গুল মকাই। সাহসিনী জীবনের জলছবি এ বার রুপোলি পর্দায়।
তালিবানি ফতোয়াকে উড়িয়ে গোটা দুনিয়াকে তাজ্জব করে দিয়েছিল সে। ছদ্মনামে কলম ধরেছিল তাদের বিরুদ্ধে। গত অক্টোবরে স্কুলে যাওয়ার অপরাধে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি খেয়েছিল পাক কিশোরী মালালা ইউসুফজাই। চোদ্দো বছরের কিশোরীর জীবন এ বার বড় পর্দায়। বানাচ্ছেন ভারতীয় পরিচালক আমজাদ খান।
ছবির মালালার মুখও বেছে নিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশি ছাত্রী, ষোড়শী ফতিমা শেখ। এক বন্ধুর মাধ্যমে নায়িকাকে খুঁজে পেয়েছেন। পরিচালকের কথায়, বাস্তব আর পর্দার চরিত্রের মধ্যে মিলও রয়েছে দু’জনেই ছাত্রী। তা ছাড়া, ফতিমার মুখের আদলও মালালার মতোই।
অবশ্য অমিলও আছে ভরপুর। স্কার্ফে মাথা ঢাকা যদিও মুখ দেখা যাচ্ছে স্পষ্টই, মালালা বলতে এই চেনা ছবিটাই ভেসে ওঠে চোখের সামনে। ছবির মালালা কিন্তু বোরখার আড়াল এখনই সরাতে নারাজ। কারণ একটাই, তালিবানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করতে পারছেন না ওই কিশোরীর বাবা-মা।
তাঁদের আশঙ্কা, ছবিতে ফতিমার মুখ দেখানো হলে বাস্তবের মালালার মতোই হয়তো পরিণতি হবে তাঁদের মেয়েরও। পরিচালককে তাই অনুরোধ করেছেন, এখনই যেন ফতিমার কোনও ছবি প্রকাশ করা না হয়। চাপের মুখে অভিনেত্রীর নাম গোপন রাখতে পারেননি পরিচালক। তবে জানিয়েছেন, আপাতত পর্দার মালালার একটাই ছবি দেখতে পাবেন দর্শকরা বোরখায় মাথা ঢাকা। দেখার জন্য খালি চোখ বরাবর কিছুটা অংশ কাটা। সামনের মাসের মাঝামাঝি শুরু হবেশ্যুটিং কাজ। ব্রিটেন, পাকিস্তান, ইরান ও ভারত এই চার দেশকে প্রাথমিক ভাবে বেছে নিয়েছেন আমজাদ খান।
সালটা ২০০৭। পাকিস্তানের সোয়াট উপত্যকা। তালিবানি কব্জায় গোটা এলাকা। বাসিন্দাদের উপর হাজারো নিষেধাজ্ঞার কড়াকড়ি। কোনও মতেই মেয়েদের স্কুলে যেতে দিতে রাজি নয় তালিবান। নির্বিচারে তারা জ্বালিয়েও দেয় বহু স্কুল। চারিদিকে যখন এই অবস্থা, কলম ধরে মালালা ইউসুফজাই। বয়স তখনও এগারো পেরোয়নি। ‘গুল মকাই’ ছদ্মনামে তালিবানি শাসনের ছবিটা সকলের সামনে নিয়ে আসে ওই ছোট্ট মেয়েটা। ২০০৯-এ তালিবানের দাপট কমার সঙ্গে সঙ্গে যেন আরও ধার বাড়ে তার কলমের। আক্রমণটা আসে আর কয়েক বছর পরে, ২০১২-এর অক্টোবরে। আচমকাই তার স্কুল বাসে উঠে সামনে থেকে গুলি চালায় এক জঙ্গি। বাঁ চোখের ঠিক উপরেই লাগে গুলিটা। দেশেই চিকিৎসকরা মাথা থেকে গুলি বার করেন। বার্মিংহামের কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালে চলে ম্যারাথন অস্ত্রোপচার। চিকিৎসায় সাড়া দিয়ে সে এখন অনেকটাই সুস্থ। যার জন্য এত লড়াই, বন্ধ হয়নি সেই স্কুলে যাওয়াও।
একলা মেয়ের এই মনের জোরকে সে দিন কুর্নিশ না করে পারেননি কেউই। আর তাই নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে ওই পাক কিশোরীর নাম। “ওইটুকু একটা মেয়ের সাহস নাড়িয়ে দিয়েছিল আমায়”, কবুল আমজাদের। “তাই ওকে নিয়ে ছবিটা বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলি”, জানালেন তিনি।
ফিল্মের নাম কী হবে, ঠিক করেছেন? নাম তো ঠিকই আছে, গুল মকাই, জবাব পরিচালকের। |