বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: মাজরা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ
বোরো চাষের জমিতে পাতা ফাঁদ,
ছুটে এসে আটকে গেল শত্রু পোকা

ভাল ভাবে নিরীক্ষণ। প্রয়োজন হলে নির্দিষ্ট সময়ে বার দু’য়েক ওষুধ। আর লাঠির মাথায় ছোট্ট ফাঁদ। ব্যস। এতেই কাবু মাজরা পোকা। বিজ্ঞানীদের এই কয়েকটি পরামর্শ মেনে সোনালি খেত দেখে মুখে চওড়া হাসি ফুটেছে হুগলির চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের বেশ কিছু ধানচাষির।
কৃষি দফতর সূত্রের খবর, ফি-বছর মাজরা পোকায় জমির পর জমি ধান নষ্ট হয় চাষিদের। শুধু কীটনাশক ছড়িয়ে কাবু করা যায় না মাজরার পালকে। ২০১১ সালে পাণ্ডুয়ায় এই পোকার আক্রমণে ধান নষ্ট হওয়ায় এক চাষি আত্মঘাতী হন বলে অভিযোগ উঠেছিল। সেই হুগলি জেলাতেই কেন্দ্রীয় একটি প্রকল্পে মাজরা পোকা নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু হয়েছে। চুঁচুড়া ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা ওই কাজের তদারকি করছেন। বোরো চাষে সাধারণত ডিসেম্বর মাসে বীজ ফেলা হয়। রোয়া হয় ৪০-৫০ দিন পরে। মাজরা পোকার আক্রমণ শুরু হয় ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে। পোকার আক্রমণে গাছের ডগা শুকিয়ে যায়। ফলে, গাছ বাড়ে না। আবার, গাছে শিষ (কাশথোর) এলে তার প্রধান অংশ পোকা খেয়ে ফেলে। ফলে, শিষ পচে সাদা হয়ে যায়।
ধান্য গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানানো হয়েছে, পোলবা-দাদপুর এবং চুঁচুড়া-মগরা ব্লকে বোরো চাষে ওই পরীক্ষা চলছে। পোলবা-মগরা ব্লকের ২০ জন চাষির জমি চিহ্নিত করা হয়। প্রথমেই সংশ্লিষ্ট চাষিদের সঙ্গে কথা বলে বীজ বপনের সময়সীমা এগিয়ে আনা হয়। বিজ্ঞানীদের দাবি, এতে মাজরা পোকার আক্রমণের সম্ভাবনা অনেকটা কমে। কেননা, এক মাস আগে চাষ শুরু হওয়ায় মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে গাছের শিষ বেশ শক্ত হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় সরকারের ‘ন্যাশনাল সেন্টার ফর ইনটিগ্রেটেড পেস্ট ম্যানেজমেন্ট’ (আইসিএআর)-এর অধিকর্তা চিরন্তন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ফসলের উপর সব সময় নজর রাখতে হবে। অস্বাভাবিকতা থাকলে তবেই ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্ন। সবটাই করা হবে সংশ্লিষ্ট এলাকার জলবায়ু বিচার করে।”
বিজ্ঞানীরা বলছেন, মাজরায় ক্ষতির নির্দিষ্ট মাত্রা (ইকনমিক থ্রেসোল্ড লেভেল) টপকালে ধান রোয়ার ২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ‘ক্লোরানট্রানিলিপ্রোল’ দানা ওষুধ দেওয়া হয়। এর ২৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে একই জাতীয় তরল ওষুধ ছড়ানো হয়।
এ ছাড়াও, মাজরা প্রতিরোধে ‘ফেরমোন ট্র্যাপ’ (যৌন জাল বা ফাঁদ) ব্যবহার করা হচ্ছে। এই পদ্ধতিতে জমিতে লাঠির মাথায় একটি প্লাস্টিকের ফাঁদ বসানো হয়। ওই ফাঁকে বিশেষ রাসায়নিক থাকে। তার আকর্ষণে পুরুষ মাজরা পোকা এসে আটকে পড়ে। চিরন্তনবাবু জানান, পশ্চিমবঙ্গে হেক্টর প্রতি (সাড়ে ৭ বিঘা) ৫টি এমন জাল লাগালেই যথেষ্ট। পাশাপাশি, জমিতে শুকনো গাছের ডাল পুঁতে রাখা হচ্ছে, যাতে পাখি এসে বসতে পারে। কেননা, কিছু পাখি মাজরা-সহ অন্য শত্রু পোকা খেয়ে ফেলে।
মগরার জয়পুর গ্রামের চাষি হেমন্ত ঘোষ, বরুণ ঘোষদের জমিতে এমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে। দিন কয়েক আগে চিরন্তনবাবু, ওই সংস্থার কীট বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক রাজকুমার তনওয়ার এবং অন্য অফিসারেরা দিল্লি থেকে সরেজমিনে তাঁদের জমি দেখে যান। হেমন্তবাবু বলেন, “২০১১ সালে মাজরায় পুরো জমির ধানই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। গত বছর বিজ্ঞানীদের কথা শুনে চাষ করায় কিছুটা উন্নতি হয়। এ বার পুরোপুরি নিস্তার পেয়েছি।” একই বক্তব্য বরুণবাবুরও।
ওই এলাকারই বাসিন্দা অশোক ঘোষ প্রচলিত পদ্ধতিতেই চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “এ বার মাজরা পোকার আক্রমণ তেমন হয়নি ঠিকই, তবে প্রতিবারেই এর ভয় থাকে। গত বছরই তো সব ধান নষ্ট হয়ে গিয়েছিল মাজরায়। বিজ্ঞানীদের কথা মতো চাষ করলে যদি ঝক্কি কমে তবে আগামী বার থেকে তাই করব।” একই বক্তব্য বৈদ্যবাটির ধানচাষি কেদার ঘোষেরও। তারকেশ্বরের কুলতেঘড়ি গ্রামের বাসিন্দা অজিৎ ঘোষ ১৮ বিঘে জমিতে চাষ করেছেন। তিনি বলেন, “প্রতি বারেই মাজরায় কিছু না কিছু ক্ষতি হয়। বিজ্ঞানীদের পরামর্শ পেলে নিশ্চয়ই প্রয়োগ করার চেষ্টা করব।”
নির্দিষ্ট জমিগুলিতে সপ্তাহে তিন দিন সমীক্ষা চালাচ্ছেন ধান্য গবেষণা কেন্দ্রের তিন বিজ্ঞানী সন্তোষকুমার রায়, সীতেশ চট্টোপাধ্যায় এবং চিরশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়। পাশাপাশি অন্যান্য জমিতে গিয়ে (রোভিং সার্ভে) চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা। প্রতি সপ্তাহে সংগৃহীত তথ্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রীয় সংস্থার ওয়েবসাইটে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.