সার্ধশতবর্ষের সূচনা ২৯ জুন
বাংলার বাঘ
লকাতায় থ্যাকার স্পিংক-এর বিখ্যাত বই-বিপণিতে দাঁড়িয়ে ১৮৭৫-এ এগারো বছরের এক বালককে রবিনসন ক্রুশো বইটি উপহার দেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। মন দিয়ে বইটি পড়তেও বলেছিলেন তাকে। সে দিনের সেই ছেলেটি উত্তরকালে বিদ্যাসাগরের মতোই বইয়ের প্রেমে মজেছিলেন। বিদ্যাসাগরের গ্রন্থসংগ্রহ পুরোপুরি বাঁচেনি, কিন্তু ‘বাংলার বাঘ’ স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের (১৮৬৪-১৯২৪) ৪৫ হাজার বইয়ের অসামান্য সংগ্রহের পুরোটাই তাঁর পরিবারের আনুকূল্যে জাতীয় গ্রন্থাগারে স্থান পেয়েছে, এবং উত্তরসূরিদের সংযোজনে আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ হাজারে! আগামী ২৯ জুন সেই মানুষটির ১৫০তম জন্মদিন।
বিখ্যাত চিকিৎসক গঙ্গাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও জগত্তারিণী দেবীর ছেলে আশুতোষের জন্ম কলকাতায়, পৈতৃক নিবাস হুগলি-র জিরাট। প্রেসিডেন্সির কৃতী ছাত্র, বি এ পরীক্ষায় তিনটি বিষয়ে প্রথম হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শীর্ষস্থান, এম এ-তেও (অঙ্ক) প্রথম শ্রেণীতে প্রথম। পরে পদার্থবিদ্যাতেও এম এ করেন, দুটি বিষয়ে এখানে তাঁর আগে কেউ এম এ করেননি। অর্জন করেন প্রেমচাঁদ-রায়চাঁদ স্কলারশিপ। পিতৃবন্ধু বিচারপতি দ্বারকানাথ মিত্রকে দেখে মনে মনে বিচারপতি হওয়ার বাসনা ছিল, পরে হাইকোর্টের বিচারপতি থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ছ’টি নতুন বিষয়ে স্নাতকোত্তর পঠনপাঠন চালু করেন। বহু বিদ্বৎসভায় তাঁর নেতৃত্ব ছিল অবিসংবাদিত। ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেসের তিনিই প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি (১৯১৪)। এ শহরে একটি কলেজ, তাঁর পৈতৃক বাসভবনের সামনের রাস্তা, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে আশুতোষ সংগ্রহশালা তাঁর স্মৃতি বহন করছে। তাঁর বাড়িতেই আছে আশুতোষ মুখার্জি মেমোরিয়াল ইনস্টিটিউট, যেখানে তাঁর ব্যবহৃত নানা জিনিস, স্বর্ণপদক ইত্যাদির সঙ্গে রয়েছে অজস্র আলোকচিত্র ও অমূল্য নথিপত্রের সংগ্রহ, প্রকাশিত হয়েছে বহু বই। ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী হল-এ ২৯ জুন সার্ধশতবর্ষের সূচনা-অনুষ্ঠানে প্রকাশিত হবে আশুতোষের ১৫টি সমাবর্তন ভাষণের সংকলনগ্রন্থ। শুরু হবে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনীও। থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আলতামাস কবির, রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণকুমার মিশ্র, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি চিত্ততোষ মুখোপাধ্যায়, উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। সঙ্গে বাঁ দিকে অতুল বসুর আঁকা প্রতিকৃতি, ডান দিকে আলোকচিত্র।

