প্রশাসনিক উদসীনতাকেই দুষছেন গ্রামবাসী
পরিকাঠামো আছে, তবু বন্ধ হিমঘর
ক্ষত রয়েছে পরিকাঠামো। মজুত আছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও। বাজারেও কোনও ঋণ নেই। অথচ দীর্ঘ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে দুবরাজপুরের ‘চাষিমঙ্গল সমবায়’ হিমঘরটি। শুধু দুবরাজপুরের নয়, রাজনগর থেকে খয়রাশোল, ইলামবাজার এমনকী লাগোয়া বর্ধমানের পান্ডবেশ্বর এলাকার মধ্যে থাকা একমাত্র হিমঘরটি বন্ধ থাকায় আলু চাষে উৎসাহ হারাচ্ছেন এলাকার চাষিরা। শুধু তাই নয়, যে হিমঘরকে কেন্দ্র করে এক সময় সেজে উঠেছিল কোল্ডস্টোর পাড়া এবং যাঁদের রুজিরুটির সম্পর্ক ছিল, তাঁদের বিশ্বাস রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক তৎপরতা একটু বাড়ালেই চালু হতে পারে হিমঘরটি।
স্থানীয় ও সমবায় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম সরকারের আমলে তৎকালীন সমবায় মন্ত্রী তথা এলাকার ফব বিধায়ক ভক্তিভূষণ মণ্ডলের উদ্যোগে ১৯৭৯ সালে চালু হয় ৪ হাজার টন ক্ষমতা সম্পন্ন হিমঘরটি। প্রথম দিকে এলাকায় যে পরিমাণ আলু চাষ হত, তা দিয়ে হিমঘরের চাহিদা পূরণ হত না। নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে থেকে আলু আনা হয়। ১৯৯৫ সালে হিমঘরের তত্বাবধানে থাকা সমবায় সমিতি সিদ্ধান্ত নিয়ে হিমঘরটিকে ওয়েস্ট বেঙ্গল কো-অপারেটিভ এগ্রিকালচারাল রুরাল ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ককে পাঁচ বছরের জন্য লিজ দেয়। পরে আরও দু’বছর লিজের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। সেই সময় ভালই চলত হিমঘরটি। এলাকার চাষিরাও নতুন উদ্যোমে আলু চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২০০২ সালের পর ওই ব্যাঙ্ক আর লিজের মেয়াদ বাড়াতে রাজি না হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় হিমঘর।

দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ দুবরাজপুরের এই হিমঘর। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত
বর্তমানে ফব বিধায়ক তথা চাষিমঙ্গল সমবায় হিমঘরের সভাপতি বিজয় বাগদি বলেন, “সেই সময় হিমঘর চালানোর মতো পর্যাপ্ত টাকা সমিতির হাতে ছিল না এবং লিজ বাবদ একটা মোটা অঙ্কের টাকা ওই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক না দেওয়ায় চালানো যায়নি হিমঘরটিকে।” বিজয়বাবুর দাবি, “হিমঘরটিকে পুনরায় চালু করতে বাম আমলে ও বর্তমানে উদ্যোগী হলেও সেটা চালু করা যায়নি। শুধু তাই নয়, সমবায় দফতরের তরফেও ফলপ্রসূ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এক আধিকারিককে হিমঘরের দায়িত্ব দিয়ে কাজ সারা হয়েছে।”
বিধায়কের দাবি মানেননি সমবায় সমিতি সমূহের উপনিয়ামক অংশুক চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “ওই সমবায় সমিতির জন্ম থেকে কোনও নির্বাচন হয়নি। এমনকী সমতির বার্ষিক সাধারণসভা পর্যন্তও হয়নি। বছর দেড়েক আগে এক বিভাগীয় আধিকারিককে ৬ মাসের জন্য হিমঘরের দায়িত্ব দিয়ে প্রথমে এই চেষ্টাটাই করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত-- ওই সমবায় সমিতির অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ওই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা সমিতির প্রাপ্য দেখানো হয়েছে, সে ব্যাপারেও যেগাযোগ করা হয়েছিল ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে। কিন্তু সদুত্তর মেলেনি।” তিনি জানান, ইতিমধ্যে ওই আধিকারিকের সময়কাল শেষ হয়ে যাওয়ায় সময় বাড়ানোর আবেদেন করা হয়েছিল। কিন্তু সে ব্যাপারে কোনও নির্দেশ না আসায় কার্যত বিষয়টি দেখভাল করা ওই আধিকারিকের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না। নির্দেশ এলে ফের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই জটিলতায় অবশ্য এলাকার চাষিরা যেতে চান না। চাষি মধুসূদন গড়াই, স্বাধীন কাঁড়ি, রামকৃষ্ণ ঘোষরা বললেন, “কাছাকাছি আর কোথাও হিমঘর নেই। এ দিকে বর্ধমানের আসানসোল বা বীরভূমের সাঁইথিয়ায় গাড়ি ভাড়া করে আলু নিয়ে গিয়ে হিমঘরে রাখলে খুব একটা সুবিধা হবে না।” আর যে হিমঘরকে কেন্দ্র করে ১০০-১২০টি ঘরের একটি আস্ত পাড়া গড়ে উঠেছিল, সেই হিমঘর পাড়ার বাসিন্দারা এখনও আশায় বুকবেঁধে আছেন একদিন ঠিক চালু হবে হিমঘর। তার প্রমান হল হিমঘরের নৈশ প্রহরীর দায়িত্বে থাকা ক্ষুদিরাম বাউড়ি এবং নন্দ বাউড়িরা মারা যাওয়ার পরও আজও নৈশ প্রহরীর কাজে নিযুক্ত আছেন তাঁদের ছেলে দেবাশিস এবং সত্তম বাউড়িরা। তাঁদের কথায়, “আমরা যতদিন আছি একটি নাট বোল্টুও খোওয়া যাবে না হিমঘর থেকে।” হিমঘরের ম্যানেজার ফটিক কবিরাজ বললেন, “সমস্ত যন্ত্রপাতি ঠিক রয়েছে। আলু ছাড়াও তেঁতুল, ছানা ইত্যাদি রাখা হত ওই হিমঘরে।” কিন্তু তাও বন্ধ হয়ে গেল। একসময় গান বাজনায় নেশা ছিল। সেটিকে পেশা করে কোনও ক্রমে সংসার চালাই। হিমঘর চালু থাকলে সংসার চালাতে অসুবিধা হত না।”
যোগাযোগ করা হয়েছিল রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী তথা জেলার মানুষ চন্দ্রনাথ সিংহের সঙ্গে। তাঁর আশ্বাস, “বিষয়টি আমার নজরে ছিল না। আমি সমবায় মন্ত্রীকে জানাচ্ছি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.