দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্র খুন হওয়ায় তেতে উঠল নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে। হল বিক্ষোভ-অবরোধ-অভিযুক্তের বাড়ি ভাঙচুর। ঘটনার কারণ নিয়ে শাসক-বিরোধী দলের চাপানউতোরও বেধেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, কৃষ্ণগঞ্জ অনিল স্মৃতি হাই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রের নাম মৃণ্ময় সিংহ (১৮)। বাড়ি নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে। খুনের অভিযোগে মৃণ্ময়েরই দুই বন্ধু এবং এলাকার এক যুবককে ধরেছে পুলিশ। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচীরমণ মিশ্র বলেন, ‘‘ঠিক কী কারণে এই ঘটনা ঘটল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
মৃণ্ময়ের পরিবার এলাকায় তৃণমূল সমর্থক বলে পরিচিত। মর্গে মৃতদেহে মালা দেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং কারিগরি শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। পার্থবাবুর অভিযোগ, “সিপিএম পঞ্চায়েত নির্বাচনের মধ্যেও অস্থিরতা ডেকে এনে ভোটকে আদালতে নিয়ে যেতে চাইছে। আর সেই কারণেই আমাদের এক ছাত্রনেতার ভাইকে খুন করা হল।’’ সিপিএমের নদিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে অবশ্য বলেন, “এই খুনের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, শুক্রবার রাতে মৃণ্ময়ের দাদা তন্ময়ের সঙ্গে বচসা বাধে পাশের গ্রাম সত্যনগরের বাসিন্দা সুখেন ভদ্র নামে এক যুবকের। সুখেনের দাদা অনুপ ভদ্র ও বৌদি দীপালি ভদ্র পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত। গণ্ডগোলের খবর পেয়ে সেখানে যায় মৃণ্ময়। পরিবারের দাবি, প্রাথমিক ভাবে গণ্ডগোল মিটে গেলেও সুখেন মৃন্ময়কে আবার ডেকে পাঠায়। মৃণ্ময় তার দুই বন্ধু সুমন্ত ঘোষ এবং অঞ্জন সরকারের সঙ্গে মোটরবাইকে চেপে সুখেনের সঙ্গে দেখা করতে যায়। অভিযোগ, রাত পৌনে ১টা নাগাদ সুখেন মৃণ্ময়কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপায়। রক্তাক্ত অবস্থায় কৃষ্ণগঞ্জ গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃন্ময়কে মৃত বলে ঘোষণা করেন। |
জানাজানি হতে রাতেই কয়েকশো গ্রামবাসী কৃষ্ণগঞ্জ বাজার এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন। শনিবার ভোরে ক্ষিপ্ত জনতা অভিযুক্ত সুখেনের বাড়িতে ভাঙচুর করে। আগুন লাগানো হয় উঠোনে রাখা গাড়িতে ও ঘরের ভিতরে। খবর পেয়ে পুলিশ ভদ্র পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে। কৃষ্ণগঞ্জ থানাতেই কাজ করেন দীপালিদেবী। তাঁর দাবি, “সুখেনের সঙ্গে আমাদের তেমন যোগাযোগ নেই। ও শ্বশুরবাড়িতে থাকে।”
এ দিন ভোরে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মাজদিয়া-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে জনতা। ওঠে কৃষ্ণগঞ্জ থানার ওসি গৌরীপ্রসন্ন বন্ধুকে বদলির দাবি। এলাকাবাসীর বক্তব্য, “দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় অপরাধমূলক ঘটনা ঘটছে। কিন্তু দোষীদের গ্রেফতার করতে ব্যর্থ ওসি। আমরা তাঁর শাস্তি চাই।’’ ওসি এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে চাননি। তবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ওই ওসির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠছে তা তদন্ত করে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ দিন দুপুরেই ওই থানায় এক অফিসারকে ওসি-র অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছে।’’
দুপুরের পর থেকে ঘটনায় রাজনৈতিক রং লাগতে শুরু করে। নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পন্ডা জানান, আজ, রবিবার রাজ্য জুড়ে কালো ব্যাজ পরে শান্তিপূর্ণ ভাবে ওই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ করবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এ দিন সকালে রাজনীতির প্রসঙ্গ না টানলেও বিকেলে মৃণ্ময়ের দাদা তন্ময়বাবু বলেন, ‘‘সিপিএমের লোকজন এর আগেও আমাকে আক্রমণ করেছে। ওরা আমাকেই খুন করতে চাইছিল। সামান্য ঝামেলার ছুতোয় ওরা আমার ভাইকে খুন করল।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে-র প্রতিক্রিয়া, “সুখেন ভদ্র কখনও সিপিএম করত কি না জানি না। তবে সে এখন তৃণমূলের যুক্ত বলেই জানি।” |