পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থীরা যাতে নির্ভয়ে তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা করতে পারেন, সে জন্য মহকুমাশাসকের অফিসেও মনোনয়নপত্র জমা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। শুক্রবার প্রত্যেকটি ব্লক অফিস ছাড়াও রামপুরহাট, বোলপুর এবং সিউড়ি সদর মহকুমায় এসে নিজেদের গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা করলেন মূলত বিরোধী রাজনৈতিক দলের (যেমন সিপিএম, কংগ্রেস) মনোনীত প্রার্থীরা। যাঁদের অধিকাংশই মহিলা প্রার্থী।
কেন নির্দিষ্ট ব্লক ছেড়ে মহকুমাশাসকের অফিসে এসে মনোনয়নপত্র জমা দিতে হল ওই প্রর্থীদের? এর জন্য সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতৃত্ব তৃণমূলের বিরুদ্ধ সন্ত্রাস ও ভয় দেখানোর অভিযোগ করেছে। তবে ভোটপ্রচার থেকে নির্বাচন পুরোটাই এখনও বাকি। তাই ‘সন্ত্রাসের’ ভয়ে মহকুমাশাসকের অফিসে এসে মনোনয়ন জমা দিলেও পরে নিরাপত্তা কী হবে? বিশেষ করে মহিলা প্রার্থীদের। কেন না এবার ৫০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত। |
সিউড়ি প্রশাসনিক ভবনে মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন এক প্রার্থী। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। |
মহকুমাশাসকের কাছে গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের জন্য কংগ্রেসের হয়ে নিজেদের মনোনয়ন জমা দিতে আসা সাঁইথিয়ার ফুলুর পঞ্চায়েতের কোহিনূর বিবি, বনগ্রাম পঞ্চায়েতের দেবশ্রী মণ্ডল বা সিপিএমের হয়ে সিউড়ি ২ ব্লকের আবিনাশপুর পঞ্চায়েতের নহারা বিবি, ছায়া বাগদি বা বনশঙ্কা পঞ্চায়েতের সিদ্ধেশ্বরী বাগদিদের কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না যে, এর পর এলাকায় ফিরে নির্বিঘ্নে ভোট প্রচার সারতে পারবেন কি না? বরং তাঁরা বলছেন, এলাকায় গেলে যে কোনও ধরনের হুমকি বা বাধার সম্মুখীন হতে হবে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “যেখানে নিজের এলাকায় গেলে মহিলা সভাধিপতির উপর বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দেয় তৃণমূলের লোকজন, সেখানে গ্রাম পঞ্চায়েতের মহিলা প্রার্থীদের উপর শাসকদলের লোকজন যে কোনও ধরনের আক্রমণ বা সন্ত্রাস চালাতে পারে এই আশঙ্কা আমরা করছি। কারণ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু হতেই গোটা জেলা জুড়েই সন্ত্রাস করে আসছে তৃণমূল।” দিলীপবাবু প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন।
দিলীপবাবুর একই অভিযোগ করেছেন কংগ্রেসের জেলা সভাপতি সৈয়দ সিরাজ জিম্মিও। তাঁর দাবি, “প্রশাসন শক্ত হাতে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এই পরিস্থিতি হয় না।” মনোনয়ন জমা দেওয়ার পরে আলোচনা করে কর্মপদ্ধতি স্থির করা হবে বলে জিম্মি জানিয়েছেন। যদিও তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বক্তব্য, “জেলায় কোথাও তৃণমূল সন্ত্রাস করছে না। সবই কংগ্রেস, সিপিএমের বানানো গল্প।” জেলা পুলিশ সুপার মুরলীধর শর্মা বলেন, “কারও মনের ভয় তো কাটানো সম্ভব নয়। তবে কোনও মহিলা প্রার্থীকে কেউ ভয় দেখাচ্ছে বা হুমকি দিচ্ছে এমন খবর পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”
|