|
|
|
|
|
|
|
এই প্রথম একক অ্যালবাম |
শিল্পীর মর্যাদা |
উনিশ শতকের কলকাতায় কাঠ বা ধাতুখোদাই শিল্পীর সংখ্যা বড় কম ছিল না। গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের অন্নদামঙ্গল (১৮১৬) দিয়ে বাংলা গ্রন্থচিত্রণের সূচনা, শতকের শেষ পর্বে বাংলা বই, পঞ্জিকা আর পত্রপত্রিকা মিলিয়ে ছবিতে ছবিতে ছয়লাপ। কিন্তু শিল্পীদের নাম, আর কারও কারও ঠিকানা ছাড়া তাঁদের সম্বন্ধে আমরা এখনও অন্ধকারে। রামচাঁদ রায় থেকে শুরু করে রামধন স্বর্ণকার, হীরালাল কর্মকার, নৃত্যলাল দত্ত, রূপচাঁদ আচার্য, বিশ্বম্ভর আচার্য-- কত শিল্পীর কাজের কথা উল্লেখ করেছেন গবেষকরা, আলাদা করে সংকলিতও হয়েছে অলংকরণ/ বটতলা থেকে হালফিল (সম্পা: প্রণবেশ মাইতি, সপ্তর্ষি), ন্যাড়া বটতলায় যায় ক’বার (গৌতম ভদ্র, ছাতিম), উনিশ শতকের বাংলা গ্রন্থচিত্রণ-এর (ভূমিকা: স্বপন বসু, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ) মতো বইয়ে। কিন্তু এত দিনে, উনিশ শতকের শেষ দশকে কাজ শুরু করা এমন এক কাঠখোদাই শিল্পীর জীবন সহ সৃষ্টির সামগ্রিক পরিচয় ধরা পড়ল অসিত পালের উনিশ শতকের কাঠ খোদাই/ শিল্পী প্রিয়গোপাল দাস (সিগনেট প্রেস/ একটি আনন্দ প্রকাশনা) বইয়ে, যিনি প্রথাগত শিক্ষা ছাড়াই বর্ধমানের বেরুগ্রাম থেকে কলকাতায় এসে পরিণত হয়েছিলেন প্রতিষ্ঠানে। ত্রিশ বছর বয়সেই তৈরি করেন নিজের স্টুডিয়ো। পত্রিকার নামলিপি, অলংকরণ, গ্রন্থচিত্রণ, পঞ্জিকা থেকে সব ধরনের পণ্য প্রচারের ছবি সহ বিজ্ঞাপন তৈরিতে প্রিয়গোপাল (১৮৭০-১৯২৮) ছিলেন একাই একশো। ঠাকুরমার ঝুলি-র ছবির এনগ্রেভিং তাঁরই করা। তাঁর মৃত্যুর পর ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ লেখে, ‘...তিনি প্রায় লক্ষাধিক টাকার সম্পত্তি অর্জন করিয়া যান, উড্ এনগ্রেভিং করিয়া আর কোনও ব্লক মেকার এত সম্পত্তি এ দেশে করিতে পারেন নাই।’ উপেন্দ্রকিশোর তখন হাফটোন ব্লকে যুগান্তর এনেছেন, তবু অসামান্য দক্ষতায় তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাজ করেছেন প্রিয়গোপাল। এ বইয়ের চারশোরও বেশি ছবিতে সে দক্ষতার প্রমাণ জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
উডকাট প্রিন্টস অব নাইনটিন্থ সেঞ্চুরি ক্যালকাটা (সিগাল, ১৯৮৩) বইয়ে যে সলতে পাকানো শুরু করেছিলেন শিল্পী অসিত পাল, এ বই সে কাজ অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গেল। ১০ মে সন্ধে ৬ টায় স্টার মার্ক-এ (সাউথ সিটি মল) উনিশ শতকের কাঠ খোদাই বইটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন ললিতকলা আকাদেমির অধ্যক্ষ কল্যাণকুমার চক্রবর্তী, থাকবেন লেখক সহ প্রণবরঞ্জন রায় গণেশ হালুই গৌতম ভদ্র। সঙ্গে বইটির প্রচ্ছদ এবং একটি কাজের নমুনা।
