|
|
|
|
হুল্লোড় |
বন্দি কাপ্তান |
সচিনকে বলেছিলাম,
অবসর জীবন বড় দীর্ঘ হয়
সচিন তেন্ডুলকরকে ছয় বছর আগে তাঁর দেওয়া টিপস।
আর নানান বিশ্লেষণ। এক কিংবদন্তি
সম্পর্কে লিখছেন আরেক কিংবদন্তি স্যার ভিভ রিচার্ডস |
সচিনকে আমি প্রথম দেখি নব্বই সালে, ভারতীয় দল যখন ইংল্যান্ড সফরে। একটা ট্যুর ম্যাচ চলছিল। ইয়ান বিশপের বল ফ্রন্ট ফুটে এসে সচিন এমন পাঞ্চ করল যে, বলটা সাইট স্ক্রিনের উপর দিয়ে উড়ে গিয়ে পড়ল গ্যালারিতে। ইয়ান বিশপকে তখন সারা ক্রিকেট দুনিয়া রীতিমতো সমীহ করে। ফর্মে থাকা বিশপ যে কোনও বিখ্যাত ফাস্ট বোলারের চেয়ে কোনও অংশে কম নয়। সেই বিশপের বিরুদ্ধে সদ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা একটা নতুন ছেলের অমন তুমুল সাহস দেখে অবাক হয়ে গেলাম। সে দিনই বুঝেছিলাম, ছেলেটার মধ্যে একটা বিশেষ ব্যাপার আছে।
মনে আছে, ওর সঙ্গে শেষ সিরিয়াস আড্ডায় বসার সুযোগ হয়েছিল ২০০৭-এ। সে দিন ওকে মনমরা লাগছিল। আমি বলেছিলাম, “অবসর জীবনটা বড় দীর্ঘ হয়। ওসব নিয়ে বেশি ভাবছ কেন? তুমি যদি ক্রিকেটকে ভালবাসো, তা হলে যত দিন পারো খেলে যাও। অবসর জীবন কিন্তু অনেক বেশি দিনের। কাটতেই চায় না।”
আমি বরাবর সচিনের ভক্ত। ও তো কিংবদন্তি। |
|
ভিভ রিচার্ডস |
এখন আধুনিক ক্রিকেটে স্যর ডন ব্র্যাডম্যানের সঙ্গে তুলনা করা হয়। আমি ব্র্যাডম্যানের খেলা দেখিনি, তবে সচিনের খেলা দেখেছি। ওর মধ্যে যে ব্যাটসম্যানশিপ রয়েছে, তার কোনও তুলনাই হয় না। সেই সচিন যখন বলে, ও নিজের ব্যাটিংয়ে আমার মতো আগ্রাসন এবং সানির মতো জমাট রক্ষণ আনার চেষ্টা করে, তখন ভাল লাগে বইকী। শুনে মনে হয়, আমি চাঁদে পৌঁছে গিয়েছি। যাই বলুন, এটাই আমার জীবনের সেরা ‘কমপ্লিমেন্ট’। এবং এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। আমি এর প্রত্যুত্তরে একটা কথাই বলতে পারি, ‘সচিন ইজ আ ক্লাস অ্যাক্ট’।
সচিনের খেলা যত বার দেখেছি আমার সুনীল গাওস্করের কথা মনে হয়েছে। দু’জনেই যখন কোনও ডিফেন্সিভ শট খেলে, তখন তা নিখুঁত ডিফেন্সিভ শট। এই প্রজন্মের বহু ব্যাটসম্যানকে দেখেছি ডিফেন্সিভ শট থেকেও রান পেতে চাওয়ার ভুলটা করে। যা থেকে যা পাওয়ার নয়, তার চেষ্টা করতে গেলেই তো বিপত্তি ঘটে। ডিফেন্স আর অ্যাটাকের মধ্যে যে একটা মজবুত দেওয়াল থাকা দরকার, তা অনেকেই বোঝে না। সচিন এটা বোঝে বলেই অন্যদের চেয়ে আলাদা।
উইজডেন অ্যালমানাক যদি ফের শতাব্দীর সেরা ক্রিকেটার বাছতে বসে, যেমনটা করেছিল ২০০০ সালে, সন্দেহ নেই, তাতে সবার ওপরে সচিন থাকবেই থাকবে। ওর পরিসংখ্যানই সব চেয়ে বড় মাপকাঠি। তা ছাড়া ক্রিকেট বিশ্বে ওর প্রভাবের কথা ভাবলেও ওকে একের নীচে রাখা যাবে না। আমাকে যদি সেই তালিকায় ছ ’ নম্বরেও রাখা হয়, তা হলে আমি মোটেই অখুশি হব না। এটা হলফ করে বলতে পারি।
