বাংলা, সিকিম থেকেও তথ্য চাইল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
চিনা চরের খোঁজে নজর সীমান্ত গুম্ফায়
গুম্ফা রহস্যের সন্ধানে এ বার ভারতীয় গোয়েন্দাবাহিনী!
ভারত-নেপাল এবং ভারত-ভুটান সীমান্তে গুম্ফার সংখ্যা এত বাড়ছে কেন, কেনই বা বাড়ছে অন্যান্য ধর্মস্থানের সংখ্যা তা নিয়ে তদন্তে নেমেছে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। তাদের সন্দেহ, নেপাল ও ভুটানের সীমান্তবর্তী ধর্মস্থানগুলিতে ঘাঁটি গেড়ে তথ্য সংগ্রহ করছে চিন এবং পাকিস্তানের গুপ্তচরেরা। তাই সীমান্ত বরাবর হঠাৎ গজিয়ে ওঠা ধর্মস্থানগুলির উপর নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। মন্ত্রকের বর্ডার ম্যানেজমেন্ট শাখা থেকে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ-সহ ওই দুই সীমান্ত সংলগ্ন সব ক’টি রাজ্যের কাছে এ নিয়ে যাবতীয় তথ্য চেয়ে পাঠানো হয়েছে। ধর্মস্থানগুলি নির্মাণে কারা অর্থ সহায়তা করেছে, কারা এখানে নিয়মিত যাতায়াত করে এবং এখান থেকে কী ধরনের কাজকর্ম চালানো হচ্ছে, তা জানাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের মূল উদ্দেশ্য। কেন্দ্রকে অবশ্য বেশি চিন্তায় রেখেছে পশ্চিমবঙ্গ, অরুণাচলপ্রদেশ এবং সিকিমের সীমান্ত-এলাকা। কারণ, চিনের প্রভাব থাকা বৌদ্ধ গুম্ফার সন্ধান মিলেছে এই তিনটি রাজ্যে।
রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের এক কর্তা জানান, নেপাল সীমান্তে চিনের সক্রিয়তা নিয়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি মাঝে-মধ্যেই খবর পাঠাচ্ছে। গত জানুয়ারিতে দার্জিলিঙের জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, সশস্ত্র সীমা বল-এর (এসএসবি) কর্তারা নেপালে গিয়ে সে দেশের আধিকারিকদের এ সম্পর্কে সচেতন করে এসেছেন। দার্জিলিঙের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “দুই দেশের মধ্যে আলোচ্যসূচি দিল্লি থেকেই ঠিক হয়। এর আগে নেপালের সঙ্গে শেষ যে বৈঠক হয়েছিল, সেখানেও চিনের কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।”
সীমান্ত সমস্যা সংক্রান্ত বৈঠকগুলিতে নেপালে চিনা গুপ্তচরদের বাড়বাড়ন্ত এবং ভারত-বিরোধী কাজকর্মে মদত দেওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অভিযোগ, ভারতের সীমান্তবর্তী নেপালের ঝাপা, ইলম এবং পঞ্চথর জেলায় চিনের মদতে বেশ কয়েকটি এফএম রেডিও স্টেশন চালানো হচ্ছে। তাতে দিবারাত্র ভারত-বিরোধী প্রচার চলছে। সীমান্তের আশপাশের গ্রামগুলিতে ভারতীয়দের মধ্যে ছোট ছোট রেডিও বিতরণ করা হচ্ছে। কারা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত, তা খুঁজে বার করতে নেপাল সরকার উদ্যোগী হচ্ছে না বলেও ভারতের অভিযোগ।
নিরাপত্তা সংস্থা সূত্রের খবর, স্থানীয় নেপালিদের গুপ্তচরের কাজে লাগানোর জন্য কাঠমান্ডুর চিনা দূতাবাস ভারত সীমান্তের জেলাগুলিতে চিনা ভাষা শেখানোর ক্লাস চালু করেছে। পশুপতিনাথ মন্দিরের পাশেই চলছে চিনা ভাষা শেখানোর স্কুল। এ ছাড়া ঝাপা, ইলম, পঞ্চথরের মতো জেলাগুলিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে চিনের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময়ের অঙ্গ হিসেবে মান্দারিন ভাষা শেখানোর কাজও চলছে। গোয়েন্দারা জেনেছেন, ভারতের সীমান্তবর্তী নেপালের ১১টি জেলায় ‘কাজের বদলে খাদ্য’ কর্মসূচিতে টাকা ঢালছে চিন। উদ্দেশ্য, এক দিকে নেপালিদের মধ্যে চিনের প্রতি সহানুভূতি জাগানো, অন্য দিকে খবর সংগ্রহ করাও। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, নেপালে মাওবাদী অভ্যুত্থানের সময়ে প্রচণ্ডের মতো চিনপন্থী নেতাদের অন্যতম ঘাঁটি ছিল ইলম এবং ঝাপা। সেখান থেকেই তাঁরা কাঠমান্ডুতে আঘাত হেনেছিলেন।
কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক কর্তা জানান, ১৯৬২-এর যুদ্ধে অরুণাচলের তাওয়াং থেকে পার্বত্য ডিভিশনের এক সেনা কর্তাকে যুদ্ধবন্দি করেছিল চিনা ফৌজ। তিব্বতে যে হাসপাতালে তাঁকে রাখা হয়েছিল, সেখানে এক চিনা সৈন্যকে দেখে তিনি অবাক হয়ে যান। কারণ, তাওয়াংয়ে সেনা ছাউনির সামনের যে দোকানে তিনি চা খেতেন, ওই লোকটি ছিল সেই দোকানের মালিক। আসলে গুপ্তচরবৃত্তির জন্যই ছদ্মবেশে চায়ের দোকান চালাত ওই চিনা সৈন্য। হিন্দি শিখিয়ে তাওয়াং পাঠানো হয়েছিল তাকে। আর এখন মান্দারিন ভাষা শিখিয়ে নেপালের বাসিন্দাদের গুপ্তচর করে পাঠানো হচ্ছে। তাদের সঙ্গে যোগাযোগে সুবিধা হয়। এই গুপ্তচরেরা গুম্ফাগুলিতে নিয়মিত যাতায়াত করছে বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।
কেন পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম নিয়ে বেশি চিন্তিত ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলি?
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, উত্তর সিকিম সীমান্তের ‘ফিঙ্গার টিপ’ অঞ্চলটি চিন এখনও তাদের বলে দাবি করে। এ নিয়ে ওই এলাকায় মাঝে-মধ্যেই দু’পক্ষের মধ্যে গোলমাল বাধে। সিকিম-তিব্বত সীমান্তে চুম্বি উপত্যকায় বিপুল পরিমাণ সেনা মোতায়েন করেছে চিনের লাল ফৌজ। তা মোকাবিলা করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর ফিল্ড লেভেল অপারেশনাল স্ট্র্যাটেজি তৈরি হয় তরাইয়ের সুকনার ৩৩ নম্বর কোর থেকে। ফলে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গুম্ফাকেন্দ্রিক গুপ্তচরবৃত্তির আসল লক্ষ্য সুকনার অধীনে থাকা সেনা ঘাঁটিগুলি। প্রায় খোলা নেপাল ও ভুটান সীমান্তে মান্দারিন জানা এমন গুপ্তচরদের কদর যথেষ্ট। সে কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই দুই সীমান্তের সমস্ত ধর্মস্থানের কাজকর্ম নখদর্পণে রাখতে চায়।
মহাকরণে স্বরাষ্ট্র দফতরের কর্তারা জানাচ্ছেন, বছর তিনেক আগে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ি জেলায় এমন পাঁচটি বৌদ্ধ মঠের সন্ধান মেলে, যাদের কার্যকলাপ সন্দেহজনক। গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই ৫টি গুম্ফার উপর চিনের প্রভাব রয়েছে। গুম্ফার পরিচালকদের তিব্বত হয়ে চিনে যাওয়ার প্রমাণও মিলেছে। এ ছাড়া, নেপাল ও সিকিম হয়ে এ দেশে আসা তিব্বতি শরণার্থীদের প্রথম আশ্রয়স্থল হয় গুম্ফাগুলি। ফলে শরণার্থীর বেশে যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যেও চিনা গুপ্তচর থাকছেন কিনা, তা নিয়েও সংশয়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলি। সেই কারণেই বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের জন্য ভারত-নেপাল এবং ভারত-ভুটান সীমান্তে সমস্ত ধর্মস্থানের তালিকা তৈরি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কর্তারা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.