তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বর্ধমান থানায় স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিল সিপিএম। এক তৃণমূল নেতার গাড়ি সেই ভিড় কাটিয়ে বেরনোর সময়েই মারপিট বেধে গেল। মার খেলেন নেতারাও। পরিস্থিতি সামাল দিতে নামাতে হল র্যাফ।
বর্ধমানের পুরপ্রধান, সিপিএমের আইনূল হকের দাবি, তাঁকে বেধড়ক মারা হয়েছে। যিনি গাড়িতে আসছিলেন, বর্ধমান শহরের সেই তৃণমূল নেতা সুজিত ঘোষকে জখম অবস্থায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। রাতের খবর, তাঁকে আইসিইউ-তে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ৭২ ঘণ্টার আগে তাঁর অবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করতে চায়নি হাসপাতাল। দু’পক্ষই পুলিশে অভিযোগ করেছে। তবে বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। আজ, শুক্রবার প্রতিবাদ মিছিল বের করা হবে দু’পক্ষই জানিয়ে দিয়েছে। ফলে, ফের গণ্ডগোলের আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
লগ্নি সংস্থার প্রতারণা ও মানুষকে রক্ষা করতে অবিলম্বে আইন প্রণয়নের দাবিতে এ দিন বিকেলে মিছিল বের করেছিল তৃণমূল। সুজিতবাবু তাতে নেতৃত্বে দেন। টাউন হলের সামনে থেকে বেরিয়ে মিছিলটি শেষ হয় রাজবাটীতে। সেই মিছিল থেকে এই সব লগ্নি সংস্থার জন্ম ও বাড়বাড়ন্তের সরাসরি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, নিরুপম সেনদের দায়ী করা হয়। মিছিল শেষে সুজিতবাবু বাড়ি ফেরার পথ ধরেন।
ঠিক সেই সময়েই বি সি রোড আটকে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাস’ ও লগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি নিয়ে বর্ধমান থানায় স্মারকলিপি দিচ্ছিল সিপিএম। উপস্থিত ছিলেন আইনূল হক, তাপস সরকার, জনার্দন রায়, দিলীপ দুবের মতো দলের জেলা ও বর্ধমান শহর জোনাল কমিটির সদস্যেরা। তাঁদের অভিযোগ, মিছিল ফেরত তৃণমূল সমর্থকেরা তাঁদের আক্রমণ করে। নেতাদের নিগ্রহের মুখে পড়তে হয়। পুলিশ তাঁদের সেখান থেকে সরে যেতে বললে তাঁরা মোবারক বিল্ডিংয়ে দলের বর্ধমান শহর জোনাল অফিসে চলে আসেন। এর পরে যখন তাঁরা বৈঠকে ব্যস্ত, অফিস ঘিরে ফেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন কিছু তৃণমূল সমর্থক। বর্ধমান থানার আইসি দিলীপকুমার গঙ্গোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে র্যাফ নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। পুলিশ ব্যাপক লাঠিচার্জও করে বলে তৃণমূলের অভিযোগ।
পুরপ্রধানের অভিযোগ, “মোবারক বিল্ডিংয়ে ঢুকে যে ভাবে আমাকে মারধর করা হচ্ছিল, সাধারণ মানুষ রুখে না দাঁড়ালে আমি মারাই যেতাম। ওদের হাতে নানা ধরনের অস্ত্র ছিল।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “বর্ধমান শহর ফের এক বার গণতন্ত্রকে আক্রান্ত হতে দেখল। ফের প্রত্যক্ষ করল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীদের ভয়ঙ্কর চেহারা। এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টে থেকে আমরা বর্ধমান স্টেশন থেকে বীরহাটা পর্যন্ত মিছিল করব। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র মিছিলে উপস্থিত থাকবেন।”
রাতে হাসপাতালে শুয়ে সুজিতবাবু বলেন, “আমার গাড়িতে মাত্র চার জন ছিল। গাড়িটা বি সি রোড দিয়ে যাওয়ার সময় হর্ন দিচ্ছিল। আমাদের মিছিলে প্রচুর মানুষ এ দিন যোগ দিয়েছেন। তাতে ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন সিপিএম নেতারা। তাই ভিড় কাটিয়ে বেরনোর চেষ্টা করার সময়েই আমার গাড়ি সিপিএমের লোকেদের হাতে আক্রান্ত হয়। পরে আমাকে রাস্তায় ফেলেও মারধর করা হয়েছে।” তাঁর পিঠে, বুকে, মাথায় চোট লেগেছে বলে সুজিতবাবু জানিয়েছেন। তাঁর স্ক্যান ও এক্স-রেও করানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেল ৪টেতেই মিছিল বের করার কথা জানিয়ে দিয়েছে তৃণমূল।
জেলার পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “সিপিএমের লোকেরা স্মারকলিপি দিতে এসে বি সি রোড আটকে দিয়েছিলেন। এঁদের সরিয়ে সুজিতবাবু গাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়েই সংঘর্ষের সূত্রপাত। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখছি। যে ভাবেই হোক, শহরের নিরাপত্তা বজায় রাখা হবে।” |