|
|
|
|
কর্তা-গিন্নির সংসার |
ব্যাংককে চলছে দেব-কোয়েল অভিনীত ‘রংবাজ’ ছবির শ্যুটিং। কিন্তু দুর্ধর্ষ কিছু স্টান্টের বাইরেও, স্বামী নিসপাল
সিংহ রানে-র ছবিতে এ যেন সম্পূর্ণ অন্য কোয়েল। ব্যাংককে শ্যুটিং দেখে এসে এ রকমই মনে হল ইন্দ্রনীল রায়-এর |
দুপুর ১-৩০,
লোকেশন- ব্যাংকক |
৩১ তলার ক্যাট টাওয়ার। লাঞ্চ ব্রেক।
ছবির ৫০ জনের ইউনিট, লাঞ্চ ব্রেকে থালা হাতে বিরিয়ানি, রায়তা, স্যালাড খেতে লাইন দিয়েছে। ছোট ঘরের এক কোণে, বিরিয়ানির ডেকচির পিছনে তখন দেখা যাচ্ছে তাঁকে। তার ঠিক দশ মিনিট আগে দেবের সঙ্গে শট দিয়েছেন। এ বার তিনি বিরিয়ানি পরিবেশকের ভূমিকায়।
কোয়েল মল্লিক। নাকি মিসেস নিসপাল সিংহ রানে?
ধীরে ধীরে সবাইকে খাবার পরিবেশন করলেন। “এই আপনারা তো স্যালাড নিচ্ছেন না। প্লিজ, স্যালাড নিন। আচ্ছা কোল্ড ড্রিঙ্ক দেবেন এখানে প্লিজ,” বলে প্রোডাকশনের একজনকে আদেশ দেন তিনি। নিসপাল রানে তখন বাকিদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করছেন। ‘রংবাজ’ ছবির সেট নয় এটা, এ তো কর্তা-গিন্নির সংসার। স্বামী নিসপাল সিংহ রানের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিয়ের মাস চারেকের মধ্যেই অনায়াসে নায়িকা থেকে গৃহকর্ত্রী হয়ে উঠেছেন কোয়েল। |
|
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হেলিকপ্টার থেকে লাফানোর স্টান্ট দিচ্ছেন ‘রংবাজ’ দেব ও কোয়েল |
কোয়েল এখন প্রোডিউসার, কিছু বলা যাবে না |
তার ঠিক দশ মিনিট আগেই আট জন ফাইটারের সঙ্গে ফাইট সিক্যুয়েন্স শ্যুট করছিলেন দেব। সারা বডিতে প্যাডিং। ‘ধুম’, ‘ধুম ২’, ‘আকস্’-এর মতো ছবির ফাইট মাস্টার অ্যালেন আমিন এই প্রথম বাংলা ছবিতে কাজ করছেন।
শোনা যায় তাঁর একদিনের পারিশ্রমিক দেড় লক্ষ টাকার কাছাকাছি। তিনি তখন তাইল্যান্ডের ফাইটারদের বলছেন, সিনটা ‘রিয়ালিস্টিক’ করতে হলে দেবকে সত্যি সত্যি মারতে হবে। দেবও তাঁদের সঙ্গে সমানে লড়ছেন। শট শেষ হয়। মনিটরের কাছে ফিরে আসতে, কোয়েল হাততালি দিয়ে কনগ্র্যাচুলেট করলেন। “কোয়েলের কী আছে বলুন তো। মার খাচ্ছি আমি, আর কোয়েল হাসছে। ওকে কিছু বলা যাবেও না, এখন তো নিজেই প্রোডিউসার,” হাসতে হাসতে বলছিলেন দেব।
পুরো ইউনিট তখন দেবের কথায় হাসছে। এক কোণে দাঁড়িয়ে হাসছে কর্তা-গিন্নিও।
|
|
|
ইউনিটের সবার জন্য
বিরিয়ানি
পরিবেশন
করছেন ‘গিন্নি’ |
“এই ছবির আসল হিরো কিন্তু অ্যালেন আমিন। দিস ম্যান ইজ
আ লেজেন্ড,” বলছিলেন দেব। শট শুরু হওয়ার আগে
দেব-কোয়েলের সঙ্গে বলিউডের এক নম্বর ফাইট মাস্টার |
|
গিন্নির স্টান্ট, কর্তার আই-ফোনে |
তাঁর স্ত্রী হতে পারেন, কিন্তু তা বলে গিন্নিকে দিয়ে এমন কিছু স্টান্ট করিয়েছেন নিসপাল সিংহ রানে, যা বাংলা সিনেমায় কোনও নায়িকাই আজ অবধি করেননি।
জেট-স্কিতে বসে কাঠের পাতের উপর দিয়ে স্টান্ট হোক, কী দেড়তলা বাড়ি থেকে ঝাঁপ, কী হেলিকপ্টার থেকে লাফ কিছুই বাদ দেননি কোয়েল। নিসপাল কিন্তু সব ক’টা ভিডিয়ো নিজের আই-ফোনে রেকর্ড করে রেখেছেন। বৌকে দিয়ে বিয়ের চার মাসের মধ্যে এমন স্টান্ট করাচ্ছেন, আপনার শ্বশুর-শাশুড়ি জানেন? “আরে, কোয়েল ইজ আ প্রফেশনাল অ্যাকট্রেস। ওর কোনও অসুবিধা হবে না,” গর্বিত স্বামী উত্তর দেন। এর মধ্যে শ্যুটিং করতে করতে কোয়েলের পায়ে সাতটা স্টিচও হয়েছে। “আমি বাবা-মাকে জানাইনি, কিন্তু ওরা ঠিক খবর পেয়ে গেছিলেন। আমাকে ফোন করে কী বকুনি, ‘বড্ড পাকামো হচ্ছে না তোমাদের’ বলে কী চেঁচামেচি। গিয়ে বাকি স্টান্টগুলো দেখলে কে জানে কী হবে,” বলছিলেন কোয়েল।