|
সচিন তেন্ডুলকর |
সচিনের মতো কিংবদন্তির জীবনেও কি আর খারাপ সময় আসেনি? ও সেই দুঃসময় কাটিয়ে ফিরেও এসেছে। আমার মনে হয়, ও অন্যদের চেয়ে অনেক ভালভাবে ফিরে এসেছে। আসলে ফিরে আসার জন্য কতটা পরিশ্রম করছেন আপনি, কতটা অধ্যবসায় রয়েছে আপনার তার ওপরই নির্ভর করে সব কিছু। সচিনকে তো আর পরিশ্রম, অধ্যবসায়ের দিক থেকে কেউ হারাতে পারবে না। চোট-আঘাত ওকে অনেক ভুগিয়েছে। কিন্তু মাথাটা ও সব সময়ই ঠিক রেখেছে। এটাই ওর সব চেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট। ওর যে ব্যাপারটা সব চেয়ে ভাল লাগে, তা হল, অপেক্ষাকৃত দুর্বল দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলতে নেমেও সমান মোটিভেশন বজায় রাখা। এমন এমন সব দলের বিরুদ্ধে ও খেলেছে, যাদের বিরুদ্ধে আমিও কোনও দিন খেলিনি।
অথচ কী অদ্ভুতভাবে চমৎকার মোটিভেশন বজায় রেখে সেই দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলে ও। ওর কাছে অস্ট্রেলিয়া যতটা গুরুত্বপূর্ণ, জিম্বাবোয়ে বা কানাডাও ততটাই। এটাই প্রমাণ করে, ও কত বড় পেশাদার। ওর মানসিক শক্তি সম্পর্কেও ধারণা করা যায় এই ব্যাপারটা থেকেই।
ওর গ্রেটনেসকে সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে একশো সেঞ্চুরির মাইলফলক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দশটা সেঞ্চুরি করতেই অনেকের কালঘাম ছুটে যায়। সেখানে একশোটা সেঞ্চুরি! এর মধ্যে কোনটা সেরা , সেটা আবার বাছতে বলবেন না, পারব না। আগ্রাসন এবং মনঃসংযোগ দুটো একসঙ্গে বজায় রাখার ব্যাপারে ওর চেয়ে বড় ওস্তাদ সারা ক্রিকেট দুনিয়ায় আর আছে বলে আমার জানা নেই। আর জেনে রাখবেন, এর চেয়ে কঠিন কাজ আর কিছু নেই। আমি নিজের ব্যাটিংয়ে আগ্রাসন বজায় রাখতে গিয়ে বহু বার জঘন্য ভুল করেছি।
কিন্তু সচিনের ব্যাটিংয়ে তেমন খুঁত কোনও দিন খুঁজে পাইনি। এবং ওর প্রতিটি সেঞ্চুরিতেই ওর এই বিশেষ গুণের ছাপ রয়েছে।
ভারতীয় ক্রিকেটকে সচিন একটা অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। অবশেষে ও যে বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় দলের অংশ হয়ে উঠতে পেরেছিল, এতে আমি খুব খুশি হয়েছি। এই মুকুটটাই তো ওকে সব চেয়ে বেশি মানায়। কারণ, ‘হি ইজ দ্য কিং অব ব্যাটসম্যানশিপ’। |
(সচিন, ক্রিকেটার অফ দ্য সেঞ্চুরি, বিমল কুমার, পেঙ্গুইন বুকস, মূল্য: ২৯৯ টাকা) |
|
|
|
|
|