কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল সাত বছর আগে। অবশেষে, এ বার বর্ষায় নানা এলাকা যাতে আর জলমগ্ন না হয় তার জন্য ‘গড়’-এর ধারে শহরের মূল নিকাশি নালা সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছে চন্দননগর পুরসভা। ইতিমধ্যেই চন্দননগর স্টেশনের কাছে পুরশ্রী এলাকায় সেই কাজ শুরু হয়েছে। ক্রমশ শহরের উত্তর এবং দক্ষিণ দিক মিলিয়ে পুরো নিকাশি নালাটিই সংস্কার করা হবে বলে জানিয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
এক সময়ের ফরাসি উপনিবেশ গঙ্গাপাড়ের চন্দননগর। উন্নত নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং সীমানা চিহ্নিতকরণের জন্য ফরাসি আমলে শহরের এক দিক ঘিরে একটি বড় ও গভীর নালা তৈরি করা হয়েছিল বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের হরিদ্রাডাঙা থেকে ২২ নম্বর ওয়ার্ডের দিনেমারডাঙা পর্যন্ত এই নালার বিস্তার প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। শহরের বিভিন্ন ছোট নালার যোগ রয়েছে গড়ের ধারের নালার সঙ্গে। দিনেমারডাঙায় ওই বড় নালার সংযোগ ঘটেছে গঙ্গার সঙ্গে। |
চলছে সংস্কারের কাজ। তাপস ঘোষের তোলা ছবি। |
কিন্তু সময়মতো নালাটি সংস্কার না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই তা বেহাল হয়ে পড়েছে। দ্রুত জল বেরিয়ে যেতে না পারায় প্রতি বছর বর্ষায় বাগবাজার, লক্ষীগঞ্জ বাজার, স্টেশন রোড, রথের সড়ক, মহাডাঙা কলোনি, পুরশ্রী প্রভৃতি এলাকা জলমগ্ন হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা নিকাশি নালাটি সংস্কারের দাবি জানাচ্ছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভার কাছে বহুবার দরবার করেও কোনও লাভ হয়নি। কিন্তু এ বার বর্ষায় আগে পুরসভা ওই নালা সংস্কারের কাজে হাত লাগানোয় অনেকেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের ‘জওহরলাল নেহরু ন্যাশানাল আরবান রিনিউয়াল মিশন’ (জেএনএনইউআরএম) প্রকল্পের আওতায় ২০০৭ সালে ওই নালা সংস্কারের খসড়া প্রকল্প তৈরি হয়েছিল। তা চূড়ান্ত হওয়ার পরে নালাটি সংস্কার এবং নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজার জন্য ৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। পুরো নালাটিরই দু’পাড় কংক্রিটে বাঁধানো হবে। তা গভীরও করা হবে।
কিন্তু সেই কাজ শুরু হতে এত দেরি কেন?
২০০৭ সালে পুরসভায় ক্ষমতায় ছিল বামেরা। পুরসভার বর্তমান বিরোধী দলনেতা সিপিএমের গোপাল দাস বলেন, “আমাদের আমলে নালা সংস্কারের কাজ একেবারেই হয়নি, এটা ঠিক নয়। পাঁচ নম্বর বরো এলাকায় কাজ হয়েছিল। অন্য এলাকায় জমি নিয়ে সমস্যার কারণে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। তার কয়েক বছরের মধ্যেই পুরবোর্ড পাল্টে যায়।”
২০১০ সালের পুরভোটে বামেদের হারিয়ে পুরবোর্ডের ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। বর্তমান পুরপ্রধান রাম চক্রবর্তীর দাবি, “পুর্বতন বাম পুরবোর্ড নিকাশি ব্যবস্থার কাজ কিছুই করতে পারেনি। সেই কারণে নালাটি বেহাল হয়ে পড়েছিল।” তিনি বলেন, “আমরা ক্ষমতায় আসার পরেই নিকাশি নালা সংস্কার প্রকল্পটিতে জোর দিই। নালাটি সংস্কার হলে নিকাশি সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে।” |