অস্ত্র কারখানার হদিস মিলল দুর্গাপুরে, ধৃত ৩
বেআইনি অস্ত্র তৈরির কারখানার হদিস মিলল দুর্গাপুরের নঈমনগরে। শুক্রবার পুলিশ ওই এলাকার একটি বাড়ি থেকে বহু আগ্নেয়াস্ত্র, যন্ত্রাংশ, আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্র উদ্ধার করেছে। কারখানার তিন কর্মী ও বাড়ির মালিক শেখ সাগিরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃত কর্মীদের নাম মহম্মদ রিজওয়ান, মহম্মদ কাইলু, মহবুব আলি। বাড়ি বিহারের মুঙ্গেরের মফস্বল থানার বারদা গ্রামে। তবে মূল পাণ্ডা ফিরোজ হাসান পলাতক। পুলিশ তাকে খুঁজছে।
আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, নঈমনগরের শেখ সাগির সম্পর্কে ফিরোজের ভাইপো। তার বাড়ি থেকে একটি ৭.৬ মিমি পিস্তল, ৬ টি ওয়ান শাটার, ৪টি পিস্তল, ১টি রাইফেল, ১৫১ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া অগুণতি আগ্নেয়াস্ত্রের ‘বডি’ মিলেছে। বেশ কিছু নক্সার ছবি পাওয়া গিয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, বাড়ির অন্য অংশে যন্ত্রপাতি বসিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির কারখানা চলছে বলে তাদের কাছে খবর ছিল। লোহা কাটার যন্ত্র, পাঞ্চিং মেশিন, লোহার রড, পাত ইত্যাদি উদ্ধার হয় সেখান থেকে। পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জানিয়েছে, গ্রাম থেকেই তারা আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছে। দিন কুড়ি আগে তারা ফিরোজের কারখানায় কাজ নিয়ে আসে। ধৃতেরা জানিয়েছে, আসল অস্ত্রের নক্সা অনুকরণ করে তারা দিনে একটি করে আগ্নেয়াস্ত্র বানাতে পারে। তাদের কাছ থেকে সেই অস্ত্র নিয়ে যায় ফিরোজ। কিন্তু তার পর তা কোথায়, কাদের কাছে সে বিক্রি করে তা তারা জানে না।
কারখানার ভিতরে। —নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অভিযুক্ত ফিরোজ শেখ এলাকার লোহা মাফিয়াদের অন্যতম। আগে সে মসজিদ মহল্লা এলাকাতেই থাকত। বছর চারেক আগে নঈমনগরে তার ভাইপো শেখ সাগিরের বাড়িতে উঠে আসে। সেখানেই লোহার কারবার ফেঁদে বসে। কিন্তু কমিশনারেট চালুর পরে পুলিশি অভিযানের জেরে সেই ব্যবসা ‘গুটিয়ে নিতে’ বাধ্য হয় সে।
তার পর বছর দুয়েক আগে বেআইনি অস্ত্রের কারবার শুরু করে সে। প্রথম দিকে, আগ্নেয়াস্ত্রের যন্ত্রাংশ আলাদা আলাদা ভাবে এখানে নিয়ে এসে জুড়ত সে। সেই কাজেই ব্যবহার হত সেই লোহার যন্ত্রপাতিগুলো। কিন্তু এভাবে খুব বেশি লাভ হচ্ছিল না তার। তাই একটা আগ্নেয়াস্ত্র কারখানা গড়ার পরিকল্পনা নিয়ে যোগাযোগ করে মুঙ্গেরের কারবারিদের সঙ্গে। সেখান থেকে প্রশিক্ষিত কর্মীদের আনিয়ে দুর্গাপুরে কারখানা চালাত ফিরোজ।
পুলিশের দাবি, ধৃত ওই তিন কর্মী জানিয়েছে, মুঙ্গেরের তুলনায় এখানে তাদের দ্বিগুণ থেকে তিন গুণ পর্যন্ত বেশি টাকা পারিশ্রমিক মিলত। একটি ওয়ান শাটার রাইফেল তৈরি করে মুঙ্গেরের কারখানায় যেখানে ২০০ টাকা পাওয়া যেত, সেখানে ফিরোজ তাদের একই কাজের জন্য ৫০০ টাকা দিত। মুঙ্গেরে যেখানে পিস্তল পিছু এক থেকে দেড় হাজার টাকা মিলত। দুর্গাপুরে সেখানে পাওয়া যেত তিন থেকে চার হাজার টাকা। এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এখনও পর্যন্ত ফিরোজের গতিবিধি নিয়ে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে অন্যান্য সূত্র থেকে পুলিশ বেশ কিছু এজেন্টের সন্ধান পেয়েছে। মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকার সঙ্গেও তাদের যোগাযোগ রয়েছে বলে অনুমান পুলিশের।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এমন ঘটনায় উষ্মা প্রকাশ করেছে সিপিএম। দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘিরে বিশ্ৃঙ্খল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে শাসক দল। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার রাস্তায় যে ভাবে বাধা দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে এর সম্পর্ক থাকতেই পারে।” যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় বলেন, “মানুষ আমাদের পাশে আছেন। আমাদের অস্ত্রের দরকার নেই। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে বিশ্বাসী। পুলিশ তদন্ত করছে। আসল তথ্য প্রকাশ্যে আসবে নিশ্চয়ই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.