রাতভর নাটক
ঊরুভঙ্গম্
মন অভিজ্ঞতা আগে হয়নি কলকাতার! এখানে রাতজাগা উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর বসে, রাতভর নাট্যোৎসব চলে। কিন্তু, একটিই নাটক, যা শুরু হচ্ছে রাত ১১টায় এবং পর্দা পড়ছে ভোর ৫টায় এমনটা এর আগে ঘটেনি বলেই নাট্যরসিকদের বক্তব্য। প্রথম অভিনয় ছিল ১৬ ফেব্রুয়ারি। সেই রাতে অ্যাকাডেমি প্রেক্ষাগৃহে দর্শক সমাগম বুঝিয়ে দিয়েছিল, ‘কসবা অর্ঘ্য’র এই প্রয়াসে সাড়া মিলেছে। ভাসের ‘ঊরুভঙ্গম্’-এর অনুপ্রেরণায় কলকাতার এই নাট্যদল নাটকটি মঞ্চস্থ করল।
শুধু ভাস-ই নন, বুদ্ধদেব বসুর ‘প্রথম পার্থ’, শাহযাদ ফিরদৌস-এর উপন্যাস ‘ব্যাস’, রাজশেখর বসুর ‘মহাভারত’, কাশীরাম দাসের মহাভারত, শিবাজি সাওন্তের মরাঠি উপন্যাস ‘মৃত্যুঞ্জয়’, ধর্মবীর ভারতীর ‘অন্ধযুগ’, তিজন বাঈ-এর ভাষ্য থেকে প্রচুর ভাবনা এই নাটকে নেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন ‘ঊরুভঙ্গম্’-এর পরিচালক মণীশ মিত্র। বস্তুত, এর মহড়া পর্ব চলেছে টানা তিন বছর। কসবা অর্ঘ্য-র এই প্রযোজনা বহুভাষিক। মূলত বাংলা, সঙ্গে সংস্কৃত ও ইংরেজি। মঞ্চে ছ’ঘণ্টা ধরে এসেছে প্রায় সমগ্র মহাভারত। অবশ্যই ভিন্ন আঙ্গিকে। মুখ্য ভূমিকায় রণিত মোদক (সঙ্গের ছবি) ছাড়াও অভিনয়ে দেশের নানা প্রান্তের শিল্পীরা। আছেন কেরলের সুরজ নাম্বিয়ার, তিরুঅনন্তপুরম থেকে অজিত কুমার, অসমের কল্পনা বরুয়া, ভরতনাট্যম শিল্পী অম্বালী প্রহরাজ। বারাণসী থেকে আসছেন নৌটঙ্কি শিল্পী পুনিত মিশ্র। মঞ্চে থাকবেন পুরুলিয়ার ২০ জন ছো নৃত্যশিল্পীও।
নির্দেশনা ছাড়া ‘ঊরুভঙ্গম্’-এর নাট্যরূপও দিয়েছেন মণীশ। বলছেন, ‘আসলে দুর্যোধনের ঊরুভঙ্গ এখানে প্রতীক মাত্র। নাটকে বোঝানো হয়েছে, ঊরুভঙ্গ হচ্ছে ক্ষমতার কেন্দ্রেরও। শিল্পীদের পোশাক থেকে শুরু করে নানা বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার হয়েছে পরম্পরাগত ঐতিহ্য মেনে।’ ছ’ঘণ্টার এই নাটকে কুড়ি মিনিটের বিরতি মোট চারটি। বিরতিতেও প্রেক্ষাগৃহের বাইরে নানা অনুষ্ঠান। তাতে অন্যদের সঙ্গে শামিল ছত্তীসগঢ়ের পাণ্ডবানী শিল্পী ঊষা বার্গলে। পরবর্তী অভিনয় ৬ এপ্রিল রবীন্দ্র সদনে, ৭ তারিখ নন্দন-৪ প্রেক্ষাগৃহে এই নাটক নিয়েই আলোচনাসভা।