|
সঙ্গীতরসিক |
দেড়শো বছর বয়স হলে কী হবে, আজও উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীকে (জ. ১৮৬৩) শুধুই শিশুসাহিত্যিক-এর তকমায় আটকে রাখা হচ্ছে। অথচ তিনি বাংলার মুদ্রণশিল্পে হাফটোন-এর প্রবর্তন করে সাড়া ফেলেছিলেন। ফোটোগ্রাফিরও চর্চা করতেন। আর ছিল সঙ্গীত সাধনা। এই সঙ্গীতরসিক উপেন্দ্রকিশোরকেই আবিষ্কারের চেষ্টায় সূত্রধর প্রকাশ করছে তাঁর সঙ্গীত-সংক্রান্ত রচনার একটি সংকলন: ভারতীয় সঙ্গীত (সম্পা: দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়)। প্রবাসী’তে চার পর্বে এ নিয়ে লিখেছিলেন তিনি। মূল লেখার সঙ্গে থাকছে একাধিক সংযোজন। সঙ্গীত ও চিত্রবিদ্যা নিয়ে তাঁরই আর-একটি রচনা, রবীন্দ্রনাথের তিনটি গানের ইংরেজি অনুবাদ আর তাঁর লেখা ব্রহ্মসঙ্গীত। সেগুলির মধ্যে একটি, ‘জাগো পুরবাসী ভগবত-প্রেম-পিয়াসী’, ব্রাহ্মসমাজে গেয়েছিলেন সুপ্রভা রায় বিজয়া রায় ও ইন্দুলেখা ঘোষ। সুশান্তকুমার চট্টোপাধ্যায়ের সৌজন্যে সে গানটির সিডি-ও থাকছে বইটির সঙ্গে। রয়েছে দুর্লভ দুষ্প্রাপ্য নানা আলোকচিত্র। ১২ মে, তাঁর জন্মদিনে, বিধান সরণিতে শিবনাথ শাস্ত্রী প্রতিষ্ঠিত সাধারণ ব্রাহ্মসমাজ উপাসনা মন্দিরে সন্ধে ৬টায় বইটি প্রকাশ করবেন রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। সভামুখ্য অনুপ মতিলাল, ব্রহ্মসঙ্গীত গাইবেন সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়। আর তাঁর মুদ্রণশিল্প ও পুরাণের নতুন নির্মাণ নিয়ে বলবেন যথাক্রমে দেবাশিস মুখোপাধ্যায় ও গোপা দত্ত ভৌমিক। ছবিতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে প্রিয়নাথ সেন ও উপেন্দ্রকিশোর (ডান দিকে)।
|
মেলাপক্ষ |
জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে এ বার তাঁদের লোকশিল্পের পসরা নিয়ে থাকছেন শবর শিল্পীরা। ২৭ বছরের ইতিহাসে প্রথম। ১৯৮৬-তে শুরু হয়েছিল ঠাকুরবাড়িতে লোকশিল্প ও কারুকৃতি মেলা, আয়োজনে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য নৃত্য নাটক সংগীত ও দৃশ্যকলা অ্যাকাডেমি। এ বার সেই মেলা শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার, চলবে ১০ মে পর্যন্ত। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার লোকশিল্প নিয়ে আয়োজিত মেলাটির সূচনা করবেন শিল্পী পার্থপ্রতিম দেব, সভাপতিত্ব করবেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সব্যসাচী বসু রায়চৌধুরী। এ দিকে কবিপক্ষে রবীন্দ্রসদন কর্তৃপক্ষ ও পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার্স গিল্ডের আয়োজনে ৯-২৪ মে চলবে বিশেষ বইমেলা। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন ঘিরে গ্রন্থপার্বণের স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। অন্তত এ ভাবেও সে স্বপ্ন রূপ পাচ্ছে, আশার কথা।
|
সাড়ে পাঁচশো সন্ধে |
কুড়ি বছর আগের ২২ এপ্রিল। প্রথম অভিনয় হয়েছিল মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের একটি নাটক ‘মুষ্ঠিযোগ’-এর। আর এই ২৭ এপ্রিল মধুসূদন মঞ্চে হয়ে গেল তার ৫৫১তম অভিনয়! এই একটি নাটককে ঘিরে আর এক রূপে গ্রুপ থিয়েটারের বিনিময় প্রথা চলেছিল একদা। সংস্তব-এর এই প্রযোজনায় যুক্ত থেকেছেন বিভাস চক্রবর্তী, অরুণ মুখোপাধ্যায় ও তড়িৎ চৌধুরী। প্রায় পঁয়ত্রিশ জন কুশীলব ও নেপথ্যকর্মীর এই নাটকে এই দু’দশকের মধ্যে পরিবর্তন হয়েছে অনেক। তবু অপরিবর্তনীয়ও রয়ে গিয়েছেন কেউ কেউ। যেমন স্বপন রায় বিশেষ এক চরিত্রে অভিনয় করে চলেছেন সেই প্রথম দিন থেকে। দীর্ঘদিন ধরে আলোয় আছেন বাদল দাস। এ নাটকের মঞ্চ বিভাস চক্রবর্তী, আবহ অরুণ মুখোপাধ্যায়ের। অভিনয় ও নির্দেশনায় দ্বিজেন বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্যতিক্রমী বইকী।
|
আলপথ |
খুব ছোটবেলায় স্কুলে নাটক করে পুরস্কার মেলে। তার পর থেকেই নেশা ধরে যায় নাটকের। পরের বছরই নাটকের দলে অভিনয় শুরু। ক্রমে ক্যালকাটা গ্রুপ থিয়েটার, বিজ্ঞাপন, যাত্রা, সিরিয়ালে দেখা যেতে থাকে অলোক দেবনাথকে। কিন্তু তাঁর আসল পরিচিতি মেক-আপ শিল্পী হিসেবে। রুজির টানে এক সময় সাজসজ্জাকেই পেশা করে নেন। তাই বলে অভিনয়কে ভুলে যাননি। পাড়ার ক্লাব, অফিস ক্লাবের নাটকে নিয়মিত নির্দেশনা দিয়েছেন। বহু দিনের ইচ্ছে নিজে নাটকের দল গড়বেন। গত বছর মে মাসে তৈরি হয় তাঁর নিজস্ব দল ‘আলপথ’। নাট্যদলের জন্মদিনে আয়োজন করা হয়েছে নাট্যোৎসবের। বরানগর রবীন্দ্রভবনে ৭-১১ মে চলবে উৎসব। উদ্বোধন করবেন সোহিনী সেনগুপ্ত। সংবর্ধনা জানানো হবে আলোকশিল্পী ভানু বিশ্বাসকে। দেখা যাবে কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন দলের নাটক।
|
নরেশ গুহ ৯০ |
