সামান্য ‘ছারপোকার’ কেরামতিতেই ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে গেল অন্তত ৬০ লক্ষ ফেসবুক ব্যবহারকারীর।
আজ্ঞে হ্যাঁ, ছারপোকা। তবে প্রাণহীন। আসলে, এ হল ইন্টারনেট দুনিয়ার ‘বাগ’। ভেঙে বলতে গেলে সফটওয়্যার বা হার্ডওয়্যারের কোনও ত্রুটিকেই কম্পিউটার দুনিয়ায় ‘বাগ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ফেসবুকের ক্ষেত্রে যেমন ‘অপকম্মোটি’ ঘটিয়েছে এক ধরনের সফটওয়্যার বাগ। আর তার জেরেই অযাচিত ভাবে ৬০ লক্ষ ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর এবং ই-মেল আইডি পৌঁছে গিয়েছে অন্য ব্যবহারকারীদের কারও কারও অ্যাকাউন্টে।
সূত্রের দাবি, ২০১২ সাল থেকেই এই ধরনের তথ্য ফাঁস হয়ে চলেছে। অবশেষে চলতি মাসে বাগটিকে খুঁজে বার করেন ফেসবুকের ওয়াইট হ্যাট প্রোগ্রামে কাজ করা নিরাপত্তা গবেষকরা। সন্ধান মেলার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই ত্রুটিও সারিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে মেল মারফত ওই ৬০ লক্ষ ব্যবহারকারীকে পুরো বিষয়টি জানানো হয়েছে ইতিমধ্যেই। মূলত এ কারণেই এত দিন জনসমক্ষে কিছু জানায়নি ফেসবুক। বাগের জেরে যাঁদের তথ্য ফাঁস হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেককে মেল পাঠানোর পরই শুক্রবার দুপুরে বিষয়টি সাংবাদিক সম্মেলনে স্বীকার করে নেন কর্তৃপক্ষ।
ফেসবুক ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট সেটিংয়ে মূলত তাঁদের
নিজেদের বিষয়ে দেওয়া কিছু তথ্য নথিভুক্ত করা থাকে। ডাউনলোড ইওর ইনফরমেশন(ডিওয়াইআই) নামের একটি বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে যে কোনও সময়ে সেই তথ্যের প্রতিলিপি পেতে পারেন ব্যবহারকারীরা। বাগ বা ত্রুটিটি দেখা দিয়েছিল এই ডিওয়াইআই-এ। ফলে তথ্যের প্রতিলিপি পেতে গিয়ে কোনও কোনও ব্যবহারকারী পেয়ে যাচ্ছিলেন অন্য ব্যবহারকারীর ফোন নম্বর, মেল আইডি। তবে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের দাবি, যাঁরা এই ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য পেয়েছেন, তাঁরা হয় সেই ব্যবহারকারীদের পরিচিত অর্থাৎ ‘ফ্রেন্ডলিস্টে’ রয়েছেন বা কোনও না কোনও ভাবে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। ফলে এই ধরনের ত্রুটি থেকে কোনও বড়সড় ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তাঁদের আরও বক্তব্য, ফোন নম্বর বা মেল আইডি ফাঁস হলেও এই ত্রুটির জেরে জরুরি কোনও অর্থ সংক্রান্ত তথ্য ফাঁস হয়নি। ফলে সে ভাবে কোনও ক্ষতির আশঙ্কা নেই ব্যবহারকারীদের।
যদিও এই ত্রুটির জন্য আগেই ক্ষমা চেয়েছে ফেসবুক। তবে একই সঙ্গে তাঁদের দাবি, ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে কোনও অপরাধমূলক কাজ গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও অভিযোগ তাঁদের কাছে জমা পড়েনি। ফলে, আশা করা যায়, এই তথ্য ফাঁসে বিশেষ অসুবিধায় পড়তে হবে না ব্যবহারকারীদের। তবে তাতে উত্তেজনা থামছে না। কিছু দিন আগেই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি প্রোগ্রাম ‘প্রিজম’-এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের
ব্যক্তিগত তথ্যে নজরদারি চালানোর অভিযোগ ওঠে। জানা যায়, আরও কিছু সংস্থার মতো ফেসবুকও ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য গোয়েন্দা সংস্থার হাতে তুলে দিয়েছে। তার পরেই এই অভিযোগ কার্যত অস্বস্তি বাড়াল এই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের। |