বিদ্যুতের খুঁটি, ট্রান্সফর্মার এসেছিল তিন বছর আগে। শুধু বিদ্যুতের সংযোগটাই দেওয়া বাকি ছিল। ভোট দেবেন না বলে বাসিন্দারা জানাতেই, কাজ হয়ে গেল। ভোটের মুখেই দেওয়া হল বিদ্যুতের সংযোগ। আলো জ্বলল হুড়া ব্লকের খৈরি গ্রামের কামারপাড়া টোলায়। কিন্তু দিন ক’কয়েক পরেই ট্রান্সফর্মার বিকল হওয়ায় ফের অন্ধকারে টোলা। তবে তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, ভোটটা তাঁরা দেবেন।
খৈরি গ্রামের কামারপাড়া টোলায় প্রায় ৩০০ জনের বাস। আশপাশের পাড়ায়, টোলায় বিদ্যুৎ থাকলেও কামারপাড়ায় এত দিন বিদ্যুৎ ছিল না। বছর তিনেক আগে এলাকায় রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ প্রকল্পে ওই টোলা আলোকিত করার পরিকাঠামো গড়ে দেওয়া হয়। সেই কাজ করেছিল পুরুলিয়া জেলার গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ দফতর। গ্রামের কেউ কেউ বাড়িতে ওয়্যারিং-র কাজও সেরে রাখেন। অনেকে টেলিভিশন কেনেন। |
কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ শেষ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। মাঝে গিয়েছে বিধানসভা নির্বাচনও। সে বার নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দলের প্রার্থী ও কর্মীরা প্রচারে এসে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বিদ্যুতের সমস্যা মিটে যাবে। কিন্তু তার পরে গত আড়াই বছরে তা পূরণ হয়নি।
তাই এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলির উপর ক্ষোভে ফুঁসছিলেন বাসিন্দারা। ঠিক করেছিলেন এ বার বিদ্যুৎ না এলে তাঁরা বুথ মুখো হবেন না। টোলার দেওয়ালে দেওয়ালে তাঁরা সে কথা লিখেও দেন। টোলার বাসিন্দা রীনা লোহার, নারায়ণ কর্মকাররা বলছেন, “অনেক দাবিদাওয়া করে বিদ্যুতের খুঁটি থেকে ট্রান্সফর্মার পাওয়া গিয়েছিল। অনেকে বাড়িতে ওয়্যারিং পর্যন্ত করে রাখেন। কিন্তু নানা জায়গায় দাবি জানিয়েও আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ পাইনি। শেষে সবাই মিলে পঞ্চায়েত ভোট বয়কট করার ডাক দিয়েছিলাম।” পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে এই টোলায় এ বার কোনও দলই ভোটের প্রচারে দেওয়াল লেখেননি। এলাকায় সিপিএমের প্রভাব থাকলেও স্থানীয় লক্ষ্মণপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। বাসিন্দারা জানান, তাঁদের মনোভাব বুঝে এ বার কোনও দল টোলায় ভোটের প্রচারেও আসেননি। ইতিমধ্যে কয়েক দিন আগে গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ দফতরের কর্মীরা এসে বিদ্যুতের সংযোগ দিয়ে যান। কামারপাড়ার ঘরে ঘরে জ্বলে ওঠে আলো। হাসি ফোটে রাগে থমথমে হয়ে যাওয়া মুখগুলোয়।
মণেশ লোহার, প্রফুল্ল লোহার বলছেন, “এত দিন বিদ্যুৎ না থাকায় কম সমস্যায় পড়তে হয়নি। ব্যাটারিতে ক’দিন টেলিভিশন চালানো যায়? লোকের বাড়িতে বা ক’দিন মোবাইল ফোন চার্জ করানো সম্ভব?” হ্যারিকেনের আলোয় বেশিক্ষণ পড়াশোনা করা যেতে পারত না বলে মনে দুঃখ ছিল নবম শ্রেণির ছাত্র লাল্টু লোহার, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র চন্দন লোহারদের। এখন তারা বলছে, “অন্য পাড়ার বন্ধুদের মতো এ বার আমরাও রাতে অনেকক্ষণ বই পড়তে পারব।”
গ্রামবাসীদের কথা শুনে স্থানীয় প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। এক আধিকারিক বলেন, “দ্রুত সমস্যা মেটানোর জন্য গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ দফতর ও বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।” পুরুলিয়া জেলা গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ প্রকল্পের সুপারিন্টেডিং ইঞ্জিনিয়ার আশিস ভট্টাচার্য বলেন, “ওই এলাকায় এক ব্যক্তির বাধায় এতদিন বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া যাচ্ছিল না। আলোচনা করে বিষয়টি নিস্পত্তি করার পরেই সংযোগ দেওয়া গিয়েছে।”
এ দিকে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়ার দু’দিন পরেই ট্রান্সফর্মার বিগড়ে গিয়েছে। বিদ্যুৎ দফতরের হুড়ার স্টেশন সুপারিন্টেডেন্ট যজ্ঞেশ্বর গঁরাই বলেন, “গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ দফতর সম্প্রতি ওই মৌজায় সংযোগ দিয়ে আমাদের হস্তান্তর করে। কিন্তু কিছু দিন পরেই ট্রান্সফর্মারটি বিকল হয়ে যায়। গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ দফতরকে আমরা জানিয়েছি।” গ্রামীণ বৈদ্যুতিকরণ দফতর অবশ্য ট্রান্সফর্মারটি মেরামতির জন্য সংশ্লিষ্ট ঠিকা সংস্থাকে জানিয়েছে। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা মণেশ লোহার, নারায়ণ কর্মকার, দুখু লোহার, মনসারাম কিস্কুরা অবশ্য জানিয়ে দিয়েছেন, ১১ জুলাই টোলার সবাই ভোটমুখো হচ্ছেন। তাঁদের কথায়, “দীর্ঘদিনের দুঋখ মিটেছে। তাই ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করব।” |