ইস্তফার দাবি ওড়ালেন প্রধানমন্ত্রী
সংসদ চালাতে মরিয়া কেন্দ্র নরম হতে নারাজ
গামী ভোটে বড় মুখ করে বলার মতো সাফল্য নেই তেমন। তাই বাজেট অধিবেশনে জমি, খাদ্য সুরক্ষা ও লোকপালের মতো বিল পাশ করিয়ে নিয়ে সেগুলিকেই হাতিয়ার করতে মরিয়া কংগ্রেস। কিন্তু বিজেপি তা হতে দিতে নারাজ। এই অবস্থায় সংসদ সচল রাখার জন্য এ বার মুখ খুললেন খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। এবং ময়দানে নেমেই তিনি আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, সংসদ চালানোর জন্য এ বার আর বিজেপির চাপে নরম হবে না সরকার। কয়লাখনি বণ্টন নিয়ে সিবিআইয়ের তদন্তে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে বিজেপি তাঁর ও আইনমন্ত্রী অশ্বিনী কুমারের ইস্তফা চেয়ে যত শোরগোলই করুক সরকার তাতে আমল দিচ্ছে না।
সমাজকল্যাণ ও সংস্কারের জন্য প্রয়োজনীয় বিল পাশ রুখে দিতে বিজেপি যে কোনও না কোনও ভাবে সংসদ অচল করে রাখার কৌশল নিয়েছে, সেটা কংগ্রেস নেতৃত্বের কাছে স্পষ্ট। কিন্তু সংসদ চালু রাখার জন্য বিরোধীদের দাবির কাছে মাথা নোয়ালে তার কী ফল হয়, টুজি কেলেঙ্কারিতে টেলিকমমন্ত্রী এ রাজার ইস্তফার পরে তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে কংগ্রেস। রাজা ইস্তফা দিতেই বিরোধী পক্ষ আরও তেড়েফুঁড়ে নেমেছিল সংসদ অচল করে দিতে। শেষে যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) গড়তে বাধ্য হয় সরকার। যে কমিটির তদন্তে ইতি টানতে এখনও রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে সরকারকে। এ কারণে কংগ্রেস নেতৃত্ব গত কালই সংসদ ভবনে জরুরি বৈঠকে বসে জানিয়ে দিয়েছিলেন আইনমন্ত্রী সিবিআই-প্রধান রঞ্জিত সিনহাকে ডেকে পাঠিয়ে অন্যায় কিছু করেননি। তিনি ইস্তফা দেবেন না। সংসদ চালু রাখার দায়ে মুখ খুলে প্রধানমন্ত্রী আজ আরও কড়া ভাষায় নস্যাৎ করে দেন বিজেপির দাবি। রাষ্ট্রপতি ভবনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রথমে তিনি বলেন, “আইনমন্ত্রীর ইস্তফার প্রশ্নই নেই। বিষয়টি বিচারাধীন। তাই এ নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না।” কিন্তু এর পরই বিজেপির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিরোধীরা গত ন’বছরে বহু বার আমার পদত্যাগ চেয়েছেন। এটা নতুন কিছু নয়। তবে বিরোধীদের কাছে অনুরোধ, সংসদ চলতে দিন। যে ভাবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নিয়ে ছেলেখেলা চলছে তা দেখে গোটা দুনিয়া হাসছে।”
সরকার যে নরম মনোভাব নিচ্ছে না, তার ইঙ্গিত মিলেছে এ দিনের সিবিআই অভিযানেও। এ দিন খনি বণ্টন কেলেঙ্কারির তদন্তে তারা দিল্লি, গাজিয়াবাদ, হরিয়ানার ও ফরিদাবাদ ও ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরে মোট ১০টি জায়গায় তল্লাসি চালায়। ভুয়ো তথ্য দিয়ে খনির বরাত পাওয়ার অভিযোগে দিল্লির এক সংস্থার বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করেছে সিবিআই। সংস্থাটিকে ছত্তীসগড়ের খনি ব্লক পাইয়ে দেওয়ার পিছনে বিজেপি নেতাদের হাত ছিল বলে অভিযোগ। এটাকে বিজেপি-র প্রতি বার্তা বলেও মনে করা হচ্ছে।
তবে সরকার বাইরে আক্রমণাত্মক মেজাজ দেখালেও সাঁড়াশি সঙ্কটে পড়ে যথেষ্টই উদ্বিগ্ন কংগ্রেস নেতৃত্ব। আইনমন্ত্রী ইস্তফা না দিলে বিজেপি সংসদ চলতে দেবে না, শিকেয় উঠবে প্রয়োজনীয় বিল পাশের আশা। আবার পদত্যাগ করলেও বিপদ বাড়বে। এক সময় যে কারণে টুজি কেলেঙ্কারিতে অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে পি চিদম্বরমকে সরানো সম্ভব ছিল না। এ বারও তেমনই অশ্বিনীকে সরানো সম্ভব নয়। কারণ, অশ্বিনী ইস্তফা দিলে প্রধানমন্ত্রীর সামনে আর কোনও ঢাল থাকবে না।
বিজেপি-ও নাছোড়। কারণ এটা স্পষ্ট যে সিবিআইয়ের হলফনামায় যাতে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কিছু না থাকে তা সুনিশ্চিত করতেই সিবিআই-কর্তাকে বৈঠকে ডেকেছিলেন অশ্বিনী। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা অরুণ জেটলি-র বক্তব্য, “সিবিআই নিরপেক্ষ সংস্থা বলে প্রধানমন্ত্রী যে দাবি করেন, তা যে কতটা ফাঁপা সেটা প্রমাণিত হল। তাঁকে ও আইনমন্ত্রীকে ইস্তফা দিতেই হবে।”
এই পরিস্থিতিতে সুষমা স্বরাজ ও অরুণ জেটলিদের সঙ্গে কথা বলে বিজেপির মুখরক্ষার জন্য একটা প্রস্তাব দিয়েছেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথ। তা হল, বিজেপির দাবি মেনে নিয়ে টুজি নিয়ে গঠিত জেপিসি-র শীর্ষ থেকে ইস্তফা দেবেন পি সি চাকো। পরিবর্তে সংসদ চলতে দেওয়া হোক। সুষমাদের সাফ কথা, সংখ্যাগরিষ্ঠ জেপিসি-সদস্য চাকোর বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে স্পিকারের কাছে চিঠি দিয়েছেন। ফলে তাঁর অপসারণ নিশ্চিত। অশ্বিনীকে সরালে তবেই চলতে দেওয়া হবে সংসদ।
রফা-সূত্র না মেলায় সোমবার বা মঙ্গলবার সর্বদল বৈঠক ডাকত পারে সরকার। সেখানে বিরোধী শিবিরে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করেও লাভ কিছু হবে না। বামেরা বা এনডিএ-শরিক সংযুক্ত জনতার মতো দল সংসদ অচল রাখার পক্ষে নয়। কিন্তু অধিবেশন পণ্ড করতে চাইলে বিজেপি একাই একশো। কংগ্রেসকে এই রকম বেকায়দায় দেখে ইউপিএ শরিকরাও এখন সুযোগ নিতে চাইছে। এনসিপি নেতা ডি পি ত্রিপাঠি আজ বলেন, “পরিস্থিতি জটিল। অর্থবিল পাশ করাতে না পারলে সরকার পড়ে যাবে। এবং নির্বাচন ঘনিয়ে আসবে।”
কংগ্রেস অবশ্য মনে করছে, যে করেই হোক অর্থবিল পাশ হয়ে যাবে। কারণ, এখনই ভোটের মুখে পড়তে চায় না বিজেপিও। কিন্তু বাজেট অধিবেশনে আগামী ভোটের অস্ত্র জোটাতে না পারলে জমি, খাদ্য নিরাপত্তার মতো বিল পাশ করাতে বিশেষ অধিবেশন ডাকতে হবে। দলের এক শীর্ষ, নেতার কথায়, “আপাতত অন্য কোনও উপায়ও দেখা যাচ্ছে না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.