বিনোদন বাবুরা এয়েচেন আকালের ছবি তুলতে
ত্যজিৎ-ঋত্বিকের পাশাপাশি একমাত্র মৃণাল সেনই নানান ভারতীয় ভাষায় ছবি করেছেন। অনেকেই প্রশ্ন করেছেন ‘আপনি কেন এত বিভিন্ন ভাষায় ছবি করেন?’ উত্তরে মৃণালবাবুর মন্তব্য ‘আমি দারিদ্র নিয়ে ছবি করি। আফ্রিকাতে গিয়ে সোয়াহিলি ভাষায় ছবি করতেও আমার কোনও অসুবিধে হবে না...।’
আর এই দারিদ্রকে ধরতে নগর উপকণ্ঠের অলিগলি ছাড়িয়ে বারবার গ্রামের দিকে মুখ ফিরিয়েছেন মৃণাল। বাংলার গ্রাম তো বটেই, বাদ যায়নি অন্য প্রদেশও।
‘মাটির মনিষ’ করার জন্যে ওড়িশার গ্রামে, ‘ভুবন সোম’ করার সময়ে গুজরাতের গ্রামে, ‘ওকা উড়ি কথা’ বা ‘কফন’ করার সময়ে তেলেঙ্গানার গ্রামে গিয়েছিলেন মৃণাল সেন। তেলেঙ্গানায় তাঁকে সর্বক্ষণ সাহায্য করার জন্যে থাকতেন কৃষ্ণমূর্তি। ভদ্রলোককে একদিন চিত্রনাট্যের অংশ পড়ে শোনাচ্ছেন মৃণালবাবু, সেখানে একটা চরিত্র সম্পর্কে লেখা ছিল: লোকটা সারাদিন খায়-দায় আর মোষের মতো পড়ে-পড়ে ঘুমোয়। শুনেই কৃষ্ণমূর্তি খেপে আগুন, বললেন ‘আপনি শহরের লোক, গ্রামের কিস্যু জানেন না। এখানকার গ্রামের লোকেদের জিজ্ঞাসা করে দেখুন তো, ওরা কখনও মোষকে অলস বা অকর্মা দেখেছে কি না। মোষ আমাদের সব রকম কাজের নিত্যসঙ্গী।’ চিত্রনাট্য বদলে ফেললেন মৃণাল সেন।
‘আকালের সন্ধানে’ ছবিতে স্মিতা পাতিল। ছবি মৃণাল সেনের সৌজন্যে।
তৃতীয় ছবি ‘বাইশে শ্রাবণ’ থেকেই গ্রাম, গ্রামের মানুষজন, তাদের দারিদ্র, বেঁচে থাকা, সম্পর্কের ওঠা-পড়া নিয়ে ছবি করে গিয়েছেন মৃণাল সেন। আবার শেষ ছবি ‘আমার ভুবন’-এও ফিরে এসেছে সেই গ্রাম। পঞ্চাশের দশকের শেষে তৈরি ‘বাইশে শ্রাবণ’ এক মাঝবয়সী মানুষের সঙ্গে তার থেকে বয়সে বহু ছোট একটি মেয়ের দাম্পত্য নিয়ে ছবি। কলকাতা থেকে অনেক দূরের একটা গ্রামে ওই ছোট্ট সংসারে এক দিন ঘনিয়ে এল ১৯৪৩-এর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। কিন্তু দুর্ভিক্ষে কত লোক অনাহারে মারা গেল তা নিয়ে তাঁর ছবি নয়। তাঁর ছবি এই কর্কশ দুর্ভিক্ষ কখন কী ভাবে ওই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সম্পর্কটাকে তিক্ত করে তুলল তা নিয়ে। পরস্পরের মধ্যে যেন তখন নরকের পরিবেশ, অবস্থার চাপে পারস্পরিক সম্ভ্রমটুকুও হারিয়ে ফেলল তারা। সময়টা ছিল বড় নিষ্ঠুর।
আবার নতুন শতকের গোড়ায় যখন ‘আমার ভুবন’ করছেন, সেখানে কলকাতার অদূরে একটা গ্রামে সখিনা-মেহেরের দাম্পত্যে দারিদ্র, মেহেরের জোত-জমির মালিকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব, অসম্ভব পরিশ্রম করে তার রোজগারের অনুষঙ্গ আনছেন বটে; কিন্তু এ সব কোনও কিছুই যে ওই দম্পতিকে কাবু করতে পারছে না, ওরই মধ্যে যে তারা লড়াই করে বাঁচছে, নিষ্ঠুর সময়ের মোকাবিলা করছে, তারই টুকরো টুকরো দৃশ্য বুনে ছবি শেষ করেন মৃণাল সেন। গ্রামীণ অর্থনীতির অসঙ্গতি অন্তত তাঁর শেষ ছবিতে সখিনা-মেহেরর লাবণ্যময় দাম্পত্যে চিড় ধরাতে পারে না।
