাওড়া স্টেশন চত্বরে গঙ্গার পাড়ে কোনও ভাবেই খাবারের দোকান করা যাবে না। বাইরে থেকে খাবার করে এনে এই চত্বরে বিক্রির জন্য আদালতে আবেদন করেছিলেন দোকানদারেরা। সে আবেদনও নাকচ হয়ে যায়। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের অভিযোগ, “আদালতের নির্দেশ অমান্য করে গোটা ফুটপাথ জুড়ে হোটেল ও খাবারের দোকান চলছে। দোকানের বর্জ্য গঙ্গায় ফেলা হচ্ছে। খাবারও স্বাস্থ্যকর নয়।”
এই খাবার থেকে কী ভাবে ক্ষতি হতে পারে?
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফুড টেকনোলজি’র বিভাগীয় প্রধান উৎপল রায়চৌধুরী জানান, গাড়ির ধোঁয়ার কার্বনকণা মূলত তেলে ভাজা খাবারের উপরে জমে। বাতাসে ভাসমান কয়েক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া এই কার্বনের উপরে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। এর থেকে নানা সংক্রমণ ছড়ায়। তা ছাড়া খোলা সরবতে ইকোলাই ব্যাক্টেরিয়া সংক্রমণ ঘটায়। খোলা পড়ে থাকা মিষ্টিতে ব্যাসিলাস গোত্রীয় জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে।
হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক দেবাশিস রায় বলেন, “রাস্তার ধারের খাবার থেকে আমাশয়, ডায়ারিয়া, আলসার ও রক্তবমি হওয়ার আশঙ্কা থাকে।” প্রশ্ন উঠেছে ক্রেতাদের সচেতনতা নিয়েও। এক যাত্রীর কথায়: “স্টেশনের ভিতরের দোকানের চেয়ে অনেক কম দামে বাইরে খাবার পাওয়া যায়। তাই খাই।”
পুরসভার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি কেন?
হাওড়ার মেয়র মমতা জয়সোয়াল বলেন, “পুরসভার স্বাস্থ্য অফিসারের নেতৃত্বে দল গঠন করে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু সম্প্রতি রাজ্য সরকার নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়েছে, এই কাজের দায়িত্ব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের। তাই আমাদের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।”
হাওড়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কথায়: “জেলায় এক জন ‘ফুড সেফটি অফিসার’ রয়েছেন। তাঁর উপরেই খাবারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানোর দায়িত্ব। তার পরে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” নমুনা কি নিয়মিত সংগ্রহ করা হয়? দেবাশিসবাবু জানান, নিয়মিত না হলেও মাঝেমধ্যে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
নিয়মিত কেন নমুনা সংগ্রহ করা হয় না সে প্রশ্নের জবাবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, “মাত্র এক জন ফুডসেফটি অফিসার দিয়ে এত কাজ করানো যায় না।” রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “সবে আমরা এই দায়িত্ব পেয়েছি। হাওড়ায় এ ধরনের পরিকাঠামো নেই। এক জন ফুড সেফটি অফিসার দিয়েই আপাতত কাজ চলছে। আশা করছি দ্রুত পরিকাঠামো উন্নত করা যাবে। তখন এই সমস্যার সমাধান হবে।” পাশাপাশি, হাওড়ার পুলিশ কমিশনার অজেয় রানাডে বলেন, “আদালতের রায়ের ব্যাপারে খোঁজ নেব। নির্দেশ থাকলে অবশ্যই ব্যবস্থা করব।”

ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

যাত্রী পরিষেবার উন্নতি
যাত্রী পরিষেবার উন্নতি করতে এ বার ট্রেনের কামরা ও প্যান্ট্রিকারের আধুনিকীকরণ করছে দক্ষিণ-পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষ। এই কামরা ও প্যান্ট্রিকারগুলি কেমন হবে তার তিনটি মডেল কামরা সম্প্রতি হাওড়ার সাঁতরাগাছি স্টেশনে প্রদর্শন করা হয়। এ ব্যাপারে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার ও পি চৌবে ও মুখ্য জনসংযোগ অফিসার সৌমিত্র মজুমদার এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, তিনটি মডেল কামরার মধ্যে একটি প্যান্ট্রিকার, একটি লোকাল ট্রেনের কামরা এবং একটি সাধারণ দ্বিতীয় শ্রেণির কামরা। প্যান্ট্রিকারকে স্বাস্থ্যকর ও উন্নত মানের করার জন্য ওই কামরাটিতে ২২ শতাংশ রান্নার জায়গা বাড়ানো হয়েছে। তা ছাড়া ১০০ শতাংশ নিরাপত্তার জন্য গ্যাসের পরিবর্তে হিটার ব্যবহার করা হচ্ছে। প্যান্ট্রিকারগুলি উন্নত মানের করা ছাড়াও লোকাল ট্রেনের কামরায় যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য স্টিলের হ্যান্ডেল, পলি কার্বনেট দেওয়া বসার জায়গা এবং মালপত্র রাখার আলাদা ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবকটি কামরায় ব্যবহার করা হয়েছে স্টেনলেস স্টিল। উন্নত করা হয়েছে শৌচাগার। ধাপে ধাপে সবক’টি ট্রেনের প্যান্ট্রিকার ও যাত্রীকামরার এই ভাবে আধুনিকীকরণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

তথ্য: দেবাশিস দাশ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.