হঠাৎই পেটের গোলমালে আক্রান্ত হলেন শ’দেড়েক বাসিন্দা। মঙ্গলবার ভোর থেকে অসুস্থ হতে শুরু করেন একের পর এক গ্রামবাসী। বুদবুদ থানার বুদবুদ গ্রামের প্রায় সকলেরই জ্বর, বমি, পায়খানা শুরু হয়। বেলা বাড়লে বাড়ে আক্রান্তের সংখ্যাও। তাঁদের মানকর গ্রামীণ হাসপাতাল ও পুরষা ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
হাসপাতালের অনুমান, জল থেকে কোনওরকম সংক্রমণ হওয়ায় এমনটা ঘটেছে। আক্রান্তদের দেখভালের জন্য অস্থায়ী শিবিরও বসানো হয় গ্রামে। এলাকায় গিয়েছিলেন বিডিও স্থানীয় বিধায়ক, পঞ্চায়েত প্রধান প্রমুখেরা। ব্লক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হয়েছে। গ্রামের বাসিন্দা শ্যামসুন্দর প্রামাণিক, দীনেশ পালেরা জানান, ভোরে তাঁরা খবর পান গ্রামের বেশ কয়েক জনের জ্বর এসেছে। এর পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক আক্রান্তের খবর পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তাঁরা। খবর দেওয়া হয় ব্লক প্রশাসনকে।
খবর পেয়ে প্রশাসনের তরফে অ্যাম্বুলেন্স ও অস্থায়ী শিবিরের বন্দোবস্তো করা হয়। তবে কী কারণ এমনটা ঘটল তা বুঝতে পারছেন না কেউই। এলাকার অমিত চট্টোপাধ্যায়, চঞ্চলবাবুরা বলেন, “এত জন মানুষ এক সঙ্গে কোথাও কিছু খাননি। তা-ও কেন এমন হল বুঝতে পারছি না।” হাসপাতালে ভর্তি সনৎ বাগ্দী, মৌসুমী হাজরারাও জানান, রাতে বাড়িতেই খাবার খেয়েছেন তাঁরা। কিন্তু ভোর থেকেই বমি, পায়খান শুরু হয়। |
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা দেড়শো ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে বেশ কয়েক জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মহাপ্রসাদ পাল জানান, পুরষা হাসপাতালে প্রায় ৩৫ জন ও মানকর গ্রামীণ হাসপাতালে ৪ জন ভর্তি আছেন। তাঁদের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল। তবে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বাড়লে ভর্তি নেওয়া মুশকিল হবেও বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, “মহকুমা স্বাস্থ্য আধিকারিকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হবে।”
ঘটনার কারণ জানতে চাওয়া হলে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না। কয়েকজন রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে কী থেকে সংক্রমণ ঘটেছে। মানকর গ্রামীণ হাসপাতালের এক চিকিৎসক সুপর্ণা মণ্ডলও বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে জল থেকে এমনটা হতে পারে। তবে রিপোর্ট না পেলে নিশ্চিত কিছু বলা সম্ভব নয়।” |
গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, অস্থায়ী চিকিৎসা শিবিরে বেশ কয়েকজনের চিকিৎসা চলছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা গ্রামে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শও দিচ্ছেন। এমনই এক কর্মী মঞ্জু মণ্ডল বলেন, “আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিস্কার পরিছন্ন থাকতে বলছি। হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে খাবার খেতে বলছি। আর একটু জ্বর এলেই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।”
স্থানীয় বিধায়ক সুনীলকুমার মণ্ডলও জানান, মাইকে করে প্রচার চালানো হচ্ছে। জল ফুটিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বুদবুদ পঞ্চায়েতের প্রধান কাশীনাথ চট্টোপাধ্যায়ও জানান, গ্রামের প্রতিটি নলকূপে ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো হচ্ছে। গলসী ১ এর বিডিও ব্রততী মিত্র বলেন, “গ্রামে অস্থায়ী চিকিৎসা শিবির করা হয়েছে। এখন সেটি এলাকায় থাকবে।”
|
মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
|
মা-সদ্যোজাতর মৃত্যু, অভিযুক্ত চিকিত্সক
নিজস্ব সংবাদদাতা • রানাঘাট |
চিকিত্সকের গাফিলতিতে মা ও সদ্যোদাতর মৃত্যুর অভিযোগ উঠল। সোমবার নদিয়ার রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের ঘটনা। হাসপাতালের সুপার রঞ্জিত দাস বলেন, “বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে চিকিত্সকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” হাসপাতাল ও মৃতার পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ধানতলা থানার বেনেহাটির বাসিন্দা বছর চব্বিশের পিঙ্কি বিশ্বাস সোমবার প্রসূতি বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। রাতে তাঁর অস্ত্রোপচার হওয়ার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় জেএনএন হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পথেই মারা যান পিঙ্কি। পিঙ্কিদেবীর ভাই কৃষ্ণ হালদার বলেন, “হাসপাতালে ভর্তির সময় দিদি যন্ত্রণায় ছটফট করছিল। চিকিত্সক, নার্সদের বারবার বলা সত্ত্বেও কেউ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।” অভিযোগ অস্বীকার করে হাসপাতালের চিকিত্সক অমিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাচ্চাটা স্বাভাবিক অবস্থায় না থাকায় মারা গিয়েছে। আর মহিলা প্রথমে সুস্থই ছিলেন। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছিল।” |