বয়স মেরেকেটে দু’দিন হবে। এর মধ্যেই নামও হয়েছে একটা। তবে নাম তো নয়, আসলে একটা সংখ্যা ‘বেবি নম্বর ৫৯’। দু’দিনের এই সদ্যোজাতটিকেই খুঁজে পাওয়া গিয়েছে একটি নিকাশি নালার মধ্যে। শৌচাগারের কমোডে ফেলে দিয়ে জল ঢেলে দিয়েছিল কেউ। কিন্তু তার পরেও বেঁচে গিয়েছে সে।
চিনের উপকূলে জেজিয়াং প্রদেশের জিনহুয়া অঞ্চলে মোটামুটি ধনীদেরই বাস। শনিবার বিকেল বেলায় এই এলাকারই এক বাড়ির ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শুনতে পেয়ে দমকলে খবর দেন আশপাশের বাসিন্দারা। কোথা থেকে ওই কচি গলা ভেসে আসছে খুঁজতে গিয়ে কমোডের নীচের পাইপটা নজরে আসে দমকল কর্মীদের। কিন্তু চার ইঞ্চির পাইপ থেকে কী করে বাচ্চার গলা আসবে! বিশ্বাসই হয়নি তাঁদের। কিন্তু কান্নাও যে আর থামে না। শেষমেশ যেখান থেকে আওয়াজটা আসছিল, পাইপের ওই পুরো অংশটাই কেটে বার করে আনেন দমকল কর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কাই সত্যি। সরু পাইপে কুঁকড়ে আটকে রয়েছে এক একরত্তি। এই কাণ্ড দেখে ভাঙা পাইপটা নিয়েই হাসপাতালে দৌড়ন তাঁরা। প্রায় দু’ঘণ্টার চেষ্টায় পাইপ কেটে শিশুটিকে বাইরে আনেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, সদ্যোজাত ছেলেটির নাড়িও কাটা হয়নি। পাইপে আটকে থাকায় তার ঘাড়ে-চোখে-মুখে চাপ-চাপ ময়লা জমে। ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছে বাচ্চাটিকে। শুরুতে তার হৃৎস্পন্দন কম থাকলেও এখন অবস্থা মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে। |
রক্ষা পেল শিশু। ছবি: এএফপি। |
চিনের সরকারি টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, ওই সদ্যোজাতর বাবা-মায়ের খোঁজে জোর তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই তোলপাড় হচ্ছে টুইটারের মতো চিনের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ‘সিনা উইবো’। বাবা-মা’র কড়া শাস্তি যেমন চাইছেন অনেকে, তেমনই কেউ কেউ
আবার লিখেছেন নোংরা পাইপের থেকেও শত গুণ বেশি নোংরা ওই বাবা-মায়ের মন।
তবে এই সব কিছুর মধ্যেই অবশ্য জিনহুয়ার এক পুলিশ অফিসার অন্য কথা বলেছেন। তাঁর কথায়, শৌচাগার ব্যবহার করতে গিয়ে আচমকাই সন্তান প্রসব হয় এক অবিবাহিত তরুণীর। উদ্ধার-পর্বের পুরো সময়টাই তিনি সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পরে তাঁকে জোর করা হলে তিনি স্বীকার করে নেন, ওই সন্তান তাঁরই। তবে শিশুটির বাবার খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।
সামাজিক বা আর্থিক চাপে বাচ্চাকে ফেলে চলে যাওয়ার ঘটনা চিনে নতুন কিছু নয়। তার উপর এক-সন্তান নীতির চোখরাঙানিও রয়েছে পুরোদস্তুর। সরকারি এই নিয়ম অমান্য করলে জরিমানা যেমন হতে পারে তেমনই চলে যেতে পারে সরকারি চাকরি। শাস্তির হাত থেকে বাঁচতে নিজের সন্তানকে ফেলে দেওয়ার পথই বেছে নেন বহু দম্পতি।
যে দেশে সন্তানদের ফেলে দিতেও পিছপা হন না বাবা-মায়েরা, সেখানেই আবার উপচে পড়ে ভালবাসাও। তাই ওই একরত্তির জন্য ন্যাপি, গুঁড়ো দুধ, জামাকাপড় একের পর এক এসেই চলেছে হাসপাতালের ঠিকানায়। |