|
|
|
|
বিনোদন |
শিল্পের খাসতালুকে
শিল্পীকে মমতা-সম্মান
দেবাশিস ভট্টাচার্য • বেঙ্গালুরু |
 |
|
শিল্প-সফরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কলকাতায় শিল্পপতিদের মুখোমুখি হওয়ার আগেই ঝটিতি মমতা চলে এলেন ইনফোসিস-উইপ্রো-আইটিসি ইনফোটেক-দের খাসতালুকে।
তবে তাঁর গন্তব্য ছিল ভিন্ন। বিমানবন্দর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় সোজা চলে গেল কল্যাণনগরে সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে-র বাড়িতে। তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পে দেশের অগ্রগণ্য এই শহরে এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সফরের একমাত্র ঘোষিত কর্মসূচি।
এবং তাকে ‘শিল্প সফর’ বলার কারণও রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই বলে দিয়েছেন, শিল্প মানে শুধু ভারী-ভারী কলকারখানা নয়। তাঁর দৃষ্টিতে গান-নাটক-যাত্রা-র মতো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও শিল্পের অন্তর্ভুক্ত।
মান্না দে-র হাতে মমতা আজ তুলে দিলেন ‘বিশেষ মহাসঙ্গীত সম্মান’। ৬ এপ্রিল কলকাতায় শুরু হচ্ছে এ বারের সঙ্গীতমেলা। সেই মঞ্চে গত বারের মতো এ বারও অনেক সঙ্গীতশিল্পীকে সম্মানিত করবেন মুখ্যমন্ত্রী। ঠিক তার আগে মান্না দে-র হাতে ‘মহাসম্মান’ তুলে দেওয়া, মমতার কথায়, “মহাকর্তব্য পালন”। তিনি সরকারে এসে বঙ্গশ্রী, বঙ্গবিভূষণ ইত্যাদি সম্মান দেওয়া চালু করেছেন। মান্না দে ‘বঙ্গবিভূষণ’ প্রাপ্তির অনুষ্ঠানেও নিজে হাজির থাকতে পারেননি। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রতিনিধি তখন বেঙ্গালুরু এসে শিল্পীর হাতে সেই সম্মান তুলে দেন। শিল্পীকে নিজের হাতে সম্মানিত করতে না-পারার একটা দুঃখবোধ তাই মমতার ছিল। “আজ নিজে এসে মান্নাদাকে সম্মানিত করতে পেরে গর্বিত হলাম,” বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মান্নাবাবুর গলায় মোটা সোনার চেন দিয়ে বাঁধানো একটি বড় স্বর্ণপদক পরিয়ে দেন মমতা। তাতে খোদাই করে লেখা ‘বাংলার গর্ব’, নীচে ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকার’। এর সঙ্গে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় দু’লক্ষ টাকার একটি চেক। এ ছাড়া, ৯৪টি হলুদ গোলাপের তোড়া, শিল্পীর কলকাতার বাড়ি যে পাড়ায় সেই সিমলের নকুড়ের মিষ্টি, পাঞ্জাবি-পাজামা, বাংলার হস্তশিল্পীদের কাজ প্রভৃতি। আগামী ১ মে ৯৪তে পা দেবেন শিল্পী। |
 |
মান্না দে-কে মহাসম্মান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। বেঙ্গালুরুতে।—নিজস্ব চিত্র |
আর এই সম্মানে দৃশ্যতই আপ্লুত মান্না দে বার বার মমতাকে বলতে থাকেন, “মমতাদি আপনি নিজে এসেছেন! এটাই আমার সব চেয়ে বড় পাওয়া।”
মুম্বই ছাড়ার পরে দীর্ঘ কাল বেঙ্গালুরুই মান্না দে-র স্থায়ী ঠিকানা। গত বছর মান্নাবাবুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে মমতা প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বাঙালির ‘হৃদয়ের শিল্পী’ বাংলায় ফিরে চলুন। উত্তর কলকাতায় মান্না দে-র পৈতৃক বাড়িতে স্থানাভাব। তাই শিল্পীর জন্য কলকাতায় থাকা, চিকিৎসা-সহ যাবতীয় বন্দোবস্ত রাজ্য সরকার করতে প্রস্তুত বলেও জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছিলেন, “মান্না দে আমাদের কাছে গিয়ে থাকলে আমরা ধন্য হব।”
