বিয়ে নয়, আগে পড়াশোনা এই জেহাদ দেখিয়ে রাজ্যের অনেক নাবালিকাই ইতিমধ্যে নিজেদের বিয়ে রুখে দিয়েছে। সেই তালিকায় শেষ সংযোজন খানাকুলের রৌশনারা খাতুন। সৎমায়ের অত্যাচারও তাকে দমাতে পারেনি। সে এখন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে হাসপাতালে। বিয়েতে প্রতিবাদ জানানোয় সৎমা, সৎ দিদিমা এবং বাবা তাকে পুড়িয়ে মারতে চেয়েছিল বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবারের ওই ঘটনার পরেই গ্রাম ধরে ধরে নাবালিকা বিয়ে রুখতে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। কয়েক দিন আগে থেকে সেই সচেতনতার কাজই শুরু করেছে শ্রীরামপুর মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর। এ জন্য তারা বেছে নিয়েছে নাটক।
রৌশনারার ঘটনার কয়েক দিন আগেই শেওড়াফুলির নেতাজি বালিকা বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষিকা চন্দনা বন্দ্যোপাধ্যায় মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের আধিকারিক লিপিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোনে জানান, স্কুলের নবম শ্রেণির দুই ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্কুল ঘুণাক্ষরেও তা জানতে পারেনি। এর আগেও চোখের সামনে অনেক ছাত্রীর অল্প বয়সে বিয়ে হতে দেখেছেন তিনি। কী ভাবে বাল্যবিবাহ আটকানো যায়, তা নিয়ে ভেবে দেখতে অনুরোধ জানান তিনি। এর পরেই নড়েচড়ে বসে মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর।
কয়েক দিন আগে শেওড়াফুলির সত্যজিৎ রায় ভবনে ওই দফতরের উদ্যোগে ওই সচেতনতা বৃদ্ধির কর্মসূচির প্রারম্ভিক অধিবেশন হয়। ‘সুখচর পঞ্চম’ গোষ্ঠী পরিচালিত এবং কচিকাঁচাদের অভিনীত ‘পুতুলের বিয়ে’ নাটকের মাধ্যমে গোটা বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। নাটকে এই বার্তা দেওয়া হয়, সামাজিক যাঁতাকলে কী ভাবে নাবালিকাদের বিয়ে হয়। ওই কর্মসূচিতে বৈদ্যবাটি পুর এলাকার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, পুরসভার কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন। বৈদ্যবাটির পুরপ্রধান অজয়প্রতাপ সিংহ এ ব্যাপারে নিজের অভিজ্ঞতার কথা ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের উপ-তথ্য অধিকর্তা (গ্রামীণ) গৌতম গঙ্গোপাধ্যায়, হুগলি জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক দেবাশিস রায়। তাঁদের মতে, বাল্যবিবাহ, নারীপাচারের মতো সামাজিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে সমাজের নানা স্তরের ভূমিকা পালন করা উচিত। ছেলেমেয়েদের সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলের রাখার প্রয়োজনীয়তার উপরেও তাঁরা জোর দেন। আজ, সোমবার শেওড়াফুলি নেতাজি বালিকা বিদ্যামন্দিরে কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে নাটক পরিবেশন করবে দুর্গাপুরের সংগঠন ‘সম্ভাবনা’।
লিপিকাদেবী জানান, পুর-এলাকার ১৪টি মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ধারাবাহিক ভাবে নাটক পরিবেশিত হবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে। উদ্দেশ্য সপ্তম থেকে দ্বাদশ শ্রেণির ছেলেমেয়েদের ব্যক্তিত্ব বিকাশ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো। তা ছাড়াও মহকুমার বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকাতেও এ ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পাশাপাশি স্কুলপড়ুয়া এবং অভিভাবকদেরও তাতে সামিল করার চেষ্টা করা হবে। এ ব্যাপারে সমাজের বিভিন্ন স্তরের লোকজনকে নিয়ে একটি বিশেষ কমিটিও তৈরি করা হবে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, বৈদ্যবাটির কিছু জায়গায় অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা এখনও রয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা পুলিশ-প্রশাসনের নজরে আসে না। চুপিচুপি বিয়ের পর্ব সারা হয়। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিজ্ঞতা বলছে, বহু ক্ষেত্রেই এ ব্যাপারে অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করেও তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন। দারিদ্রের দোহাই দিয়ে স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন বাবা-মায়েরা। এর কুফল সম্পর্কে তাঁরা আদৌ ভাবছেন না। আবার পালিয়ে বিয়ে করা বা পাচারের উদাহরণও কম নয়। |
শেষ হল নাট্যোৎসব
নিজস্ব সংবাদদাতা • আসানসোল |
দু’দিনের নাট্য উৎসব শেষ হল কুলটির মিঠানি গ্রামে। শনিবার শুরু হওয়া এই নাট্যোৎসবের উদ্যোক্তা ছিল স্থানীয় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বার্ণিক’ নাট্য সংস্থা। মানবপুতুল আঙ্গিকে মঞ্চস্থ ‘লীলাবতী’ নাটকটি দর্শকদের আনন্দ দিয়েছে। বহুরূপী পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষজনের কাহিনী নিয়ে নাটক ‘অরূপকথা’ মঞ্চস্থ করে সিউড়ির আত্মজা নাট্যসংস্থা। এক দর্শক সুবল মুখোপাধ্যায় জানান, শিল্পাঞ্চলের সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নাট্য উৎসবের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। সেদিক থেকে মিঠানি গ্রামে আয়োজিত দু’দিনের এই নাট্য উৎসব এক অন্য মাত্রা এনে দিয়েছে। |
তাঁর ‘কবিতা ক্লাব’-এর ওয়েবসাইটের থিম সঙ্গীত গাইছেন সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়।
সঙ্গে ক্লাবের অন্য সদস্যেরা। রবিবার, বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |