শুক্রবার ৭০ লক্ষ।
শনিবার ৫৬ লক্ষ।
রবিবার ৭৩ লক্ষ।
প্রথম তিন দিনেই বক্স অফিস থেকে প্রায় দু’কোটি টাকার আয়। দেবের নতুন ছবি ‘খোকা ৪২০’ টালিগঞ্জের স্টুডিও পাড়াকে আবার সেই পুরনো প্রশ্নটার মুখে দাঁড় করিয়ে দিল।
শহর না গ্রামগঞ্জ ও শহরতলি?
‘মেঘে ঢাকা তারা’ বা ‘শব্দ’র মতো শহুরে মননশীল ছবি নাকি ‘খোকা ৪২০’ বা ‘পাগলু’র মতো ‘কমার্শিয়াল এন্টারটেনার’?
“দু’ধরনের ছবিরই গুরুত্ব আছে। কিন্তু যদি ব্যবসার দিকটা দেখতে হয় তা হলে ‘খোকা ৪২০’, ‘পাগলু’, ‘চ্যালেঞ্জ’, ‘শত্রু’রা যে কোনও দিন হারিয়ে দেবে শহুরে মননশীল
ছবিকে। শুধু শহুরে ছবি দিয়ে এত টাকা কোনও দিন কামানো যাবে না, এটা আমাদের মানতেই হবে।” স্পষ্ট জানাচ্ছেন ‘খোকা ৪২০’-এর প্রযোজক অশোক ধানুকা।
‘খোকা ৪২০’ মুক্তি পেয়েছে রাজ্যের ১৯৫টি হলে। এ ছাড়াও ত্রিপুরাতে দু’টি এবং অসমের ৮টি হলে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। জামাইষষ্ঠীর উইকএন্ড যে টলিউডের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা এ বারও দেখিয়ে দিল এই ছবি। কিন্তু অশোক ধানুকার যুক্তি পুরোটা মানতে পারছেন না কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বা সৃজিত মুখোপাধ্যায়। ওঁরা দু’ধরনের ছবির মধ্যে এই জাতীয় তুলনাটাকেই গুরুত্ব দিতে চান না।
“এ তো আপেল আর কমলালেবুর মধ্যে তুলনা করার মতো!” বলছেন সৃজিত। তাঁর যুক্তি, ‘খোকা’র মতো ছবি মুক্তি পায় ১৫০-এরও বেশি হল-এ আর শহুরে ছবি দেখানো হয় ৫০টি হলে। তা হলে কালেকশন তো সেই ছবির বেশি হবেই। “আমাদের ছবিও টাকা রিকভারি করে লাভ করে। কিন্তু যেহেতু অতগুলো হলে রিলিজ করে না তাই অঙ্কটা কম থাকে।” |
সৃজিত সংখ্যার হিসেব দিচ্ছেন। আর কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন ছবির দীর্ঘমেয়াদি আয়ুর কথা।
“কিছু ছবি আপনি নিজের ডিভিডি শেল্ফে রাখতে চান, কিছু ছবি সন্ধেবেলা ঝালমুড়ির মতো খেয়ে ভুলে যেতে চান। ‘শব্দ’, ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘অটোগ্রাফ’ এগুলো বহু দিন থাকবে। এক বছর পরে ‘খোকা
৪২০’ নিয়ে কেউ আলোচনা করবে তো? কলেজ স্ট্রিট ঘুরে এলে দেখবেন রম্যরচনা বেশি বিক্রি হচ্ছে রবীন্দ্র রচনাবলির থেকে। তাতে কী এসে যায়?”
ইন্ডাস্ট্রির একটা মহল এটাও মনে করেন যে, একটা সময় ছিল যখন ‘খোকা ৪২০’, ‘আওয়ারা’র মতো ছবি ভাল চলার ফলেই প্রযোজকরা অন্য ধরনের শহুরে ছবি করার ভরসা এবং টাকা পেতেন। কিন্তু সেটা অতীত। ইদানীং টেলিভিশনের স্যাটেলাইট রাইটসের গুরুত্ব বাড়ার ফলে এখন আর ‘খোকা’দের উপর ভরসা করতে হয় না ‘মেঘে ঢাকা তারা’দের।
তবে বিশুদ্ধ ব্যবসার অঙ্কে যে গ্রামগঞ্জ-মফস্সল এখনও অনেক বেশি গুরুত্বপূণর্, তা এক বাক্যে স্বীকার করছেন সবাই। অশোক ধানুকা
সরাসরি বললেন, “ব্যবসা করতে হলে শহরতলি। খবরের কাগজে ভাল রিভিউ পেতে হলে শহুরে ছবি।” মেনে নিচ্ছেন প্রিয়া সিনেমা হলের অরিজিৎ দত্ত, যাঁর হলেই সব চেয়ে বেশি শহুরে ছবি চলে বলে ধারণা টলিউডের। সেই অরিজিৎও বলছেন, “বক্সে সাফল্য চাইলে শহরতলি ছাড়া গতি নেই। ‘খোকা ৪২০’ আবার সেটা দেখিয়ে দিল।”
ইতিহাসগত ভাবে এই বিভেদ অবশ্য চিরকালই থেকেছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে বলেই মনে করছেন ইন্ডাস্ট্রির বড় অংশ। “ইতিহাসের দিকে দেখুন। এক দিকে ‘হারানো সুর’, অন্য দিকে ‘পথের পাঁচালী’। বক্স অফিসে কোনটা বেশি চলেছিল সেটা তো সবাই জানে। কিন্তু তাতে কি ‘পথের পাঁচালী’র গুরুত্ব কিছু কমেছে!” বললেন দু’ধরনের ছবিরই প্রযোজক, ভেঙ্কটেশ ফিল্মসের শ্রীকান্ত মোহতা। অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বলিউডেও ‘ভিকি ডোনর’ বা ‘কহানি’র মতো ছবি হিট করছে। কিন্তু ‘এক থা টাইগার’ বা ‘বডিগার্ড’-এর মতো ব্যবসা তারা দিতে পারেনি। বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও তাই।
শ্রীকান্তর কথায়, ‘‘আওয়ারা’, ‘খোকা ৪২০’য়ের মতো ছবির দর্শকের সংখ্যা বেশি, তাই রেভিনিউ বেশি। কিন্তু ‘মেঘে ঢাকা তারা’, ‘শব্দ’-র ব্র্যান্ড ভ্যালু অনেক বেশি!” সেই জন্যই সম্ভবত ‘খোকা’ দিয়ে বক্স অফিস কাঁপানো দেবও কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় ‘চাঁদের পাহাড়’ করতে ছোটেন! কমলেশ্বর নিজে এই মুহূর্তে বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি। অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়েছে। সেখান থেকেই তিনি বললেন, “বাংলা ইন্ডাস্ট্রি ক্রমশ পরিণত হচ্ছে। তাই ‘খোকা ৪২০’ আর ‘মেঘে ঢাকা তারা’-র মতো ছবি পাশাপাশি থাকতে পারছে!” সব ধরনের দর্শকই এতে খুশি। সেটাই বা কম কী? |
ছবির প্রচারে সোনম কপূর। সোমবার আমদাবাদে। ছবি: এপি। |