বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মিস করছি স্পেস স্টেশন,
কালই যেতে রাজি: সুনীতা
স্টনের রাস্তায় সার দিয়ে দৌড়চ্ছেন মানুষ, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের ট্রেডমিলেও তখন দৌড়ে চলেছেন এক মহিলা। তিনিও ম্যারাথনের প্রতিযোগী, সুনীতা উইলিয়ামস। শুধু ম্যারাথনে যোগ দেওয়া নয়, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে এ বছর ভোটও দিয়েছেন সুনীতা। খেলাধুলোর প্রতি টানটা ছোট থেকেই। এ বারের লন্ডন অলিম্পিকও মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র থেকেই দেখেছেন। মঙ্গলবার সায়েন্স সিটিতে একটি অনুষ্ঠানের পরে আনন্দবাজারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সুনীতা বললেন, “জীবন চলতেই থাকে। মহাকাশে থাকলেও তার ব্যতিক্রম হয় না।” সোমবার রাতে কলকাতায় এসেছেন সুনীতা। এ দিন ‘ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়াম’-এর আয়োজনে সায়েন্স সিটিতে স্কুলপড়ুয়াদের সামনে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন তিনি। হাতের কাছে এক জন মহাকাশচারীকে পেয়ে স্বাভাবিক ভাবেই উচ্ছ্বসিত পড়ুয়ারাও। সুনীতার কথায়, “খুদেদের কাছে এমন ভালবাসা পেয়ে আমি গর্বিত। আমেরিকাতেও স্কুলপড়ুয়াদের কাছে প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি।”
সায়েন্স সিটিতে স্কুলপড়ুয়াদের সামনে মহাকাশচারী। মঙ্গলবার।—নিজস্ব চিত্র।
এই মুহূর্তে তিন-তিনটে রেকর্ড রয়েছে সুনীতার ঝুলিতে দীর্ঘতম মহাকাশযাত্রা, সবচেয়ে বেশি বার এবং বেশিক্ষণ মহাকাশে হাঁটা। এক্সপিডিশন ৩৩-এ মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে কম্যান্ডারের সম্মানও পেয়েছেন তিনি। একের পর এক কৃতিত্ব, সুনীতার অবশ্য তাই নিয়ে বিশেষ মাথাব্যথা নেই। প্রশ্ন করতে হেসে বললেন, “রেকর্ড গড়েছি ঠিকই। কিন্তু কিছু দিন পরে সেটা অন্য কেউ এসে ভেঙেও দেবে।” সুনীতা নিজে যাই বলুন, তাঁকে কাছে পাওয়ার জন্য মুখিয়ে ছিল এ শহর। বেলা ন’টার পর থেকেই একের পর এক স্কুলবাস সায়েন্স সিটিতে ঢুকতে শুরু করে। প্রেক্ষাগৃহে তিলধারণের জায়গা নেই। পড়ুয়াদের কেউ জিজ্ঞাসা করল মহাকাশে তরল সংক্রান্ত গবেষণার কথা, কারও প্রশ্ন ইসরোর সঙ্গে নাসার যোগসূত্র নিয়ে। কেউ বা জিজ্ঞাসা করল ক্লিওপেট্রা-নেফারতিতির কথা। সুনীতাদের সঙ্গে স্পেস স্টেশনে আট পা-ওলা আরও দুই মহাকাশচারী ছিল, যাদের কথা তেমন শুনতে পাওয়া যায় না। তাদের নামই ক্লিওপেট্রা ও নেফারতিতি। মিশরের দুই রানির নামে দুই মাকড়সা। তবে নেফারতিতি পৃথিবীতে ফিরতে পারলেও সাদা-কালো ক্লিওপেট্রাকে বাঁচানো যায়নি, জানালেন সুনীতা।
