বিনোদন:
বহুরূপীর নাট্যোৎসব |
|
পাঁচ দিনে পাঁচটি জেলার নাটক অ্যাকাডেমিতে |
পিনাকী গঙ্গোপাধ্যায় • কলকাতা |
|
জেলার বিভিন্ন নাট্য প্রযোজনাকে কলকাতার মঞ্চে সুযোগ করে দিতে ‘বহুরূপী’ তাদের ৬৫তম নাট্যোৎসবে নিজেদের প্রযোজনার সঙ্গে ফের সামিল করল জেলার প্রযোজনাগুলিকেও। ১ থেকে ৫ মে, পাঁচ দিন ধরে ‘অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস’-এ অনুষ্ঠিত এই উৎসবে যোগ দিয়েছিল বহরমপুর, মহিষাদল, হাবরা, কল্যাণী ও সোনারপুর থেকে নির্বাচিত কিছু নাট্যদল।
কবি শঙ্খ ঘোষ এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, জেলার নাটকের দলগুলি কলকাতায় অভিনয় করলে কলকাতার দর্শকদের কাছে তা একটা বাড়তি পাওনা তো বটেই। তাঁর কথায়, “এটা অবশ্যই একটা স্বাস্থ্যকর উদ্যোগ।” ‘স্বপ্নসন্ধানী’-র কৌশিক সেন বলেন, “সাধারণত জেলার দলগুলি তাদের নাট্যোৎসবে কলকাতার কোনও বড় দলকে আমন্ত্রণ জানায়। এ ক্ষেত্রে উলটপুরাণ হয়েছে।” উদ্যোগকে স্বাগত জানান নাট্য ব্যক্তিত্ব বিভাস চক্রবর্তীও। নাট্যোৎসবে জেলার প্রযোজনাগুলির অংশগ্রহণ নতুন নয়। বহুরূপীর কুমার রায় অতীতেই এমন উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাঁর স্ত্রী লতা রায়ের কথায়, “কুমার রায়ের সতর্ক দৃষ্টি ছিল জেলার নাটকগুলির দিকে। সব সময় খোঁজ রাখতেন, উৎসাহ দিতেন জেলার দলগুলিকে।” বহুরূপীর উদ্যোগে এবং কুমারবাবুর পরিবারের অর্থ-সাহায্যে গত তিন বছর ধরে কুমার রায়ের জন্মদিন ২ মার্চ ‘কুমার রায় স্মারক স্মৃতি সম্মান বক্তৃতা’-র সঙ্গে জেলার নির্বাচিত এক নাট্যদলকে আর্থিক সাহায্য করা হয়।
|
সন্তাপ নাটকের একটি দৃশ্য। —নিজস্ব চিত্র। |
উৎসবে যোগ দিতে আসা দলগুলির সঙ্গে আলাপে উঠে এল জেলায় নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যার কথা। কল্যাণী নাট্যচর্চার পক্ষে কিশোর সেনগুপ্ত জানালেন, কল্যাণীতে একটিও তেমন ভাল হল নেই। হলে এসি না থাকলে পাখার প্রবল আওয়াজে সংলাপ বলার সময় অভিনেতা-দর্শক উভয়েরই সমস্যা হয়। জেলা থেকে আসা প্রায় প্রত্যেক দলই অভিনেত্রী পাওয়ার সমস্যার পাশাপাশি হল-সঙ্কটের কথা জানায়। রঙ্গাশ্রম-এর সন্দীপ ভট্টাচার্য জানালেন, “আমাদের ‘সম্তাপ’ নাটকটিতে সব মিলিয়ে ৪৫টি লাইটের প্রয়োজন। কমপক্ষে ৩০টি লাইট না হলে উপস্থাপনায় প্রবল সমস্যা হয়। এ ছাড়াও মঞ্চে কোনও একটি নির্দিষ্ট ‘জোনে’ লাইট কমে গেলেও অসুবিধা হয়। তবে আমরা সকলে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিই।” নান্দনিক হাবড়া-র দেবব্রত দাস স্বীকার করেন স্টেজ ও লাইটের সমস্যার কথা। তিনি বলেন, “আলো, মিউজিক সবই তো নাটকের ভাষা। তাতে টান পড়লে সমস্যা তো হবেই। এ জন্য আমরা জেলায় গেলে নিজস্ব কিছু কেনা লাইট আছে। তা নিয়ে যাই।”
জেলার দর্শকের সঙ্গে কলকাতার দর্শকের কি মানগত পার্থক্য আছে? নাট্য-দর্শকের মধ্যে জেলা-কলকাতা বিভাজন টানতে নারাজ উৎসবে যোগ দেওয়া দলগুলির সবাই। তাঁদের যুক্তি, জেলার এমন অনেক দর্শকই আছেন যাঁরা কলকাতায় এসে নাটক দেখেন। শুধু তাই নয়, কলকাতার অনেক দলেই জেলার অভিনেতার সংখ্যা বেশি।
‘সন্তাপ’ ইতিমধ্যেই কলকাতায় দর্শক-প্রশংসিত হয়েছে। সন্দীপবাবু বলেন, “আমরা চাই কলকাতায় মাসে একটা করে অন্তত প্রযোজনা করি। কিন্তু হল পাওয়াটা সমস্যা হয়ে যায়।” হলের ক্ষেত্রে আর্থিক সমস্যাটা তেমন বড় নয় বলেই দাবি কল্যাণী নাট্যচর্চার কিশোর সেনগুপ্তর। তিনি বলেন, “তিন মাস আগে আবেদন করে চার হাজার টাকায় সরকারি হল আমরা পেয়েছি। তবে শুধু হলের ভাড়া হলেই তো হবে না— বিজ্ঞাপন, প্রোডাকশন-সহ একাধিক খরচ আছে। তা শুধু মাত্র টিকিট বিক্রি করে ওঠা অসম্ভব।” কিশোরবাবু বলেন, “রাজ্য সরকারের আর্থিক সুবিধা না পেলেও কেন্দ্রের সাহায্য পাই।” ‘কল্যাণী নাট্যচর্চা’ রাজ্যের বাইরেও অভিনয় করেছে। যেমন, দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা, বোম্বে নেহরু সেন্টার-সহ একাধিক জায়গায়। এমনকী ২০১১ সালে ‘রঙ্গাশ্রম’ ভারতের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতামূলক উৎসব ‘মেটা’-য় (মাহেন্দ্র এক্সেলেন্স ইন থিয়েটার অ্যাওয়ার্ড) অন্যতম সেরা হয়েছে। অথচ প্রচারে না আসায় তা জানেন না অনেকেই। আক্ষেপ মেটাক্রিটিক্যাল জুরির সদস্য শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তিনি বলেন, “বহুরূপী তাঁদের উৎসবে রঙ্গাশ্রম-সহ অন্য দলগুলিকে সুযোগ দেওয়ায় কলকাতার দর্শক তাদের প্রযোজনা দেখতে পাবেন। এ ভাবে জেলার দলগুলি কলকাতায় তাদের নাট্যশিল্পের প্রয়োগ দেখানোর সুযোগ পেলে আখেরে লাভ হবে নাটকেরই।”
প্রতি বছরই কেন ডাকা হয় না জেলার দলগুলিকে? ‘বহুরূপী’-র সম্পাদক সুশান্ত দাস জানান, “ইচ্ছে থাকলেও সামর্থ্যের অভাব। যেমন এ বারই পাঁচ দিনের উৎসবে খরচ হয়েছে প্রায় আট লক্ষ টাকার মতো!” |