নবজীবন
গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে একটি ছায়াচিত্র করার সময় উদয়শঙ্করের প্রয়োজন হয়েছিল নেপথ্যের জন্য একটু বর্ণময় প্রেক্ষাপট। পেশাদার আলোকচিত্রীদের কাজে মন ভরল না তাঁর। সে সময় একটি স্লাইডে আঙুল দিয়ে নকশা করছিলেন অমলাশঙ্কর, ওইটিই পছন্দ হল এবং সফল হল কাজ। ছবি আঁকার সেই শুরু, বলছিলেন অমলাশঙ্কর। যশোরে বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যেত নদী, প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা তখনই, বাবার উৎসাহে শিখেছিলেন আলপনা দেওয়া। অজস্র ছবি তৈরির মধ্য দিয়ে নীরবে চলেছে সাধনা, তবে তা ছিল সাধারণের অগোচরে। পৌত্র জ্যোতির্ময় এক রকম জোর করেই আয়োজন করেন প্রদর্শনীর। শিল্পীর কাছে এ তাঁর নতুন জীবন প্রাপ্তিরই শামিল। ‘নবজীবন’ শীর্ষকে এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করবেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন, আগামী বৃহস্পতিবার ৫ টায়, আকাদেমিতে। থাকবেন শিল্পী রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়। চলবে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত, ১-৮টা।

কাগজ বাঁচাতে
কাগজপত্রেরও শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য মুক্ত বাতাস দরকার হয় মনে করিয়ে দিলেন ব্রিটিশ মিউজিয়মের চিত্র শিল্পকলা বিভাগের প্রধান সংরক্ষক জোয়ানা কোসেক। পোল্যান্ড লুবিনের মেরি কুরি ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি নিয়ে পড়া শেষ করে চলে আসেন লন্ডনে। ক্যাম্বারওয়েল কলেজ অব আর্ট থেকে সংরক্ষণবিদ্যায় শিক্ষা। জোয়ানার খ্যাতি কাগজ সংরক্ষণ বিষয়ে। ১৯৮৯-এ যোগ দেন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে। ১৯৯৪-এ ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হলে কলকাতা টারসেন্টিনারি ট্রাস্টের কাজে যুক্ত হয়েছিলেন। ২০০১-০৫ পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন ‘ওয়াটার অন পেপার’ শীর্ষক লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি প্রকল্পে। লিখেছেন কাজের বিষয়ে বই। ২০১২-য় ক্লেয়ার হ্যাম্পসন বৃত্তি পেয়েছেন ওঁর ‘পেপার অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট: এ হ্যান্ডবুক অন হাউজিং পেপার’ বইটির জন্য। জোয়ানা সম্প্রতি এ শহরে এসে ঘুরলেন নানা মিউজিয়মে। ভারতীয় সংগ্রহালয়, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল এবং জোকার গুরুসদয় সংগ্রহশালায় তিনি বললেন কাগজ সংরক্ষণের নানা দিক নিয়ে।