ফিল্ম-জীবনের এই শুরু আর শেষের মধ্যপর্বে মৃণালবাবু আশির দশকের গোড়ায় ফের গ্রাম নিয়ে যে ছবিটি করেছিলেন, ‘আকালের সন্ধানে’, সেটি দুনিয়া জুড়ে হইচই ফেলেছিল। দেশে অজস্র সম্মানের সঙ্গে বার্লিন চলচ্চিত্রোৎসবে ‘রৌপ্য ভল্লুক’ও পায় ছবিটি। অনেকটা যেন নিজেকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েই মৃণালবাবুর এই ছবি। ফিল্মের মধ্যেই ফিল্ম। এক ছবি-করিয়ে তার ফিল্ম-ইউনিট নিয়ে একটি গ্রামে উপস্থিত হয়, সেখানে তেতাল্লিশের দুর্ভিক্ষের পটভূমি তৈরি করে ছবি করবে বলে। কিন্তু ছবি করতে-করতে পরিচালক বুঝতে পারে, তেতাল্লিশের পুরো ইতিহাসটাই ওই দারিদ্রলাঞ্ছিত গ্রামে ঢুকে পড়ে। পরাধীন বাংলা আর স্বাধীন বাংলা একাকার হয়ে যায়। ওই গ্রামের একটি চরিত্র তো বলেই ফেলে: ‘বাবুরা এয়েচেন আকালের ছবি তুলতে। আকাল তো আমাদিগের সব্বাঙ্গে।’ ছবির কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই গোটা ফিল্মের দলটা ফিরে আসে কলকাতায়।
একদিন হুগলির সোমরাবাজারে একটি দৃশ্যের শু্যটিং চলছে ‘আকালের সন্ধানে’-র। স্মিতা পাটিল অভিনয় করেছিলেন ছবিটিতে, কিন্তু তাঁর ওই শু্যটিংয়ে থাকার কথা নয়, অথচ চলে এসেছেন। দাঁড়িয়ে আছেন ঠিক মৃণাল সেনের পিছনে, তাঁর কাঁধে হাত রেখেই শু্যটিং দেখছেন। দৃশ্যটা এ রকম হঠাৎ বিধবা হওয়ার পরে এক মহিলাকে অন্য দু’জন বিধবা আচার-বিচার মেনে স্নান করিয়ে দিচ্ছেন, সদ্য-বিধবাটি ডুকরে কেঁদে উঠে বলছেন: ‘আমি আর ও-ঘরে যেতে পারব না।’ হঠাৎ একটা ভাইব্রেশন টের পান মৃণালবাবু, ডান দিকে অল্প ঘাড় ঘুরিয়ে দেখেন, তাঁর কাঁধে বাঁ-হাতটা চেপে ফুলে-ফুলে কাঁদছেন স্মিতা।
আজও গ্রাম নিয়ে ছবি কথা উঠলে মৃণাল সেন বলেন, ‘প্রতিকূল পরিবেশেও সেখানকার মানুষগুলোর সফিসটিকেশন, সেল্ফ-ডিগনিটিটাই আমাকে টানত সবচেয়ে বেশি।’

কানে আরাধ্যাও
এ বারও কান চলচ্চিত্র উৎসবের রেড কার্পেটে হাঁটতে দেখা যাবে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনকে। তবে প্রাক্তন বিশ্বসুন্দরী এ বার একা নন। তাঁকে এ বার সঙ্গ দিতে চলেছে তাঁর মেয়ে আরাধ্যা বচ্চন। একটি সূত্রের খবর অন্তত সে রকমই। ১৮ মাসের আরাধ্যাকে এ বার দাদু অমিতাভ বচ্চন আর মা ঐশ্বর্যার সঙ্গে দেখা যেতে পারে কানে। তবে আরাধ্যার কান যাত্রা এই প্রথম নয়। গত বার মায়ের সঙ্গে কানে গিয়েছিল পাঁচ মাসের ছোট্ট আরাধ্যা। তবে সে বার তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। কিছু দিনের মধ্যেই মুক্তি পেতে চলেছে অমিতাভের প্রথম হলিউড ছবি ‘দ্য গ্রেট গ্যাটসবি’। তার জন্য রেড কার্পেটে হাঁটবেন অমিতাভও।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.