বহু বিদেশি গল্পের অনুবাদের পাশাপাশি মৌলিক গল্পও লিখেছেন বিশিষ্ট কবি ও তুলনামূলক সাহিত্যের মনস্বী অধ্যাপক নরেশ গুহ, পারিবারিক সূত্রে তাঁর হলদে হয়ে যাওয়া পাণ্ডুলিপি উদ্ধার করে জানাচ্ছেন অহর্নিশ পত্রিকার সম্পাদক শুভাশিস চক্রবর্তী। নরেশবাবুর নব্বইতম জন্মবর্ষ উপলক্ষে তাঁর সাতটি অপ্রকাশিত গল্প সংকলিত হল শুভাশিস সম্পাদিত নরেশ গুহ ৯০: অহর্নিশ প্রণাম বইটিতে, সঙ্গে নরেশ গুহকে নিয়ে আলোচনা। শুরুতেই শুভাশিস জানিয়েছেন “এইগুলি প্রকাশ করলে তা ‘দুরন্ত দুপুর’-এর কবির প্রতি কোনো অবিচার করা হবে না, বরং পাঠকের কাছে গল্পলেখক নরেশ গুহর পরিচয়টি জোরের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা পাবে।” ১১ মে শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটায় জ্যোতির্ময়ী সেবা মন্দিরে (গড়িয়াহাট ট্রাম ডিপোর কাছে) বইটি প্রকাশ করবেন নবনীতা দেবসেন। কবিতা-গল্প-স্মরণকথার সঙ্গে থাকবে রাতুল চন্দরায়-এর রবীন্দ্রগান। সঙ্গের ছবিতে নরেশ গুহ (বাঁ দিকে) ও বুদ্ধদেব বসু।
|
দামিনী |
সমসাময়িক বিষয় নিয়ে হ্যান্ড-প্রেসে ছেপে চটজলদি ‘বোতল পুরাণ’ প্রকাশ করতেন দাদাঠাকুর। সুখের কথা এই অফসেটের যুগেও বইপাড়ার সেই সাম্প্রতিকতা অটুট। দিল্লির দামিনী-কাণ্ড নিয়ে সত্যম রায়চৌধুরী লিখেছেন দামিনী। কেন এমন বই? “সাম্প্রতিক ভারতবর্ষকে তোলপাড় করেছে এ ঘটনা। সারা দেশে দামিনী প্রবল আলোচিত। তাই আমার ভাবনাটা লিখেছি উপন্যাসের ঢঙে।” নিছক ইতিবৃত্ত নয়, আত্মকথার ধরনে ভয়ঙ্কর ঘটনাটি আর তাকে ঘিরে নানা টানাপড়েন বইয়ের বিষয়। সত্যমের গদ্যও সুখপাঠ্য। এবং, প্রকাশক পত্র-ভারতী-র হিসেব, সে বইয়ের প্রথম সংস্করণ এক মাসে বিকিয়েছে হাজার কপি। দ্বিতীয় সংস্করণও পাঁচশো ছাড়িয়েছে। কে বলে বইপাড়ায় ‘ভূত’-ই বিকোয় সবচেয়ে বেশি!
|
আত্মবিরোধী |
‘বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত যে মানুষটি তিনিই ব্যক্তিজীবনে পথ হাঁটলেন সম্পূর্ণ বিপরীত মুখে। এ স্ববিরোধের ঠিকানা খুঁজে পেতে গিয়ে হয়রান হতে হয় আমাদের।’ লিখতে লিখতে সাইফুল্লা, পনেরো বছর বয়সে কবির বড় মেয়ে মাধুরীলতার বিয়ে, বা এগারো বছর বয়সে তাঁর মেজো মেয়ের বিয়ের উদাহরণ টেনে এনেছেন। তথ্যসূত্র (সম্পা: সুব্রত রায়চৌধুরী) পত্রিকায় এ রকমই আরও মনস্ক নিবন্ধ, নানা বিশিষ্ট জনের। বিষয়: ‘আত্মবিরোধী রবীন্দ্রনাথ’। প্রামাণ্য দলিল-সহ কবিজীবনের নানা আত্মিক দ্বন্দ্ব বা স্ববিরোধিতার প্রসঙ্গ নিয়েই সংখ্যাটি। সম্পাদক ‘কথা শুরুর কথা’য় জানিয়েছেন: ‘আমাদের প্রত্যাশার রবীন্দ্রনাথ আর বাস্তবের রবীন্দ্রনাথের মধ্যে একটি বিরোধের বাতাবরণ তৈরি হয়। এক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ নিজেই হয়ে ওঠেন নিজেরই এক বিরোধী সত্তা।’ এ ভাবেই কবিকে এক পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে, ব্যক্তি ও কর্মজীবনে আবিষ্কারের অভিপ্রায়েই এ সংখ্যা।
|
ডাক্তারবাবু |
|
ছবি: শুভেন্দু চাকী |
আড়িয়াদহ দক্ষিণেশ্বর কামারহাটির মানুষ তাঁকে বিলক্ষণ জানেন। সাদা ধুতি, বুশ শার্টের দীর্ঘদেহী ডাক্তারবাবু। বহু দিন ধরেই অঞ্চলের হতদরিদ্র, দুঃস্থ মানুষের চিকিৎসায় ব্রতী। পরিমল রায় ’৫৫য় ডাক্তারি পাশ করে পরের বছরই চিকিৎসা শুরু করেন আড়িয়াদহে। পরে নিজের বাড়িতে চেম্বার খোলেন। সচ্ছল মানুষের জন্য ২ টাকা ফি (দশ জন পর্যন্ত), বাকি সব বিনামূল্যে। ২০০৪ পর্যন্ত এই ভাবেই চলে এসেছে তাঁর চিকিৎসা পরিষেবা। এখন ফি ২০ টাকা, তা-ও যিনি পারবেন তিনি দেবেন। এ ভাবেই চলেছে অর্ধশতকেরও বেশি পারিপার্শ্বিক সব কিছুর বিপরীতে এক চিকিৎসকের একক যাত্রা। মেডিকাল রিপ্রেজেন্টেটিভরা এলে লিটারেচার রেখে তাদের বিদায় দেন। ফ্রি স্যাম্পলও রাখেন না। অনেক বছর আগে এক এক্সরে সেন্টার কমিশন বাবদ ১৫ টাকা পাঠিয়েছিল। টাকাটা ফেরত দিয়ে ডাক্তারবাবুর ছোট চিঠি, ‘দয়া করে আমার রুগির ছবিটি যত্ন করে তুলে দেবেন, তা হলেই বাধিত হব। কোনও দিন টাকা পাঠাবেন না।’ ৮৩ বছরের পুরনো শরীর সায় না দিলেও আজও রোগী দেখায় খামতি নেই। প্রচার চাননি কোনও দিন, আজও বলেন, এমন কিছু করিনি বলার মতো।
|
আবোল তাবোল |
শুরুটা হয়েছিল বছর কুড়ি আগে, ‘গানের গুঁতো’ দিয়ে। দূরদর্শনে নববর্ষের বৈঠকে সুকুমার রায়ের ওই কবিতা রবীন্দ্রনাথের দেওয়া সুরে গাইলেন স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত। আর তখনই ভাবনাটা এল। পুরো ‘আবোল তাবোল’টাই গানে-কবিতায় করলে কেমন হয়? “ছোট্টবেলার সুকুমারপ্রেমটা তখন আরও এক বার জেগে উঠল। অবশ্য প্রথমে আবোল তাবোল নয়, হযবরল। ১৯৯৭-৯৮-এ হযবরল-র কিছুটা রেকর্ডিং হয়েছিল। পরে নানা কারণে সেটা প্রকাশিত হয়নি। কিন্তু সুকুমার রায়ের কবিতা জড়িয়ে ছিল আমাকে। আমার ‘অশোকরেণু’র ছোটদের নিয়ে পাঠ ও গানে তৈরি করছিলাম পুরো আবোল তাবোল-টাই,” বলছেন স্বাগতালক্ষ্মী। নিছক গানের পরে গান গেয়ে যাওয়া নয়, গান নিয়ে নতুন নতুন পরিকল্পনায় কাজ করতে চান তিনি। করেওছেন। ‘একলা গীতবিতান’ সেই উদ্যোগের ফসল। সে ভাবেই গানে ও ছড়ায় সুকুমার রায়ের সম্পূর্ণ আবোল তাবোল-এর উপস্থাপন করলেন সম্প্রতি, ‘প্যাঁচা কয় প্যাঁচানি’ অ্যালবামে (সারেগামা)। সুকুমার রায়ের জন্মের ১২৫ বছরে অন্য রকম প্রাপ্তি এই অ্যালবামে ১৩টি কবিতায় সুর দিয়েছেন, বাকি কবিতাগুলি পাঠে, সঙ্গীত আয়োজন-সহ। সঙ্গে অবশ্যই আছে তাঁর ছোটর দল। ওদের ছাড়া কি আবোল তাবোল জমে!
|
|
|
|
|
কল্পবিজ্ঞানী |
আর্থার সি ক্লার্কের সঙ্গে যখন মার্কিন দূতাবাসে আলাপ হয়েছিল, প্রথমেই জিজ্ঞেস করেছিলাম, ...কেন আপনি সায়েন্স-ফিকশন লেখা শুরু করলেন? উনি জবাবটা দিলেন খুব ছোট্ট: টু ইন্সপায়ার।’ বলছেন অদ্রীশ বর্ধন। বহু-কলমী লেখক প্রেমেন্দ্র মিত্রের কল্পবিজ্ঞান কাহিনির যখন রমরমা তখনও একে মূলত বলা হত ‘বিজ্ঞান-নির্ভর গল্প’। ‘কল্পবিজ্ঞান’ প্রতিশব্দটির উদ্ভাবক অদ্রীশ বর্ধনই। জন্ম এই শহরে, ১ ডিসেম্বর ১৯৩২। জীবনে বহু বার চাকরি বদল করেছেন। এক সময় চাকরি ছেড়ে পুরো সময়ের লেখক। কল্পবিজ্ঞানই তাঁর প্রথম প্রেম। সাড়া-জাগানো অনুবাদক গোয়েন্দা কাহিনিরও। ভারতের প্রথম কল্পবিজ্ঞান পত্রিকা ‘আশ্চর্য’-র ছদ্মনামী সম্পাদক তিনি। সত্যজিৎ রায়ের সভাপতিত্বে বিশ্বের প্রথম সায়েন্স-ফিকশন সিনে ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদকও। দীর্ঘকাল সম্পাদনা করেছেন ‘ফ্যানটাসটিক’ পত্রিকা। আকাশবাণীর ‘সাহিত্য বাসর’-এর জন্য প্রেমেন্দ্র মিত্র, অদ্রীশ বর্ধন, দিলীপ রায়চৌধুরী ও সত্যজিৎ রায় চার জনে মিলে লিখেছিলেন ‘সবুজ মানুষ’। আবার ধারাবাহিক অনুবাদ করেছেন কথাসরিৎসাগর, সে বই নতুন করে প্রকাশ করেছে পারুল। বাংলায় এখনও পর্যন্ত শার্লক হোমসের সামগ্রিক এবং সেরা অনুবাদের কৃতিত্ব তাঁরই। কুলদারঞ্জন রায়ের বাস্কারভিলের কুক্কুর-এর পর অদ্রীশ বর্ধনের শার্লক হোমস ফিরে এলেন (আলফা বিটা) বাঙালি পাঠকের কাছে হোমসকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। সে সব অনুবাদ নতুন সংস্করণে প্রকাশিত হয়েছে সম্প্রতি, দু’খণ্ডে (লালমাটি)। এ দিকে আনন্দ পাবলিশার্স খণ্ডে খণ্ডে প্রকাশ করছে তাঁর প্রোফেসর নাটবল্টুচক্র সংগ্রহ। এই বৈশাখে বেরোল তার দ্বিতীয় খণ্ডটি। আশিতে এসে বইপাড়ায় নতুন করে সুলভ হচ্ছে অদ্রীশ বর্ধনের সাড়া জাগানো লেখাগুলি, আনন্দের কথা, সন্দেহ নেই। |
|
|
|
|
|
|