গোধূলির আকাশে এখন গ্রহ-সমাবেশ। সূর্যাস্তের পর বিদায়ী সূর্যের আলোয় পশ্চিম আকাশে প্রায় গা ঘেঁষাঘেষি করে তিনটি বিন্দু বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের কথায়, তিন গ্রহের এই নিকটতম সহাবস্থান, ২০১৩-র পর অন্তত ১৩ বছরের মধ্যে আর দেখা যাবে না।
এ মাসের শুরু থেকেই ক্রমশ কাছাকাছি আসতে শুরু করেছিল সূর্যের এই তিন গ্রহ। তবে কাছাকাছি বলতে, আমাদের দেখার সাপেক্ষে। খালি চোখে এদের খুব কাছাকাছি দেখালেও নিজেদের মধ্যে বিস্তর দূরত্ব প্রায় কয়েকশো কোটি মাইল। ২৪ থেকে ২৯ মে, অর্থাৎ কি না শুক্রবার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত একেবারেই জোট বেঁধে আকাশে জ্বলজ্বল করবে এরা।
কাঁটা-কম্পাসে একটা ৫ ডিগ্রি কৌণিক ব্যাসের বৃত্ত আঁকলে যতটুকু হয়, তার মধ্যেই দেখা যাবে তিনটি গ্রহকে। মেঘ এবং দূষণমুক্ত আকাশ থাকলে খালি চোখেই স্পষ্ট দেখা যাবে বৃহস্পতি এবং শুক্রকে। উজ্জ্বলতার বিচারে সব চেয়ে এগিয়ে শুক্র। তার পর বৃহস্পতি, এবং সব শেষে বুধ। ঔজ্জ্বল্য যেহেতু কম, তাই বুধকে ভাল করে দেখতে হলে অবশ্য একটা দূরবীন চাই। বাকিদের খালি চোখেই পরিষ্কার দেখা যাবে। সূর্যাস্তের পর ৩০ মিনিট থেকে ৬০ মিনিট পর্যন্ত সব চেয়ে ভাল দেখতে পাওয়া যাবে এই মহাজাগতিক সমাবেশ। |
২৬ মে, একে অপরের সব চেয়ে কাছাকাছি চলে আসবে এরা তিন জন। এতটাই কাছে, যে একটা আড়াই ডিগ্রি বৃত্তের মধ্যেই দিব্যি জায়গা করে নেবে। সবটাই অবশ্য আমাদের চোখে। যত দিন যাবে, ক্রমশ নিজেদের জায়গা বদলাবে তিন গ্রহ। এবং শেষমেশ জুনের শেষে আকাশ থেকে বিদায় নেবে বুধ। আর বৃহস্পতি জুনের প্রথম সপ্তাহেই।
কেন্দ্রীয় পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমির অধিকর্তা সঞ্জীব সেন বলেন, “এই সময়টা তিনটি গ্রহই কয়েক মিনিটের তফাতে অস্ত যাবে। ধরা যাক, ২৬ তারিখ সূর্য ৬টা ১৪ মিনিটে অস্ত যাবে। বুধ অস্ত যাবে ৭টা ৩১ মিনিটে। শুক্র ৭টা ২৪, বৃহস্পতি ৭টা ৩২। অর্থাৎ সূর্যাস্তের পর এক ঘণ্টারও বেশি পশ্চিম আকাশ থাকবে তিন গ্রহ। এবং একে অপরের থেকে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে অস্ত যাবে। এ জন্যই এদের এক সঙ্গে এত ভাল করে দেখা যাবে।” তিনি আরও জানান, “আকাশের এক জায়গায় গ্রহদের এ ভাবে জড়ো হওয়ার ঘটনাকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় কনজাংশন বা সহাবস্থান বলে।” ২০১১ সালের মে মাসেও বুধ-বৃহস্পতি-শুক্র, তিন গ্রহের সহাবস্থান ঘটেছিল। তবে, এত নিবিড় সহাবস্থান একেবারেই বিরল, বলছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরাই। আর তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও বছর ১৩। |