গৌরকিশোর ৯০
জীবন সম্পর্কে গৌরকিশোর ঘোষের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অত্যন্ত ইতিবাচক। তিনি বিশ্বাস করতেন স্বার্থপরতা দুর্নীতি লোভ হিংসা সত্ত্বেও সমাজ যে টিকে থাকে, তার কারণ কোনও কোনও মানুষের নিরলস প্রচেষ্টা আর আত্মোৎসর্গ। এমন কয়েক জন মানুষই তাঁর ৯০তম জন্মবার্ষিকীতে নিজেদের বিশ্বাস আর কর্মপ্রচেষ্টার কথা বলবেন ২০ জুন সন্ধ্যা ৬টায় রোটারি সদনে ‘তলিয়ে যাবার আগে’ শীর্ষক আলোচনাসভায়। যেমন কল্যাণ রুদ্র নদীকে শাসন করতে গিয়ে অবিরত পরিবেশে যে ভারসাম্যের বিপর্যয় তৈরি হয়েছে তার বিরুদ্ধ-লড়াইয়ের কথা বলবেন। বলবেন বাণী সরস্বতী পান্নালাল দাশগুপ্তের অনুগামী, বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে নদিয়ার ছোট্ট গ্রাম দত্তপুলিয়ায় সত্তর দশকে শ্রীমা মহিলা সমিতি তৈরি করে মেয়েদের স্বাধিকারের লড়াইকে আজ বৃহৎ সীমানায় পৌঁছে দিয়েছেন। আর এক বক্তা পুলিশ-প্রশাসনের বংশীধর শর্মা, তিনি বলবেন সংশোধনাগারের মানুষজনকে কী ভাবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা যায়, বা তাঁদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় মৌলিক অধিকারের দিকে। সেদিনের আলোচনাসভায় সভামুখ্য অমিয় দেব, গাইবেন শৌনক চট্টোপাধ্যায়।

পুঁটুরানি
পুঁটুরানি নামটা আজও ছলাৎ ঘা দেয় প্রবীণ বাঙালির বুকে। সত্যেন বসুর ‘বরযাত্রী’ ছবিতে পুঁটুরানির চরিত্রে যমুনা সিংহের (জ. ১৯৩৫) সেই মনমাতানো অভিনয়ের কথা ভাবলে নস্টালজিয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন তাঁরা। দেবকী বসুর ‘চিরকুমার সভা’য় তিনি উত্তমকুমারের সঙ্গে, ‘সাগরিকা’য় সুচিত্রা সেনের সমান্তরালে। সত্যজিতের ‘নায়ক’-এ উত্তম ওরফে অরিন্দমের ‘প্রচ্ছন্ন গোপিনী’। অজয় করের ‘পরিণীতা’তে সৌমিত্রর স্নেহস্নিগ্ধ বৌদি, আবার কৌতুকপ্রিয় বৌদি ‘বাক্সবদল’-এ। এ রকম আরও কত ছবিতেই তো তাঁর লাবণ্যময় উপস্থিতি! ললিত ও আভা সিংহের মেয়ে যমুনা নাচ শিখেছিলেন সাধনা বসু, কেলু নায়ারের কাছে, অভিনয়ে না চলে গেলে হয়তো নৃত্যশিল্পীই থেকে যেতেন। রঙ্গমঞ্চেও অভিনয় করেছেন জহর গঙ্গোপাধ্যায়, ছবি বিশ্বাসের সঙ্গে। জীবনের প্রথম পর্ব ভবানীপুরে, শেষ চল্লিশ বছর সাউথ-এন্ড পার্কে উত্তর প্রজন্মের সঙ্গে কাটিয়ে চলে গেলেন সদ্য।


সময়ের স্মৃতিমালা
সময় নিয়ে কারবার ছবি-করিয়েদের, তাঁরা সময়ের শরীরে স্থাপত্য রচনা করেন। সিনেমা দেখতে বসে খেয়ালই থাকে না আমাদের, সেখানে সময়ের যে-অভিজ্ঞতার ভিতর দিয়ে চলেছি, তা ইতিমধ্যেই অতীত হয়ে গিয়েছে। বর্তমানের প্রতিটি মুহূর্তই যেমন অতীত হয়ে যাচ্ছে, স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। সময়ের এই স্মৃতি কী ভাবে নানান শিল্পমাধ্যমে প্রকাশিত হয়, প্রাচীন ভারতীয় দর্শনের কালচক্রে কিংবা আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতায় নিষিক্ত হয়, তা নিয়েই বলবেন গৌতম ঘোষ: ‘সময়ের স্মৃতিমালা’। আজ সন্ধে ৬টায় নন্দনে। এটি ‘তৃতীয় বার্ষিক কল্যাণ মৈত্র স্মৃতি অভিভাষণ’, আয়োজনে সিনে অ্যাকাডেমি ও ফোরাম ফর ফিল্ম স্টাডিজ অ্যান্ড অ্যালায়েড আর্টস। বলা শেষ হলে দেখানো হবে গৌতমেরই পরিচালিত তথ্যচিত্র।

