তন্ময় ঘোষের ‘এখনও বিস্মৃত রাখালদাস’ শিরোনাম শীর্ষক (২৩।৩) পত্রের কিছু তথ্যগত ভ্রান্তি চোখে পড়ল। তন্ময়বাবু তাঁর পত্রে জানিয়েছেন রাখালদাসবাবুর পূর্বপুরুষেরা ঢাকার অন্তর্গত বিক্রমপুরের অধিবাসী ছিলেন। রাখালদাসের পূর্বপুরুষ কিন্তু প্রকৃত পক্ষে যশোহর বনগ্রাম মহকুমার ছঘরিয়ার অধিবাসী। তাঁর পিতামহ পূর্ববঙ্গ ছেড়ে মুর্শিদাবাদে আসেন। রাখালদাস তাঁর পিতার দ্বিতীয় পত্নীর সন্তান ছিলেন। প্রত্নতত্ত্ব লিপি ও মুদ্রাতত্ত্ব ছাড়াও উপন্যাস রচনাতেও তিনি প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। জ্যেষ্ঠ সন্তান অসীমের মৃত্যু পর তাঁর লেখা ‘অসীম’ উপন্যাস প্রবাসী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। প্রাচীন ইতিহাসকে ভিত্তি করে তিনি আরও ৪টি উপন্যাস লেখেন‘শশাঙ্ক’, ‘ধর্মপাল’, ‘করুণ’ এবং ‘ময়ূখ’। রাখালদাস আমৃত্য সাহিত্য পরিষদের সদস্য ছিলেন। কলকাতা যাদুঘরের সামান্য কেরানির পদ থেকে তিনি মুম্বাই-এর প্রত্মতত্ত্ব বিভাগের সর্বোচ্চ পদে আসীন হন। মহেঞ্জেদারোর কাছে একটি জঙ্গলে তিনি মৃগয়া করতে গিয়েছিলেন। ওই সময় ভুল পথে তিনি মহেঞ্জেদারোতে উপনীত হয়ে পাথর নির্মিত একটি ছুরি দেখেন। ওই ছুরি দেখে স্থানটিকে অত্যন্ত প্রাচীন বলে রাখালদাসের মনে হয়। সেই বিশ্বাসের সূত্র ধরেই মহেঞ্জেদারো আবিষ্কার। তাঁর মৌলিক প্রবন্ধ ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে রিপোর্ট’, ‘এপিয়া গ্রোফিয়া ইন্ডিকা’ এবং ‘এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নাল’-এ প্রকাশিত হয়েছে। প্রেসিডেন্সি কলেজের কৃতী ছাত্র রাখালদাস শেষ জীবনে কিছু দিন প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ত্যাগ করে কাশী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। মাত্র ৪৬ বছর বয়সে বহুমূত্র রোগে তিনি মারা যান। এ হেন মণীষীকে নিয়ে নামকরণ, বা অনুষ্ঠান করতে আমরা উদাসীন কেন? |
গত ১৬ মার্চ ছিল পরশুরাম, অর্থাৎ রাজশেখর বসুর জন্মদিন। ১৮৮০ সালে ১৬ মার্চ তিনি বর্ধমানের বামুনপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ওই গ্রামে তাঁর মামার বাড়ি। আর রাজশেখর বসুর পৈত্রিক নিবাস নদিয়া জেলার উলা বীরনগরের মোস্তাফি পাড়ায়। সেই পৈত্রিক বাড়ি অবশ্য আজ আর নেই। গত ১৬ মার্চ সবার বিস্মৃতির আড়ালে নীরবেই পার হয়ে গেল। তাঁর অনুবাদ-সৃষ্টি বাল্মিকী রামায়ণ, কালিদাসের মেঘদূত, শ্রীমদ্ভগবত গীতা, ব্যাসকৃত মহাভারত ছোটদের জন্য হিতোপোদেশের গল্প, বাংলা অভিধান চলন্তিকা আজও পরশুরাম, বা রাজশেখর বসুর অমর সৃষ্টি। ১৮৯৭ সালে রাজশেখর বসু বিহারের পাটনার পর্ব চুকিয়ে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছরেই বর্ধমানের শ্যামাচরণ দে-র পৌত্রী মৃণালিনীদেবীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ওই বিবাহ অনুষ্ঠান হয় বীরনগরের পৈত্রিক ভিটেয়। অথচবর্ধমান বা নদিয়া কেউই স্মরণ করল না তাঁর জন্মদিন ১৬ মার্চ। বড় আক্ষেপের কথা! |