|
|
|
|
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: মত গবেষকদের |
|
সরকারি ফাঁসে ঝুলছে নয়া
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নীতির ভাগ্য
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
|
বছর কয়েক আগে গবেষণাপ্রকল্পের জন্য একটি ব্যাটারি কিনতে গিয়েছিলেন রাজ্যের এক বিজ্ঞানী। সরকারি নিয়ম মেনে তাঁকে তিনটি কোটেশন জমা দিতে হয়। এবং সেই কোটেশন থেকে ৫০০ টাকায় অন্ধ্রপ্রদেশের একটি সংস্থার কাছ থেকে ব্যাটারি কেনেন তিনি। যদিও সেই ব্যাটারি ব্যবহার করে গবেষণায় আশানুরূপ ফল পাননি তিনি। তা হলে কিনলেন কেন?
ওই বিজ্ঞানী বলছেন, “সরকারি নিয়মে কোটেশন অনুযায়ী সব থেকে কম দামের জিনিসটি-ই কিনতে হয়। যদিও আমি জানতাম, ৫০০ টাকায় ভাল মানের ব্যাটারি মেলে না। তার দাম অন্তত ৮০০ টাকা হওয়া উচিত। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে নিয়ম ভাঙব কী করে?”
এটি একটি উদাহরণ। তবে বাস্তবে এমন হাজারো নিয়মের ফাঁস এড়িয়ে কাজ করতে হয় দেশের গবেষকদের। বিশেষ করে এ রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে এটা আরও প্রকট। এক তরুণ গবেষক বলেন, “একটা ল্যাপটপ কেনার অনুমতি জোগাড় করতে করতে গবেষণা প্রকল্পের অনেকটা সময় কেটে যায়।”
অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নীতিতে বলা হয়েছে, শিক্ষাজগতের সঙ্গে শিল্প সংস্থাগুলির যোগসূত্র বাড়াতে হবে। বিশেষ করে রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমন্ট-এর ক্ষেত্রে এটা বেশি জরুরি। তাঁদের মতে, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নত গবেষণা হলেও তা মানুষের ব্যবহারিক জীবনে ছাপ ফেলতে পারে না। শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগের ফলে তাঁরা নিজেদের পণ্যে ওই গবেষণার ফলকে ব্যবহার করবে। তবে লালফিতের ফাঁসে আটকে থেকে এই নীতি কতটা বাস্তবায়িত করা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, এমন নিয়মের জেরে শিল্প সংস্থাগুলি কাজ করতে আগ্রহ হারায় বলে
তাঁদের অভিমত।
একই কথা উঠে এসেছে বুধবার সল্টলেকের সত্যেন্দ্রনাথ বসু ন্যাশনাল সেন্টার ফর বেসিক সায়েন্সেস-এর এক আলোচনা সভাতেও। ওই সভায় ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিকাল বায়োলজির অধিকর্তা সিদ্ধার্থ রায় জানান, গবেষণা প্রতিষ্ঠানে সরকারি নিয়মকানুনের বেড়াজালের ফলে সামান্য কাজ করতেও বহু দিন সময় লেগে যায়।
তবে এর পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে গবেষণা প্রকল্প বাছার সময় মানুষের দৈনন্দিন ব্যবহারের কথা মাথায় রাখা জরুরি বলে অপ্রচলিত শক্তি বিশেষজ্ঞ শান্তিপদ গণচৌধুরী মনে করেন। তিনি বলেন, “সমাজের বড় অংশের উপর প্রভাব ফেলবে এমন প্রকল্পগুলিই শিল্প সংস্থাগুলির কাছে গ্রহণযোগ্য হয়।”
এর বাইরে গবেষকদের একাংশের দাবি, শিল্প সংস্থাগুলিরও রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর ক্ষেত্রে বেশি করে নজর দেওয়া জরুরি। এই মতের সমর্থন মিলেছে টাটা স্টিল প্রসেসিং এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সন্দীপন চক্রবর্তীর কথাতেও। তিনি জানান, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম ১৫০০টি সংস্থার মধ্যে মাত্র ১৪টি ভারতীয় সংস্থা রয়েছে। পাশাপাশি তাঁর দাবি, দেশের নামী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে গবেষণার ইচ্ছে কমছে। সন্দীপনবাবু বলেন, “আইআইটি খড়্গপুরের মতো প্রতিষ্ঠানে ১০ হাজার স্নাতক স্তরের পড়ুয়াদের মধ্যে ৫০০ জন পিইচ ডি করতে যান।” কেন?
গবেষকদের বক্তব্য, অনেক নামী সংস্থাই অনেক সময়ই গবেষক ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়োগ করতে চান না।
যা প্রকারান্তরে মেনে নিয়েছেন সন্দীপনবাবুও।
তা হলে কী ভাবে বাস্তবায়িত হবে নতুন বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নীতি? বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, যোগ্য বিজ্ঞানীদের নিয়োগের পাশাপাশি সরকারি আমলাতন্ত্রে ফাঁস সরানো জরুরি। তা না হলে টাকা পয়সার জটিল হিসেবের ফাঁসে গবেষণাই ব্যাহত হবে। এ ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলিকে মডেল করা উচিত বলে তাঁরা মনে করছেন। পাশাপাশি এক পরিবেশ বিজ্ঞানী জানান, এ দেশে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা নিয়ে ছুৎমার্গ রয়েছে। তাঁরা সরাসরি কোনও সরকারি প্রকল্পে কাজ করতে পারেন না। এই ধারণারও বদল হওয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। |
|
|
|
|
|