কাটোয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র
চাষিদের সম্মতি হাতে, অধিগ্রহণ চাইছে সংস্থা
ক সময়ে যে চাষিরা বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে জমি দেবেন না বলে গোঁ ধরেছিলেন, তাঁরা প্রায় সকলেই সম্মতি দিয়েছেন। বহু টানাপোড়েনের পরে কার্যত তাঁদের ভরসাতেই রাজ্যের কাছে ফের জমি অধিগ্রহণের আর্জি জানাতে চাইছে জাতীয় তাপবিদ্যুৎ নিগম (এনটিপিসি)।
ক্ষমতায় এসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাঁরা জোর করে জমি নিতে চান না। তাই তাঁর সরকার শিল্পের জন্য কোনও জমি অধিগ্রহণ করবে না। শিল্পসংস্থাকেই তা সরাসরি কিনে নিতে হবে। এর পরেই জমি-জটে বর্ধমানের কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ থমকে যায়। জট খুলতে সব জমিমালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এনটিপিসি।
কাটোয়ায় এনটিপিসি-র অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার শিবাশিস বসু বলেন, “৯৮ শতাংশেরও বেশি জমিমালিক বা তাঁদের প্রতিনিধিরা সম্মতি জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন। রাজ্য বা দেশের বাইরে রয়েছেন বাকিরা। তাঁদের সম্মতি পেলেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে সমস্ত নথি পাঠিয়ে দেব।” সংস্থার আঞ্চলিক অধিকর্তা (পূর্বাঞ্চল ১) সপ্তর্ষি রায় বলেন, “আমরা চাষিদের আগ্রহের কথা রাজ্য সরকারকে জানাব। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে আমরাও আগ্রহী।”
এনটিপিসি কর্তাদের মতে, সব চাষিই যেখানে জমি দিতে সম্মত, সেখানে ‘জোর’ করার প্রশ্ন নেই। সে ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণে রাজ্যের ‘নীতিগত আপত্তি’ থাকারও কথা নয়। অন্য দিকে, সরাসরি অতটা জমি কিনতে গেলে তাঁদের প্রবল আইনি জটিলতার সম্মুখীন হতে হবে। তা তাঁরা চাইছেন না। তাই চাষিদের লিখিত সম্মতির কথা জানিয়ে জমি অধিগ্রহণের জন্য ফের রাজ্যের মুখ্যসচিবকে চিঠি দেওয়া হবে।
এক দিন জমিরক্ষা কমিটি গড়ে যাঁরা নানা ওজর-আপত্তি তুলেছিলেন, প্রকল্প ভেস্তে যেতে পারে বুঝে সেই চুড়পুনি, কোশিগ্রাম, দেবকুন্ডু মৌজার চাষিরাই এখন এনটিপিসি-র পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। শিবাশিসবাবু ও ডেপুটি ম্যানেজার রজতশুভ্র বসুর কাছে বারবার জানিয়েছেন, ন্যায্য দরে জমি দিতে রাজি তাঁরা। কোশিগ্রামের দয়ালহরি সাহা, দেবকুন্ডুর সুশান্তকুমার ঘোষ, চুড়পুনির পরেশনাথ গুপ্তদের কথায়, ‘‘জমির দাম ও চাষের বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করেই চাষিরা জমি দিতে সম্মত হয়েছেন।”
রাজুয়া গ্রামের মুজিবর রহমান বলেন, “ছেলেরা আর চাষ করতে রাজি নয়। মেয়ের বিয়ে দিতে হবে। এনটিপিসি বলেছে, জমির বাজারদর যেমন তেমনই দাম পাব। সব দিক ভেবেই জমি দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হয়েছি।” ওই গ্রামেরই মহম্মদ ইজাজুল হক বলেন, “তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প হলে আমাদের উপকার হবে ভেবেই সম্মতি জানিয়ে চিঠি দিয়েছি।” কদমপুকুরে ‘অ্যাশ পন্ড’ করার পরিকল্পনা করে বাধা পেয়েছিল এনটিপিসি। তা চুড়পুনিতে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চুড়পুনি থেকেই খাল কেটে অজয়ের জল প্রকল্পে নিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে অন্তর্দেশীয় জলপথ কর্তৃপক্ষ (আইডব্লিউএআই)।
কিন্তু প্রকল্পটি শেষমেশ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গিয়েছে।
কাটোয়ায় ১৬০০ মেগাওয়াটের এই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য আগেই ৫৫৬ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল বাম সরকার। আরও প্রায় পাঁচশো একর অধিগ্রহণের কথা ছিল। সরকার বদলের পরে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পরিকল্পনা বদলে এনটিপিসি জমির পরিমাণ ৭০০ একরে নামিয়ে আনে। তার অর্থ, এখনও প্রায় দেড়শো একর জমি প্রয়োজন। ৩৬০টি প্লটে ছড়িয়ে থাকা ওই সব জমির মালিক প্রায় ১০৫০ জন, যাঁদের বেশির ভাগই সম্মতিপত্রে সই করেছেন।
প্রশ্ন হল, প্রায় সব জমিদাতাই যখন রাজি, এনটিপিসি নিজে জমি কিনে নিচ্ছে না কেন?
কেন্দ্রীয় সংস্থাটি মনে করছে, রাজি থাকলেও এত জনের থেকে সরাসরি জমি কেনা আদৌ সম্ভব নয়। সংস্থার এক কর্তার কথায়, “এখানে ভূমি সংস্কারের ফলে সব ছোট-ছোট জমি। তুলনায় মালিকের সংখ্যা অনেক বেশি। প্রচুর আইনি সমস্যা রয়েছে। দেবোত্তর সম্পত্তির জটিলতা আছে। তার উপরে দালাল তো আছেই!”
এর আগে উত্তরবঙ্গে সাবস্টেশন তৈরির জন্য আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার মিলিয়ে ১৮০ একর জমি কিনতে নেমে প্রায় দু’বছরেও পুরো জমি কিনতে পারেনি অন্যতম নবরত্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন। সর্বদলের সম্মতি ও চেষ্টা সত্ত্বেও এখনও প্রায় ৪০ একর জমি তাদের নাগালের বাইরে।
এনটিপিসি সূত্রের খবর, দেশে এখনও পর্যন্ত যে ২৯টি প্রকল্প তারা গড়েছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই জমি জোগাড় করে দিয়েছে সরকার। প্রথম দিকে কিছু প্রকল্পের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ করে তাদের ‘দান’ করা হয়েছিল। পরবর্তী পর্যায়ে সরকারের কাছ থেকে জমি কিনে অথবা লিজ নিয়ে তারা প্রকল্প গড়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা হওয়ায় এর আগে কখনওই তাদের জমি পেতে সমস্যায় পড়তে হয়নি। সংস্থার এক কর্তা বলেন, “এই সব সমস্যা সরকার ছাড়া কারও পক্ষে মেটানো সম্ভব নয়। জমি অধিগ্রহণই সমাধানের রাস্তা। রাজ্য সরকারের কাছে আমরা সেই আর্জিই জানাব।”

পুরনো খবর:

সাংবাদিককে হুমকি

একটি ইংরেজি দৈনিকের এক সাংবাদিককে টেলিফোনে হুমকি এবং হেনস্থার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে দুর্গাপুর থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম অসিত রায়, লালন পাসোয়ান এবং জনার্দন বৈরাগ্য। তাদের জেরা করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.