এজেন্ট নিজেও লাখের বেশি লগ্নি করেছিলেন
ক দিন আগেই দুর্গাপুরে গলায় দড়িতে যে যুবকের মৃত্যু হয়েছে, তিনি শুধু সারদা গোষ্ঠীর অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট ছিলেন না, নিজেও লক্ষাধিক টাকা জমা রেখেছিলেন। তিনি কেন অবসাদে ভুগছিলেন, তা পুলিশের কাছে পরিষ্কার নয়। তবে আত্মীয়-পরিজন অনেকেই মনে করছেন, নিজের এবং গ্রাহকদের লগ্নি ডুবে যাওয়াই এর কারণ।
যাদব মাজি নামে বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবকের বাড়ি বাঁকুড়ার গঙ্গাজলঘাটির রাজামেলা গ্রামে। শনিবার দুপুরে সেই টালি ও অ্যাসবেসটসে ছাওয়া মাটির ঘরে বসেই তাঁর বাবা পুরঞ্জয় মাজি বলেন, “ছেলে ১৫ বছর ধরে দুর্গাপুরে রয়েছে। গত কার্তিক মাসে এসে বলেছিল, একটি অর্থলগ্নি সংস্থায় এজেন্ট হিসেবেও কাজ করছে। আমাদের অনেক কষ্টে রোজগার করা ৫০ হাজার টাকা নিয়েও যায়। বলেছিল, সাড়ে পাঁচ বছরে তা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।”
যাদব।
পুরঞ্জয়বাবুর তিন ছেলের মধ্যে যাদব মেজো। বাকি দুই ছেলেও অন্যত্র থাকেন। দিনমজুরি করে একটি মাত্র ঘরে স্ত্রী ভেলু মাজিকে নিয়ে দিন গুজরান করেন পুরঞ্জয়বাবু। দু’জনেই নিরক্ষর। দোকানে কাজ ছাড়া ছেলে আর কী করে, সে সম্পর্কে তাঁদের বিশেষ ধারণাও ছিল না। বৃদ্ধের কথায়, “মৃত্যুর পরে দুর্গাপুরে ওর ঘর থেকে পাওয়া একটি ফাইল খুলে দেখা যায়, প্রায় সওয়া লাখ টাকা সে সারদা গোষ্ঠীর সংস্থায় ঢেলেছিল।” শুক্রবার দুর্গাপুর মায়াবাজারে যে বাঁশ-টালির দোকান লাগোয়া ঘরে কড়িকাঠ থেকে গলায় দড়ির ফাঁসে যাদবের দেহ ঝুলতে দেখা গিয়েছিল, সেটির মালিক গোপাল সূত্রধর ও তাঁর স্ত্রী কার্যত ভেঙে পড়েছেন। নানা জায়গায় অস্থায়ী কাজকর্ম করার পরে গত বছর পাঁচেক যাদব তাঁদের কাছেই ছিলেন। ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে গোপালবাবুর স্ত্রী গৌরীদেবী বলেন, “ও আমার আর এক ছেলে ছিল।” টাকা-পয়সা সব বিশ্বাস করে যাদবের কাছেই ছেড়ে রাখতেন জানিয়ে গোপালবাবু বলেন, “কাজের পরে সন্ধ্যায় ও বেরিয়ে যেত। কী করত, কোনও দিন জানতে চাইনি। এখন খোঁজখবর করে শুনছি, ও সারদা গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত ছিল।”
শোকগ্রস্ত মা।—নিজস্ব চিত্র
যাদবের ঘরে পাওয়া ফাইল বলছে, গত বছর ১৬ অক্টোবর তিনি সারদা হাউজিং প্রাইভেট লিমিটেডের আবাসন প্রকল্পে ১ লক্ষ টাকা লগ্নি করেন। গত বছরই ৩১ অক্টোবর ৫ হাজার এবং ২৭ নভেম্বর ২০ হাজার টাকা ঢালেন সারদা গার্ডেন রিসর্ট অ্যান্ড হোটেল প্রাইভেট লিমিটেডের ভ্রমণ প্যাকেজে। সব ক্ষেত্রেই ‘নমিনি’ করেছিলেন মা-কে। পুরঞ্জয়বাবু বলেন, “এলাকার লোকজন আমাদের জানান, সারদা গোষ্ঠীর এজেন্ট হিসেবেও সে কাজ করছিল।”
গোপালবাবুর প্রতিবেশী রঞ্জিত সূত্রধরের বক্তব্য, “অনেকেই স্বীকার করছে না। তবে আমি জানি, যাদবের অমায়িক ব্যবহারে আকৃষ্ট হয়ে পাড়ার অনেকেই সারদা গোষ্ঠীর কাছে আমানত খুলেছিল।” পাড়ার যুবক বিকাশ অঙ্কুর জানান, তিনিও লগ্নি করেছিলেন। স্থানীয় অঙ্কুরপাড়ার রিকশাচালক শীতেন সরকার যাদবের কাছে অর্থলগ্নি করেছিলেন। তিনি বা তাঁর স্ত্রী বাড়িতে ছিলেন না।
তাঁদের মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ছেলে রাজা বলে, “বাবা যাদবকাকুর কাছে ১৫ মাস মেয়াদে রোজ ৫০ টাকা করে জমা দিত। গত ৬ এপ্রিল দিদির বিয়ে ঠিক হয়। তার জন্য টাকা দরকার। বাবা যাদবকাকুকে সে কথা বলেছিল।”
গোপালবাবু বলেন, “সব গরিব মানুষের টাকা। ফেরত দিতে পারবে না ভেবে, সেই চাপেই বোধহয় ছেলেটা আত্মহত্যা করে ফেলল। শেষ ক’দিন অবসাদে ভুগছিল। আমাদের বললে হয়তো একটু হালকা হত।” তাঁর ভাই বিমলবাবু বলেন, “যাদবের মতো অনেকেরই তো এই অবস্থা হতে পারে। সরকারের অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.