নীরবতা-মুখাগ্নি, হাতির শোকে পাগল গ্রাম
ক মিনিটের নীরবতা। গীতা পাঠ। পায়ে আলতা, মাথায় সিঁদুর। সঙ্গে পূজাপাঠ। আর আছেন কান্নায় ভেঙে পড়া পুরুষ-মহিলা।
এ বার মুখাগ্নি। সব শেষে দাহ। চার ট্রাক বোঝাই কাঠ দিয়ে।
‘হাতি ঠাকুর’ মরেছে!
আড়াই দিন যমে-মানুষে টানাটানির পরে। চিকিৎসকদের সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে। আর সেই মৃত্যুরই এমন বিরল শোক পালনের সাক্ষী রইল রবিবারের ভরতপুর গ্রাম। বাঁকুড়ার বড়জোড়া ব্লকের এই গ্রামের ধানখেতে শুক্রবার গুরুতর অসুস্থ মাদি হাতিটিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাকে সুস্থ করে তোলার লক্ষ্যে বাঁকুড়া ও বড়জোড়া থেকে পশু চিকিসকের দু’টি দলকে নিয়ে এসেছিল বন দফতর। হাতিটিকে স্যালাইন ও ওষুধ দেওয়া হয়। রক্ত পরীক্ষা হয়। থার্মোমিটারে বারবার মাপা হয় জ্বর। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় রবিবার সকালে কলকাতা থেকে আনা হয় পশু চিকিসক স্বপন ঘোষকে। তিনি চিকিৎসা শুরু করার আগেই এ দিন সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ মারা যায় বছর দশেকের হাতিটি।

চলছে পুজোপাঠ। ভরতপুর গ্রামে। ছবি: অভিজিৎ সিংহ
এই গোটা পর্বের সাক্ষী থেকেছেন ভরতপুর ও সংলগ্ন সংগ্রামপুর গ্রামের লোকজন। প্রথম দিন থেকেই হাতিটির আরোগ্য কামনায় গ্রামবাসীদের একাংশ পূজাপাঠ শুরু করেছিলেন। এ দিন হাতিটির মৃত্যুর পরে তাই সেখানেই তার শেষকৃত্য করার দাবি তোলেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের জোরাজুরিতে ঘটনাস্থলেই হাতিটির ময়না-তদন্ত করে সেখানেই দাহকার্য সারতে হয় বন দফতরকে। গ্রামবাসীর দাবি, সঠিক চিকিসা হলে হয়তো সুস্থ হয়ে উঠত হাতিটি। যদিও ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগ) সুধীর দাস বলেন, “চিকিৎসায় কোনও রকম গাফিলতি করিনি। হাতিটির সানস্ট্রোক হয়েছিল। কলকাতা থেকেও আমরা পশু চিকিৎসক আনলাম। কিন্তু হাতিটিকে বাচানো গেল না।”
হাতির মৃত্যুর পরে তাকে প্রণাম করতে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। বনকর্মীরা খবর দেন স্থানীয় বেলিয়াতোড় থানায়। পুলিশ এসেও ভিড় বাগে আনতে ব্যর্থ হন। ধুতি ও গামছা গায়ে সংগ্রামপুরের দুই ব্যক্তি হাতির দেহের পাশে বসে গীতা পড়তে শুরু করেন। তাঁদের কথামতোই এক মিনিট নীরবতা পালন করেন গ্রামবাসীরা। হাতির দেহের কাছে কান্নায় ভেঙে পড়েন সংগ্রামপুরের টুনি বাউরি, শ্যামাপদ প্রামাণিক, নন্দন চট্টরাজ।
গ্রামবাসীদের দাবি মেনে তাঁদের সামনে হাতিটির ময়না-তদন্ত কী ভাবে সম্ভব, তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয় বনকর্তাদের। ঠিক হয়, হাতির দেহের চারপাশ কাপড় দিয়ে ঘিরে ময়না-তদন্ত হবে। বিকেল তিনটে নাগাদ শুরু হয় ময়নাতদন্ত। ইতিমধ্যে হাতির দেহ পোড়াতে চারটি ট্রাকে কাঠ আনা হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার পর সংগ্রামপুর গ্রামের পূর্ণচন্দ্র রুইদাস স্নান সেরে নতুন ধুতি পরে গ্রামবাসী ও বনকর্তাদের সামনে হাতিটির মুখে আগুন দেন। তার পরেই হয় দাহকাজ।
এই সংগ্রামপুরেরই পড়শি গ্রাম গদারডিহির দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শিল্পী কর্মকার হাতির উপদ্রবের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে সম্প্রতি মানবাধিকার কমিশনের শরণাপন্ন হয়েছেন। টুনিদেবী, শ্যামাপদবাবু, নন্দনবাবুরা কিন্তু বললেন, “প্রায়ই হাতি গ্রামে ঢুকে লোক মারে, ঘরবাড়ি ভাঙে। বন দফতরের কাছে হাতি তাড়ানোর দাবি তুলি আমরা। তা বলে কখনওই হাতির মৃত্যু কামনা করি না। হাতির মৃত্যু আমাদের কাছে খুবই দুঃখের।”
রবিবারের পড়ন্ত আলোয় ধানখেতে হাতির জ্বলন্ত দেহ যেন সেই দুঃখই জানান দিচ্ছিল।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.