সুতানুটি বইমেলা
প্রতি বসন্তেই পুরনো কলকাতার ঐতিহ্য-স্মৃতি ফিরিয়ে আনে সুতানুটি বইমেলা। আভিজাত্য আর বনেদিয়ানায় স্নাত উত্তর কলকাতার এই বইমেলা এ বার খোদ শোভাবাজার রাজবাড়ির নাটমন্দিরেই, ৮-১৪ এপ্রিল, রোজ ৪-৯টা। বক্তৃতামঞ্চটিও বাঙালির প্রিয় সাহিত্যিক হেমেন্দ্রকুমার রায়ের নামে, তাঁর মৃত্যুর পঞ্চাশ বছরকে খেয়াল রেখে। বাঙালিয়ানা বাংলা ছবিতে আদৌ আর আছে না অপসৃত, তা নিয়ে ‘হীরালাল সেন স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, ৯ এপ্রিল। বাঙালির অতি প্রিয় ফুটবল নিয়ে ‘দুঃখীরাম (উমেশ) মজুমদার স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় ১০ এপ্রিল, সঙ্গে দেখানো হবে ‘ধন্যি মেয়ে’। পূর্ণচন্দ্র দে উদ্ভটসাগর প্রণীত কবিয়াল ‘ভোলা ময়রা’র একমাত্র জীবনী দেবাশিস বসুর সম্পাদনায় বই আকারে প্রকাশ করবে সূত্রধর, ১১ এপ্রিল, ওই দিনই ‘ভোলা ময়রা স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন সর্বানন্দ চৌধুরী, সঙ্গে দেখানো হবে ‘ভোলা ময়রা’ ছবিটিও। ক্ষীরোদপ্রসাদ বিদ্যাবিনোদের দেড়শো বছর উপলক্ষে তাঁকে নিয়েই এ বারের বইমেলার স্মারক সংকলন ‘ভাষভূমি’ (সম্পা: বাসবী রায়) বেরোবে ১২ এপ্রিল, ওই দিনের স্মারক বক্তৃতা দেবেন সুরজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, আর নাটকের গানে দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন আরও নানা অনুষ্ঠান। আয়োজনে সুতানুটি বইমেলা কমিটি, মেলাসাথী সুতানুটির আর এক সরস ঐতিহ্য, চিত্তরঞ্জন মিষ্টান্ন ভাণ্ডার।

ঘরের কথা
এই দেশের প্রকৃত দারিদ্র্য ও পুষ্টির সন্ধান করার জন্যেই পরপর সংখ্যায় বেছে নেওয়া হল রান্না-খাওয়ার বিষয়কে।... এক জনগোষ্ঠীর নিজস্ব জীবন যাপনের সামঞ্জস্য আর ‘পিতৃতান্ত্রিক ক্ষমতা’র বাইরে সমাজে মেয়েদের নিজস্ব পুষ্টি ও সংরক্ষণ বিজ্ঞান ভাবনার চিহ্ন বিশ্লেষণ। ‘ডেস্ক থেকে’ লিখছেন সম্পাদক জয়া মিত্র তাঁর ভূমধ্যসাগর-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায়। এ সংখ্যায় সম্পাদক নিজেই যেমন লিখেছেন ‘রান্নামঙ্গল’, তেমনই অন্যান্য বিশিষ্ট লেখকের কলমে প্রকাশ পেল বাঙালির খাদ্য, রান্না নিয়ে রকমারি ভাবনা, মানভূম জনজীবনের খাদ্যাভ্যাস, মঙ্গলকাব্যে বাঙালির খাওয়াদাওয়া, গ্রামীণ খাদ্যে পুষ্টিগুণ ইত্যাদি হরেক রকম বিষয়, যা রীতিমতো ভাবিয়ে তুলবে পাঠককে। আর রয়েছে বিশ্বেশ্বরী পঞ্চাধ্যায়ীর ‘ঘরের কথা’ ও আরণ্যক বসুর চমৎকার কবিতা ‘যশোরের রান্নাঘর’।