শিল্পী রাজি হননি।
অনেকের ধারণা, এর পিছনে শিল্পীর কিছুটা অভিমানই হয়তো কাজ করেছে। কারণ, এক সময় তিনি কলকাতায় পাকাপাকি ভাবে ফিরে নিজস্ব সঙ্গীত অ্যাকাডেমি গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে কাজে সরকারি তৎপরতা যতটা দরকার ছিল, তখনকার সরকারের কাছ থেকে ততটা মেলেনি এমন ক্ষোভও ঘনিষ্ঠমহলে গোপন করেননি প্রবীণ শিল্পী।
আপাতত তাই মান্না দে বেঙ্গালুরুর স্থায়ী বাসিন্দা। মমতা এ দিনও তাঁকে বার বার অনুরোধ করেন, “এক বার কলকাতায় চলুন। আপনার শারীরিক অসুবিধা যাতে না হয় সে ভাবেই সব ব্যবস্থা করব।”
এক বার কলকাতায় যেতে যে তিনিও উৎসুক তা বলতে গিয়ে মান্নাবাবু জানান, তাঁর প্রয়াত স্ত্রীর স্মরণে তিনি একটি গানের সিডি রেকর্ড করতে চলেছেন। এ মাসেই বেঙ্গালুরুতে সে কাজ সম্পূর্ণ হবে। তাঁর ইচ্ছে, সেই সিডির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ হোক কলকাতায়। তখন তিনিও যাবেন।
শিল্পীর শরীর এখন অসুস্থ, অশক্ত। মেরুদণ্ডের অসুস্থতায় স্বচ্ছন্দে চলাফেরা করতেও পারেন না। ওয়াকার নিয়ে হাঁটতে হয়। গত বছর জানুয়ারিতে স্ত্রী সুলোচনাদেবীর মৃত্যুর পরে মানসিক ভাবেও ভেঙে পড়েছেন। তবু তাঁর ‘দৃপ্ত’ মন্তব্য, “আমার ধারণা আমি ১০০ বছর পূর্ণ করতে পারব।”
সেই সঙ্গে গান। মান্নাবাবু বলেন, “আমি এখনও পুরোদস্তুর গান গাইবার ক্ষমতা রাখি। আজও বসতে পারলে আসরে গান গাইতে আমি প্রস্তুত। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত যেন গান গেয়ে যেতে পারি, এটাই প্রার্থনা।”
মমতার সফর উপলক্ষে মান্না দে-র বাড়ির সামনের রাস্তায় তিলধারণের স্থান ছিল না। পুলিশকে রীতিমতো ব্যারিকেড করে ভিড় সামলাতে হয়। ছিল প্রচারমাধ্যমের বিস্তর ক্যামেরাও। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই মমতা জনতার দাবি মেনে বার বার গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের কাছে যান। কুশল বিনিময় করেন।
এর পরে প্রায় সওয়া ঘণ্টার পথ পেরিয়ে তিনি আসেন বসন্তগুড়িতে রামকৃষ্ণ মিশনে। সেখানে তখন সন্ধ্যারতি ও ভজন চলছে। উপস্থিত রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সহ-অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ। মমতা কিছু ক্ষণ সেখানে বসেন। তাঁর আসার পথে বেঙ্গালুরুর বিভিন্ন রাস্তায় বাস থেকে, গাড়ি থেকে, অটো থেকে মমতাকে উঁকিঝুকি মেরে দেখতে থাকেন সাধারণ মানুষ। মোটরসাইকেলে যুবকের দল মাঝে মাঝেই তাঁর গাড়ির কাছাকাছি এসে ঠিক কলকাতার মতোই ‘দিদি দিদি’ বলে তাঁর দিকে হাত বাড়িয়ে দেন। গাড়ির কাচ নামিয়ে মমতাও সেই ডাকে সাড়া দিতে দিতে এগোতে থাকেন।
ঠিক যেমনটি করেন তাঁর নিজের রাজ্যে।
|
|
 |
ভিডিও আর্ট নিয়ে কর্মশালায় জার্মান শিল্পী মার্সেল ওডেনবাখ।
বৃহস্পতিবার, স্টুডিও ২১-এ। ছবি: দেবীপ্রসাদ সিংহ
|
 |
কাটোয়ার সংহতি মঞ্চে হয়ে গেল বইমেলা কমিটির নাটক। |
|
|
 |
|
|