স্বামীর স্মৃতি বলতে ওইটুকুই সম্বল ছিল। সাহসিকতার জন্য ব্রিটিশ সরকারের দেওয়া মেডেল। ৫০ বছর ধরে সযত্নে নিজের কাছে রেখেছিলেন। কিন্তু সেটা চুরি হয়ে যায়। তার সাত বছর পরে লন্ডনের একটি নিলামে খোঁজ মেলে সেই মেডেলের।
সেই মেডেল ফিরিয়ে দিতে আর্জি জানিয়েছিলেন হিমাচলপ্রদেশের ৮১ বছরের বৃদ্ধা ব্রাহ্মীদেবী। কিন্তু লন্ডনের হাইকোর্ট তাঁকে জানিয়েছে ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে সেই মেডেল ফেরত নিতে হবে। যা শুনে যথেষ্ট হতাশ ব্রাহ্মীদেবী। পেনশনের সামান্য টাকায় দিন গুজরান হয়, থাকেন এক কামরার বাড়িতে। কোথা থেকে এত টাকা জোগাড় হবে, জানেন না বৃদ্ধা।
১৯৪৬ সালে ভারতের তৎকালীন ভাইসরয় লর্ড ওয়েভেল ব্রাহ্মীর স্বামী ন্যায়কৃপা রামকে সাহসিকতার জন্য ব্রিটেন সরকারের সর্বোচ্চ সম্মান জর্জ ক্রস মেডেল দিয়েছিলেন। ন্যায়কৃপা ব্রিটিশ আমলে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ছিলেন। ১৯৪৫-এ বেঙ্গালুরুতে অনুশীলনের সময় এক জনের হাত থেকে ভুলবশত গ্রেনেড ছিটকে যায়। সহকর্মীকে বাঁচাতে ন্যায়কৃপা ওই গ্রেনেড ঠেকাতে যান। সেটি ফেটে যায় তাঁর হাতেই। মারা যান কৃপারাম। পরে ব্রিটিশ সরকার সাহসিকতার জন্য মরণোত্তর পুরস্কার দেয় তাঁকে।
কিন্তু হিমাচলের বিলাসপুর জেলায় ব্রাহ্মীদেবীর বাড়ি থেকে ২০০২ সালে ওই মেডেলটি চুরি হয়ে যায়। সাত বছর পরে লন্ডনের নিলামে সেটি প্রচারের আলোয় আসে। খবর যায় ভারতীয় হাই কমিশনে। নিলাম বন্ধ করে তদন্তে ডাকা হয় স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে। তাতে জানা যায় গোটা বিষয়টি। ভারতীয় সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত এক অফিসার এবং মেডেল সংগ্রাহক অশোক নাথ নামে এক ব্যক্তি ওই মেডেলটি নিলামে তুলতে চেয়েছিলেন। তাঁর দাবি, দিল্লির একটি দোকান থেকে ৩ লক্ষ ৬১ হাজার টাকা দিয়ে মেডেলটি তিনি কিনেছিলেন। সে সবের বৈধ কাগজও তাঁর কাছে রয়েছে। তাঁর মনে হয়নি চোরা পথে মেডেলটি আনা হয়েছে।
এই সব বিতর্কের মধ্যে লন্ডনের ওই নিলাম সংস্থা আবার দাবি করে, মেডেলটি ন্যায়কৃপার স্ত্রী ২০০০ সালে নিজেই কাউকে দিয়ে দিয়েছিলেন। চুরি হয়েছে বলে ব্রাহ্মী দেবী যে দাবি করছেন, তা সত্যি নয়। ২০০৯ সালে হিমাচল পুলিশ নিলাম বন্ধ করতে সফল হয়। পরে মামলা চলে চার বছর। আগামী সপ্তাহে রায় বেরোত। তার আগেই ব্রাহ্মী দেবী তাঁর আইনজীবীর (যিনি মামলা লড়তে টাকা চাননি) কাছ থেকে জানতে পারেন, আদালতে সমঝোতা হয়েছে মেডেল পেতে গেলে এ বছরের শেষে ১০ লক্ষ টাকা দিতে হবে।
ব্রাহ্মীদেবীর কথায়, “এক হাজার টাকা, একটা কম্বল আর কিছু গরম জামা এবং ওই মেডেলটা আমার ট্রাঙ্ক থেকে চুরি যায়। পুলিশকে জানাই। স্বামীর স্মৃতি বলতে ওই মেডেলেটাই ছিল, ওটা ফেরত চাই।” মেডেলের জন্য অনেকে নানা সময় তাঁকে টাকার লোভ দেখিয়েছে। অর্থাভাব থাকলেও তিনি রাজি হননি।
তবে ব্রাহ্মীদেবীর জন্য আরও একটু উদার তাঁর আইনজীবী আয়ান মেস। যিনি বলছেন তহবিল গড়ে ওই টাকা তুলে ৮১ বছরের বৃদ্ধাকে মৃত্যুর আগে তাঁর স্বামীর স্মৃতিচিহ্ন ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। ভারতে বসে ব্রাহ্মীদেবীরও এখন সেটাই ইচ্ছে।
|