সুবর্ণজয়ন্তী
অল্প বয়সেই ভর্তি হয়েছিলেন এরোক্লাবে। প্যারাশুট নিয়ে ঝাঁপ দেন মাত্র বাইশ বছরে। মহাকাশ যাত্রার জন্য আবেদন করলে চারশো জনের মধ্য থেকে তাঁকেই বাছা হয়। তখন কাজ করতেন বস্ত্রশিল্পে। ১৯৬৩-র ১৬ জুন ভস্তক-৬’এ চড়ে মহাকাশে পাড়ি দেন সোভিয়েত রাশিয়ার ভ্যালেন্তিনা তেরেশকোভা। পৃথিবীর প্রথম মহিলা নভশ্চর। ৪৮টি কক্ষপথ ২ দিন ২২ ঘণ্টা ৪২ মিনিটে পরিক্রমা করেন। ‘অর্ডার অব লেনিন’ পুরস্কারে সম্মানিত ভ্যালেন্তিনা সোভিয়েত পার্টির গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন। সেই ঐতিহাসিক মহাকাশযাত্রার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজ কলকাতার বিড়লা শিল্প ও কারিগরি সংগ্রহালয়ে শুরু হচ্ছে বিশেষ প্রদর্শনী ‘ভ্যালেন্তিনা তেরেশকোভা’। রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন রুশ কনসাল জেনারেল ইরিনা বাসকিরোভা, প্রধান অতিথি ভাইস কনসাল জেনারেল আলেকজান্ডার মাঝিরকা। চলবে ২৮ জুন পর্যন্ত (১০-৫টা)।

নিঃসঙ্গ সম্রাট
সিনেমার মতো এ বার নাটকেরও অডিয়ো সিডি লঞ্চ! ‘আলমগীর’, ‘সীতা’, ‘চন্দ্রগুপ্ত’ কিংবা ‘চিরকুমার সভা’র মতো শিশির ভাদুড়ী নির্দেশিত নাটকের অংশ পাঠ ও গান নিয়ে একটি সিডি প্রকাশিত হবে আগামিকাল, মঙ্গলবার প্রেস ক্লাবে। উপলক্ষ সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে শিশিরকুমার ভাদুড়ীর জীবন নিয়ে দেবেশ চট্টোপাধ্যায়ের নাটক ‘নিঃসঙ্গ সম্রাট’। শিশিরকুমারের ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নাটকটি প্রযোজনা করছে ‘পাইকপাড়া ইন্দ্ররঙ্গ’। ২২ জুন স্টার থিয়েটারে প্রথম অভিনয়। কিন্তু কেন শিশিরকুমার, ১২৫ বছর বলেই? “থিয়েটারটাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল তাঁর, চেয়েছিলেন জাতীয় নাট্যশালা। সাধারণ রঙ্গালয়ের যে ধারাটা শুকিয়ে গেল তার অবিসংবাদী নায়ক ছিলেন তিনি। তাই স্বপ্ন আর ব্যর্থতাভরা তাঁর জীবনটাকে বুঝতে চেয়েছি নাটকের মধ্যে দিয়ে,” বলছেন দেবেশ চট্টোপাধ্যায়।

রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে
‘রবীন্দ্রনাথের জীবনাবসান হল ১৯৪১-এর অগস্ট মাসে। আমার তখন নিতান্ত বালিকা বয়স। মনে খুব দুঃখ পেলাম, যেন পরম আপন জন কেউ আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন।’ ঠিক আপন জন না হলেও রবীন্দ্রনাথ ছিলেন বালিকাটির খুব কাছের। রবীন্দ্রপ্রয়াণের সময় তাঁর বয়স মাত্রই দশ, কিন্তু তার আগে কিংবা পরে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেই তো বরাবর বড় হয়ে ওঠা। মা’র কাছে অক্ষর পরিচয়ের সময় সহজ পাঠ, বাবার অর্গান বাজিয়ে শেখানো গান ‘তোমারই গেহে পালিছ স্নেহে’, বড় হয়ে ওঠার বেলায় ‘বলাকা’, ‘শঙ্খ’র মরমিয়া টান, বা রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্প। ‘নিরুপমা’ বা ‘কল্যাণী’র মতো মেয়েদের জীবনকাহিনির সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করে ফেলা। রবীন্দ্রানুরাগী বাবা চারুচন্দ্র চৌধুরী অনুবাদ করছেন পূরবী কাব্যগ্রন্থ, সেই সূত্রে মেয়ের আলাপ হল ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর সঙ্গে। এ ভাবেই প্রথম শৈশব থেকে জীবনের নানা পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ছাড়েননি। শিক্ষাবিদ, সুলেখক ও রাজনীতিক কৃষ্ণা বসু তাই নিশ্চিত প্রত্যয়ে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথের কবিতা একটা বিশ্বাস, মন্ত্রোচ্চারণের মতো।’ নিজের সেই মন্ত্রকে ধরে রাখতে চাইলেন তিনি। স্বকণ্ঠে প্রিয় রবীন্দ্র-কবিতা এবং নিজের জীবনের নানা স্মৃতির বুননে তৈরি সিডি ‘রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে বড় হয়ে ওঠা’ (ভাবনা) প্রকাশিত হল।