যুগলবন্দি
বসন্তে শুধু ফোটা ফুলের মেলা নয়, তাতে লুকিয়ে আছে বেদনার আভাসও এই নিয়ে আলাপন চলছিল দুই শিল্পী-- সেতারবাদক পার্থ বসু এবং চিত্রশিল্পী প্রসেনজিৎ সেনগুপ্তের মধ্যে। ছড়ানো আর্ট গ্যালারির মধ্যে যেমন ব্রতীন খান, অশোক মল্লিক, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, সঞ্জয় ভট্টাচার্যরা ক্যানভাসে রঙ লাগাচ্ছিলেন, তেমনই তাঁদের একপাশে মাটিতে রাখা ক্যানভাসে এক শিশু একমনে উজাড় করছিল তার ভাবনা। সম্প্রতি ইমামি চিজেল আর্ট গ্যালারিতে আয়োজন করা হয়েছিল এমনই অভিনব যুগলবন্দি-র। সেতারে পার্থ বসু, ছবিতে পঞ্চ শিল্পী। টানা বাজনা নয়, কিছুক্ষণ সেতার, কিছুক্ষণ ছবি আঁকা। তারে, তবলায়, তুলিতে শিল্পীরা ছড়িয়ে দিলেন বসন্তের সেই রঙ, যেখানে প্রথম শ্রেণিতে পড়া শালক্য-র খুশি আর প্রসেনজিতের আলো-আঁধারি নারীমুখের উদাস গভীর চেয়ে থাকা, সব পাওয়া না পাওয়া মিলেমিশে একাকার।

ঢোকরা শিল্প
লোক-পরম্পরায় হস্তশিল্পের নানা বিচিত্র ধারা দেশ জুড়ে বহমান। একদা তারা ছিল প্রাত্যহিক দিনযাপনের অঙ্গ, আজ হস্তশিল্প মেলা থেকে কিনে এনে ঘর-সাজানর সামগ্রী। ঢোকরা কামাররা ছিল যাযাবর, গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে পুরনো ভাঙা পেতলের জিনিস কিনে নতুন গড়িয়ে দেওয়াই ছিল তাদের পেশা। আজ সে পেশার দিন গিয়েছে, ঢোকরা কামাররা কোথাও কোথাও থিতু হয়েছে। তাদের কাজের ধারাও বদলেছে। ধাতুশিল্পের পরম্পরা এ দেশে বহু পুরনো, সিন্ধু সভ্যতা থেকেই তার নিদর্শন মিলছে। সেই ধারাবাহিকতায় ঢোকরা কামারদের কাজ নিয়ে অনুসন্ধান করেছেন বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগ্রহশালার কিউরেটর রঙ্গনকান্তি জানা (ঢোকরা আর্ট অব ওয়েস্ট বেঙ্গল, ইনস্টিটিউট অব হিস্টরিক্যাল স্টাডিজ, কলকাতা ও রক্তকরবী, ৬০০.০০)। কাজের পদ্ধতি, শিল্পনিদর্শন, শিল্পীদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার, ছবি, সবই আছে।

স্বীকৃতিবিহীন
মূলত কলকাতা নিয়ে, বা সার্বিক ভাবে বাংলার ইতিহাস নিয়ে যাঁরা নাড়াচাড়া করেছেন, তাঁদের এই পত্রিকাটি ঘাঁটতেই হয়েছে। ক্যালকাটা হিস্টরিক্যাল সোসাইটির মুখপত্র বেঙ্গল পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট-এর (সূচনা ১৯০৭) মতো পত্রিকা এ শহর থেকে বিশেষ হয়নি। লেখায়, আলোচনায়, ছবিতে এ পত্রিকা আজও ইতিহাসের রত্নখনি। কিন্তু গবেষকরা কী ভাবে খুঁজে পাবেন কবে কী বেরিয়েছিল? ১৯৮৮-তে এর প্রথম ৭৮ বছরের ইনডেক্স ছাপা হয়েছিল, তারপর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য লেখ্যাগারের সহ-অধিকর্তা আনন্দ ভট্টাচার্য পত্রিকার শতবর্ষের রচনাপঞ্জি দুই মলাটে ধরে দিলেন (ইনডেক্স টু বেঙ্গল পাস্ট অ্যান্ড প্রেজেন্ট ১৯০৭-২০০৭, ১০০.০০)। লেখা, ছবি, গ্রন্থ-আলোচনা সব মিলিয়ে এক অমূল্য ভাণ্ডার। এর পাশাপাশি আনন্দ আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজও করে দিয়েছেন-- কলকাতারই আর এক বিদ্বৎ প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট অব হিস্টরিক্যাল স্টাডিজ-এর পত্রিকা কোয়ার্টার্লি রিভিউ অব হিস্টরিক্যাল স্টাডিজ-এর (১৯৬১-২০০৮) রচনাপঞ্জি। পরিশ্রমসাধ্য এই সব পঞ্জিকরণ স্বীকৃতিবিহীন বললেই চলে, মনে রাখেন শুধু গবেষকরা।