মহাকাশ স্টেশনের দিনগুলো কেমন করে কাটে, কী খান, কোথায় ঘুমোন, তার একটি ভিডিও এ দিন দেখান সুনীতা। এ বার মহাকাশ থেকে ফেরার আগে ভিডিওটি বানিয়ে এনেছিলেন তিনি। সেটা দেখেই এক খুদের প্রশ্ন, “মহাকাশে যেতে ভয় করেনি?” সুনীতা বললেন, “প্রথম বার মহাকাশে ঘুরে বেড়ানোর সময় কিছুটা ভয় লেগে ছিল। এক বার তো স্টেশন মেরামত করতে গিয়ে এক রাত ঝুলে থাকতে হয়েছিল।” এখন ভয় করে না? “এখন মনে হয় পৃথিবী থেকে যেন একটা ছুটি কাটাতে গিয়েছি। খুব মিস করছি স্পেস স্টেশনটা। বললে, কালই যেতে রাজি আছি।” অথচ মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্ন কিন্তু দেখেননি ছোটবেলায়। বাবা নিউরো-অ্যানাটোমিস্ট, মা এক্স-রে টেকনিশিয়ান। ফলে বাড়িতে জীববিজ্ঞান নিয়েই বেশি আলোচনা হত। সুনীতা ভাবতেন পশুচিকিৎসক হবেন। কিন্তু হঠাৎ বদলে গেল ইচ্ছে। “খুব ভাল সাঁতার কাটতাম। বাইক চালাতেও পারদর্শী ছিলাম। তাই নেভিতে ঢুকলাম। হেলিকপ্টার চালানো শিখলাম।” শেষে ১৯৯৮ সালে প্রথমে নাসার সঙ্গে যুক্ত হওয়া। সুনীতা বললেন, “জীবনে কখনওই প্রথম চাওয়া পূর্ণ হয়নি আমার। সব সময় দ্বিতীয়টাকেই পেয়েছি।” তবে মহাকাশচারী হতে পেরে এখন তিনি খুব খুশি।
এক খুদের জিজ্ঞাসা, “স্পেস স্টেশনে কখনও এমন পরিস্থিতিতে পড়েছেন, যখন মনে হয়েছে, বিজ্ঞান নয় ভগবানই ভরসা?” সুনীতা এ বার খানিক থমকালেন। আগেই জানিয়েছিলেন, মহাকাশে যাওয়ার সময় উপনিষদ ও ভগবত গীতা নিয়ে যান। কিছুটা থেমে বললেন, “দু’বার মনে হয়েছিল। মহাকাশ থেকে দেখছিলাম, পৃথিবীর একটা অংশে এক দিক থেকে অন্য দিকে ধেয়ে যাচ্ছে ঝড়। অসহায় লেগেছিল।” দ্বিতীয় বার মনে হয়েছিল, মহাকাশে ঘন কালো অন্ধকার একটা অঞ্চল দেখে। সুনীতা জানালেন, ওই অংশটায় কোনও গ্রহ-নক্ষত্র কিছুই নেই। যত দূর চোখ যায়, শুধুই অন্ধকার। বললেন, “মনে হয়েছিল, শত চেষ্টা করলেও এ রহস্য জানতে পারব না।”
কথায় কথায় নাসার এই নভশ্চর জানালেন, স্পেস স্টেশনে আসতে চাইলে বিজ্ঞানের যে কোনও বিষয় নিয়েই পড়তে পারো। কারণ বিজ্ঞানের সব কিছুই মহাকাশে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয়। “এমনকী কলের মিস্ত্রির কাজটাও শিখে রাখা দরকার। এ বার পাঁচ-পাঁচ বার সারাতে হয়েছিল বাথরুমটা,” বলেই হো হো করে হাসলেন সুনীতা। তড়িঘড়ি মহাকাশে পাড়ি দিতে হলে প্রথম পাঁচটি জিনিস কী নেবেন, সে উত্তরও আদায় করে নিল খুদেরা। সুনীতা জানালেন, স্পেস স্টেশনে জামাকাপড়ের বন্দোবস্ত আগে থেকেই থাকে। তাই সে সব না নিলেও চলবে। খাবারও প্রচুর। “তাই পরিবারের একটা ছবি সঙ্গে রাখব। পোষা কুকুর দু’টোকে খুব মিস করি, ওদের কিছু জিনিস স্মৃতি হিসেবে নিয়ে যাব। দিদা-র দেওয়া নেকলেস, বাবার দেওয়া উপনিষদ তো থাকবেই। আর সে সঙ্গেই এক প্যাকেট শিঙাড়া (সামোসা) অবশ্যই।” এ দিন খাবারের প্রসঙ্গে বার বারই ঘুরেফিরে এসেছে তাঁর শিঙাড়া-প্রীতির কথা। ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ সায়েন্স মিউজিয়ামের এক কর্তা জানালেন, প্রথম বার কলকাতায় এসে রসগোল্লা-মিষ্টি দই চেখে দেখার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন সুনীতা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.