গত জুলাই মাসে বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থায় বিঘ্নের ফলে উত্তর-পূর্ব ভারত হঠাৎ যে ভাবে ডুবে গিয়েছিল অন্ধকারে, ভবিষ্যতে তেমন বিপর্যয় থেকে বাঁচতে এক যন্ত্র বানিয়েছেন আইআইটি খড়্গপুরের গবেষক সৌমেন কর। যন্ত্রটির উৎকর্ষ ও প্রয়োজনীয়তা বিচার করে সৌমেনকে বিশেষ পুরস্কার দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইইই)। আগামী মাসে আমেরিকার বস্টন-এ এক সম্মেলনে পুরস্কার নিতে যাবেন আইআইটি-র ওই গবেষক।
সৌমেনের আবিষ্কৃত যন্ত্র ‘সুপারকন্ডাকটিং ফল্ট কারেন্ট লিমিটার’। এর কাজ ব্যাখ্যা করে সৌমেন বলেন, “বজ্রপাত কিংবা বন্যার মতো আকস্মিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিদ্যুৎ পরিবহণ ব্যবস্থা প্রায়ই ভেঙে পড়ে। এতে যে শুধু ঘরে-ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়, তাই নয়, আগুন লেগে নষ্ট হয় মূল্যবান যন্ত্রপাতি। আমি যে যন্ত্র বানিয়েছি, তাতে বিপর্যয়ে পড়লেও যন্ত্রপাতির কোনও ক্ষতি হবে না।”
কেন?
নির্বিঘ্ন পরিবহণ হঠাৎ ব্যাহত হলে বিদ্যুতের অনুষঙ্গ হিসাবে হাজির প্রচণ্ড তাপ পুড়িয়ে ফেলে যন্ত্রপাতি। সৌমেনের আবিষ্কৃত যন্ত্র ওই ক্ষতি আটকাবে। এর জন্য কাজে লাগবে সুপারকন্ডাকটিভিটি বা অতি পরিবাহিতা। সাধারণ তারের মধ্যে দিয়ে প্রবাহের সময় তড়িৎ পুরোপুরি নির্বিঘ্নে ছুটতে পারে না। কিছুটা বাধা বা রোধের সম্মুখীন হয়। কিন্তু যত্ন করে বিশেষ ব্যবস্থা নিলে এমন পরিবাহী পাওয়া যায়, যার মধ্যে তড়িতের যাত্রা নির্বিঘ্ন। অর্থাৎ যার রোধ শূন্য। এমন পরিবাহীকে বলে সুপারকন্ডাকটিং বা অতি পরিবাহী। আর ব্যবস্থাটি হল অতি পরিবাহিতা।
সৌমেনের উদ্ভাবিত যন্ত্র নির্ভর করে এমন অতি পরিবাহিতার উপর। এই যন্ত্র যুক্ত থাকবে বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থার সঙ্গে। এমন ভাবে যাতে বিপর্যয় ঘটলেই সঙ্গে সঙ্গে তা হারাবে অতি পরিবাহিতা। তার মধ্যে ফিরে আসবে প্রচণ্ড রোধ। ফলে তা প্রহরী হয়ে আটকে দেবে বিদ্যুৎ। সেটা পৌছোতে পারবে না দামি দামি যন্ত্রে। এড়ানো যাবে দুর্ঘটনা। বিপর্যয় এড়িয়ে ফের চালু থাকবে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ঘটবে না রাজ্যে রাজ্যে ব্যাপক লোডশেডিং।
খড়্গপুরের পি এইচ ডি-র ছাত্র সৌমেন কাজ করছেন সুনীল ষড়ঙ্গি এবং ডি ডি রাও-এর তত্ত্বাবধানে। আইইইই-র তরফে যে পুরস্কার তিনি পাচ্ছেন তার অর্থমূল্য ৫০০০ ডলার। এর সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা। |