এখনও
মৃণালদার (সেন) বাড়ি যাব কাল সন্ধেবেলায়, ওঁর কথা দিয়েই শুরু করব ছবিটা। ঘন সবুজে ঘেরা এস আর এফ টি আই-এর গেস্ট হাউসে বসে শনিবারের বাদলা বিকেলে বলছিলেন গিরিশ কাসারাভাল্লি, কলকাতায় ঘুরে গেলেন সদ্য। আদুর গোপালকৃষ্ণনকে নিয়ে ছবি করছেন গিরিশ। কেরলের অবিসংবাদী এক চলচ্চিত্রকার আর তাঁর ছবি তৈরির শৈলী বিষয় হয়ে উঠছে আর-এক বিশিষ্ট কন্নড় চলচ্চিত্রকারের ছবিতে। এমনটা এর আগে মাত্র একবারই হয়েছে, যখন সত্যজিৎকে নিয়ে ছবি করেছিলেন শ্যাম বেনেগাল। দু’টোই ফিল্মস ডিভিশনের ছবি। মৃণালবাবু ছাড়াও এ-ছবিতে আদুরকে নিয়ে বলবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়, ‘এরপর মুম্বইতে যাব একবার শ্যামের (বেনেগাল) সাক্ষাৎকার নিতে, তা ছাড়া তিরুঅনন্তপুরমে দীর্ঘ সময় কাটবে আদুরের সঙ্গে কথা বলতে’, জানালেন গিরিশ। ভারতীয় সিনেমার একশো বছরে এমন এক সুকর্মের সূচনা হল কলকাতায়। শুধু এটুকুতেই ক্ষান্ত নন গিরিশ, ‘কলকাতায় এসেছি মহাশ্বেতাদির (দেবী) সাক্ষাৎকার নিতেও’, কারণ প্রবাদপ্রতিম কন্নড় সাহিত্যিক ইউ আর অনন্তমূর্তিকে নিয়েও ছবি করছেন তিনি। ভারতীয় শিল্পী-সাহিত্যিকদের নিরিখ তৈরি করতে আজও এ শহরকে দরকার পড়ে তা হলে!

মূর্তি প্রতিষ্ঠা
১৮৮০-তে ২২ টাকা ভর্তি মূল্য দিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন নরেন্দ্রনাথ দত্ত। এই প্রাক্তনীর জন্ম-সার্ধশতবর্ষ উদ্যাপনে প্রেসিডেন্সি প্রাক্তনী সংসদের উদ্যোগে স্বামী বিবেকানন্দের মর্মর আবক্ষ মূর্তি প্রতিষ্ঠা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ভবনে, আগামী রবিবার, ২৩ জুন। মূর্তি উন্মোচন করবেন বেলুড় মঠের সহ-অধ্যক্ষ স্বামী প্রভানন্দ মহারাজ। এই উপলক্ষে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাক্তনী সংসদের যৌথ অনুষ্ঠানে মার্গসংগীত পরিবেশন করবেন অর্থনীতিবিদ ও উচ্চাঙ্গ সংগীতের শিল্পী সুগত মারজিৎ। তিনিও প্রেসিডেন্সির ছাত্র ছিলেন।