তত ক্ষণে লাঞ্চ ব্রেক শেষ। নিসপাল মনিটরের সামনে বসে পড়েছেন। আর কোয়েল? তিনি তখন ব্যস্ত অভিনেতা রাহুল দেবের গ্রিলড ফিশ আনতে। সেই কর্তা-গিন্নির সংসার। |
|
মিস্টার অ্যান্ড মিসেস |
জীবনের সব চেয়ে অ্যাডভেঞ্চারাস দু’টি মাস |
সে দিন সন্ধ্যাবেলা, কলকাতা থেকে যাওয়া মিডিয়া, পরিচালক রাজা চন্দ আর দেবকে নিয়ে ডিনারে বেরিয়েছিলেন প্রযোজক দম্পতি। এর মাঝখানে দেব শোনালেন তাঁর ‘চাঁদের পাহাড়’য়ে শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা। “এক মাস আগেই ‘চাঁদের পাহাড়’য়ের অ্যাকশন, তার ঠিক পরেই এই ছবির জন্য ব্যাংককে ডেয়ার-ডেভিল এই স্টান্টগুলো। এত অ্যাডভেঞ্চারাস দু’মাস আমার জীবনে আগে আসেনি,” মোজিতো আর তাই গ্রিন চিকেন খেতে খেতে বলছিলেন দেব।
কোয়েল তখন আলোচনা করছেন পরের দিনের সিন নিয়ে পরিচালক রাজা চন্দর সঙ্গে। “রানেদা আর কোয়েলের ইনভলভ্মেন্টটা না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। এই ছবিটার আশি শতাংশ শ্যুটিং ব্যাংককে। আর আমরা যা চেয়েছি রানেদা আমাদের তাই প্রোভাইড করেছেন। কোয়েল শুধু হিরোইন না, পুরো ইউনিট ঠিক করে থাকছে কি না, কার কী দরকার, সব দিকে নজর রয়েছে ওদের দু’জনের,” বলছিলেন রাজা। |
বেটি তুম ঠিক তো হো |
পরের দিন এ ছবির সব চেয়ে ডেঞ্জারাস শ্যুট। আমারি হোটেলের হেলিপ্যাডে তখন দাঁড়িয়ে হেলিকপ্টার। এই হেলিকপ্টার থেকে ঝাঁপ দেবেন দেব আর কোয়েল।
সারাদিন নানা স্টান্টের পর শুরু হল সেই সিন। তত ক্ষণে পুরো ইউনিটকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন অ্যালেন আমিন। গোটা দশেক লোক শুধু হেলিকপ্টারের নীচে। এত হাওয়া যে কেউ দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছেন না। দাঁড়িয়ে আছেন শুধু অ্যালেন আমিন আর হেলিকপ্টারের মধ্যে দেব আর কোয়েল। হাতের ইশারায় অ্যাকশন বলতেই, হেলিকপ্টার থেকে লাফ দিলেন ওঁরা দু’জনে। পুরো ইউনিটের সবার চোখেমুখে তখন আতঙ্ক। স্টিল ফোটোগ্রাফার থেকে দেবের অ্যাসিস্ট্যান্ট উত্তম, সবাই তখন হেলিপ্যাডে শুয়ে আছেন। অত হাওয়ার মধ্যে দাঁড়ানোর প্রশ্নই ওঠে না।
শট ‘ওকে’ হল। সবাই গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন দেব আর কোয়েলকে। অ্যালেন আমিন তখন এক কোণে দাঁড়িয়ে হাসছেন। শু্যটিং দেখতে এসেছিলেন কোয়েলের শ্বশুর-শাশুড়ি। ধীরে ধীরে তাঁরা এগিয়ে এলেন কোয়েলের দিকে। “বেটি তুম ঠিক তো হো”, মাথায় হাত রেখে শাশুড়ি জিজ্ঞেস করেন পুত্রবধূকে। কোয়েল তখন তাঁদের বোঝাচ্ছেন কী অসম্ভব টেনশন হচ্ছিল তাঁর শটের সময়। দেবও বলছিলেন এ রকম শট তিনি কখনও দেননি।
এই ছোটাছুটি আর শট ভাল হওয়ার উচ্ছ্বাসের মধ্যেই এগিয়ে এলেন কোয়েল। “আপনাদের তো আজকেই যাওয়া, একটু শপিং করবেন তো?” জিজ্ঞেস করেন তিনি। তার পর স্বামীর দিকে ঘুরে বলেন, “রানে, ওঁরা একটু শপিং করবেন, তার পর রাতে ফ্লাইট, ওঁদের গাড়ির ব্যবস্থা আছে তো?” মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলেন রানে।
সবাইকে গাড়িতে উঠিয়ে, তার পর লোকেশন থেকে বেরোন মিস্টার অ্যান্ড মিসেস।
ওই যে বলছিলাম, নিসপালের ইউনিটে কোয়েল আর শুধু নায়িকা নন।
এ যেন কর্তা-গিন্নির সংসার। |
|
|
সিন বুঝিয়ে দিচ্ছেন
পরিচালক রাজা চন্দ |
হেলিকপ্টার থেকে লাফানোর অভিজ্ঞতা
শ্বশুর-শাশুড়িকে শোনাচ্ছেন তাঁদের আদরের পুত্রবধূ |
|
|
|
|
|
|