গ্রাম আছে, বসতি আছে, কিন্তু নেই রাস্তা, নেই বিদ্যুৎ। তাই রাতে আঁধার ঘোচাতে লন্ঠনই সম্বল। যাতায়াতের ভরসা সংকীর্ণ মেঠো রাস্তাই। এ ভাবেই বছরের পর বছর জীবন ধারণ করে চলেছেন বাঁকুড়া ১ ব্লকের আন্ধারথোল পঞ্চায়েতের ছাতারডিহি মৌজার সাহানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা।
বাঁকুড়া শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে দ্বারকেশ্বর নদের পাড়ে অবস্থিত সাহানাপাড়া গ্রামের মানুষজনেরা পেশায় মূলত দিন মজুর। গ্রামে গিয়ে জানা গেল, দীর্ঘদিনের আন্দোলনের পরে কয়েক সপ্তাহ আগেই এই গ্রামে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর একটি নলকূপ বসিয়েছে। তার আগে গ্রামের একটি কুয়ো ও নদীর জলই পানীয় জল হিসেবে ব্যবহার করতেন বাসিন্দারা। পানীয় জলের সুরাহা হলেও রাস্তা ও বিদ্যুৎ নিয়ে ক্ষোভ কিন্তু কমেনি। গ্রামবাসী শঙ্কর সাহানা, হরিপদ সাহানারা বলেন, “এ ভাবে বেঁচে থাকাটাই সমস্যার। হ্যারিকেনের আলোয় ছেলেমেয়েরা রাতে ভাল করে পড়তে পারে না। রাস্তাঘাট নেই। বর্ষাকালে বাড়ি থেকে বেরোনই যায় না।” |
গ্রামের বধূ লক্ষ্মী সাহানা, মন্দিরা সাহানারা জানান, আশেপাশের গ্রামগুলিতে বিদ্যুৎ এসেছে। তাঁদের ঘরে ঘরে আলো জ্বলে। অথচ পড়শি এই গ্রামে আলো জ্বলে না। সন্ধ্যা নামলেই অন্ধকারে এলাকা ডুবে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রামের তরফে অনেকবার পঞ্চায়েত, জেলাপরিষদে বিদ্যুৎ, রাস্তার দাবি জানানো হয়েছে। লাভ হয়নি। তাঁদের ক্ষোভ, ভোট এলেই নেতারা ঘরে ভোট চাইতে আসেন। সব সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাসও দেন। আর ভোট ফুরলেই তাঁরা আর ফিরেও তাকান না।
আন্ধারথোল পঞ্চায়েতের সিপিএম সমর্থিত নির্দল প্রধান মহম্মদ নাসিরুদ্দিন খান অবশ্য দাবি করেছেন, “ওই গ্রামে ঢোকার রাস্তা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। রাস্তাটি সংস্কার করে মোরাম ফেলা হচ্ছে। তবে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার ব্যাপারে বহুবার জেলা পরিষদকে জানিয়েছি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।” কেন হয়নি? বাঁকুড়া জেলা পরিষদের বিদ্যুৎ কর্মাধক্ষ সামিদ জামাদারের বক্তব্য, “২০১১ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে জেলা পরিষদের ক্ষমতা খর্ব করে দিয়েছে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার। তাই কোথায় কত কী বরাদ্দ হচ্ছে, কাজ হচ্ছে কী না তা আমরা কিছুই জানি না।” তাঁর দাবি, ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ৩ হাজার ৭৮টি মৌজায় বিদ্যুদয়নের কাজ চলেছে। ১ লক্ষ ৫৬ হাজার বিপিএল পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। সাড়ে ৩ লক্ষ বিদ্যুৎ গ্রাহক বেড়েছে। তবে জেলার ৪৫টি মৌজার কয়েকটি গ্রামে কিছু সমস্যার জন্য এখনও বিদ্যুৎ পৌছানো যায়নি। তাঁর অভিযোগ, “এখন যা কিছু করার সবই জেলা প্রশাসন করছে। জেলা পরিষদ ক্ষমতাহীন হয়ে রয়েছে। তাই উন্নয়নের কাজও চলছে ঢিমে তালে। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে দায়িত্ব থাকলে কাজে গতি আসত।” যদিও তৃণমূলের জেলা কো-চেয়ারম্যান অরূপ চক্রবর্তীর বক্তব্য, “সরকারকে দোষ দিয়ে কী হবে? ৩৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও জেলার বহু গ্রাম এখনও আঁধারে রেখে দিয়েছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট। ওদের অকর্মণ্যতার এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে?” তাঁর আশ্বাস, ওই গ্রামে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য জেলা বিদ্যুৎ দফতরের সঙ্গে তিনি কথা বলছেন। |