জীবন থেকে

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য
সিনেমায় মানুষটার অভিনয় প্রভাবিত করেছে নাকি আপনাকে? ওই যেমন করে উনি ঋত্বিক ঘটকের ‘মেঘে ঢাকা তারা’য় আই অ্যাকিউজ বলে ওঠেন? কমলেশ্বরের ‘মেঘে ঢাকা তারা’র প্রিমিয়ারের সন্ধেয় একটু একলা পেয়ে প্রশ্নটা করেই ফেলা গেল বিক্রম (বিজন ভট্টাচার্য) শুভাশিস মুখোপাধ্যায়কে। শুনেই তাঁর সটান উত্তর, ‘‘একেবারেই না, সেটা হলে অভিনয়টাই ডুবে যেত। কারণ ওই দৃশ্যটার শ্যুটিংয়ের অভিনয় করতে হয়েছে আমাকে এ ছবিতে, তা হলে অভিনেতাটাই বিশ্বাসযোগ্য হত, চরিত্রটা নয়।” এক সময় ম্যাক্সমুলার ভবনে ‘সংবর্ত’ নাট্যদলে জার্মান নাট্যকারদের ভূমিকায় নিয়মিত অভিনয়, জীবনীমূলক অভিনয়ে এটাই অভিজ্ঞতা। তার পরে বিস্তর পরিশ্রম করে বিজন ভট্টাচার্য মানুষটাকে বুঝতে হয়েছে। কী ভাবে? “কমলেশ্বর যখন রোলটা দিল প্রথমেই ঠিক করেছিলাম নবারুণদার কাছে যাব। আমি যে সময়ে বড় হয়েছি তখন বিজনবাবুকে দেখা বা তাঁর নাটক দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তাঁকে বুঝেছি মূলত তাঁর অভিনয় সিনেমায় দেখে। এ ব্যাপারে সবচেয়ে সাহায্য করেছে মৃণাল সেনের ‘পদাতিক’। এ ছাড়াও লেখা পড়েছি বহু। বুঝেছি, ঋত্বিককে কী অসম্ভব ভালবাসতেন উনি।” এই সময়ে দুই নাট্যব্যক্তিত্ব ফের জীবন্ত হলেন মঞ্চে-পর্দায় শম্ভু মিত্র আর বিজন ভট্টাচার্য। সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় শম্ভু মিত্র আর আপনি বিজন, কোনও তুলনা? “একেবারেই না, ও ভাবে আমি ভাবিইনি,” হাসলেন শুভাশিস।

সাহিত্যরসিক
সাহিত্য যে জীবনের এক স্পন্দন, সে যে আদতে কান্না-ঘাম-রক্ত-সন্দেহের বহুবর্ণ পটচিত্র বাংলা সমালোচনা সাহিত্যে এ বোধটি তিনি প্রোথিত করে দিয়েছিলেন অন্তত পাঁচ দশক আগে। নিজে কৃতী অধ্যাপক হলেও বাংলার নিগড়বাঁধা টিপিক্যাল অধ্যাপকোচিত আলোচনার বৃত্ত থেকে সবলে মুক্ত করেছিলেন বাংলা সমালোচনা সাহিত্যের ধারাকে। তিনি সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়। চিত্রকল্প-নির্ভর সমালোচনা সাহিত্য যাঁর স্বক্ষেত্র। বাংলা উপন্যাসের কালান্তর, বাংলা কবিতার কালান্তর, আলো-আঁধারের সেতু: রবীন্দ্রচিত্রকল্প, প্রিয় প্রসঙ্গ, যে ধ্রুবপদ দিয়েছ বাঁধি সহ বিভিন্ন গ্রন্থে ধরা আছে তাঁর অভিনব দর্শন। ‘অরণি’, ‘অগ্রণী’, ‘নতুন সাহিত্য’, ‘সাহিত্যপত্র’, ‘পরিচয়’, ‘চতুরঙ্গ’, ‘দেশ’ প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন রচনায় তাঁর নিবিড় পাঠ ও মরমি লেখনীর পরিচয় মিলবে। কবিতা দিয়ে সাহিত্যজীবনের সূচনা হলেও পরবর্তী কালে লিখেছেন তিন তাসের খেলা, বিকিকিনির হাট, গোলাপ হয়ে উঠবে-র মতো উপন্যাস। কিন্তু উত্তরপর্বে অধ্যাপনা ও সাহিত্য-সমালোচনাতেই পুরো মনপ্রাণ ঢেলে দেন তিনি। নৈহাটিতে গঙ্গার ধারে তাঁর বইঠাসা দোতলার ঘরে এক সময় পাতা থাকত ফরাশ। ঘরে আর কোনও আসবাব ছিল না। সেই মেঝেতে বসেই কখনও সমরেশ বসু, কখনও রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত, কখনও সন্জীদা খাতুনের সঙ্গে তাঁকে ব্যস্ত দেখা যেত রসালোচনায় কি বিতর্কে। ছাত্রদরদি, আদ্যন্ত নিরভিমান মানুষটি বিদায় নিলেন গত ৭ জুন স্বল্প রোগ ভোগের পর। বয়স হয়েছিল সাতাশি।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.