ব্যক্তিগত উদ্যোগ
গুরুসদয় সংগ্রহশালা এ বার সমৃদ্ধ হচ্ছে ব্যক্তিগত সংগ্রহের পুরাতাত্ত্বিক সামগ্রীতে। প্রায় একক উদ্যোগে পর্ণশ্রীতে ভুবন মিউজিয়াম ও আর্ট গ্যালারি গড়ে তুলেছিলেন সংগ্রাহক অমলেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। হরিনারায়ণপুর, চন্দ্রকেতুগড়, দেউলপোতা ও নানা অঞ্চল থেকে সংগৃহীত হয়েছিল এই সব প্রত্নবস্তু। এর মধ্যে রয়েছে প্রাচীন মৃৎপাত্র, পোড়ামাটির গয়না, লিপি, মুদ্রা অথবা চন্দ্রকেতুগড়ের পোড়ামাটির ফলক (সঙ্গে তারই একটি যক্ষীমূর্তি)। নানা কারণে এগুলির রক্ষণাবেক্ষণ দুরূহ হয়ে উঠছে বলে তিনি এগুলির একাংশ সম্প্রতি দান করে দিলেন গুরুসদয় সংগ্রহশালায়। ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় হাজারখানেক সামগ্রী তালিকাভুক্তির কাজ চলছে, জানালেন সংগ্রহশালার কিউরেটর বিজনকুমার মণ্ডল। পরিকল্পনা আছে এগুলি নিয়ে একটি নতুন প্রত্নতাত্ত্বিক গ্যালারি গড়ে তোলার।

তোমার পরশ আসে
আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু... গাইবার সময় যখন ‘তবু অনন্ত জাগে’তে এসে পৌঁছলাম, সুচিত্রাদি থামিয়ে দিয়ে বললেন ‘অত ঢিমে লয়ে গাস না। এটা টপ্পা নয়, কোনও দানা নেই। তুই কথাগুলো বিশ্বাস করিস বলেই তো গাইছিস। দেখ ফুটে উঠছে কথাগুলো।’ সুচিত্রা মিত্রের স্মৃতিতে ফিরে যাচ্ছিলেন মনীষা বসু। তাঁর নতুন রবীন্দ্রগানের অ্যালবাম ‘তোমার পরশ আসে’তে (সাগরিকা) সুচিত্রা মিত্রের আবৃত্তি, পাঠ সুবীর মিত্রের। আর প্রচ্ছদে লেখা: ‘ট্রিবিউট টু সুচিত্রাদি’। সুচিত্রা মিত্র নিজে পরীক্ষা নিয়ে তাঁকে রবিতীর্থ-এ শেখার সুযোগ করে দিয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়ঃসন্ধি। মামাবাড়িতে তিন বছর বয়স থেকেই দেবব্রত বিশ্বাস রাজেশ্বরী দত্ত সুচিত্রা মিত্র কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেকর্ডে রবীন্দ্রগান শুনতে-শুনতে বড় হওয়া। শুনেই গান তুলতেন, কোনও তালিম ছিল না। মা গান গাইতেন, তবে বাবার ইচ্ছেতেই গাইতে আসা। রবীন্দ্রসংগীতে রবীন্দ্রভারতী-রও কৃতী ছাত্রী তিনি। পেয়েছেন নানা পুরস্কার ও সম্মান। সুচিত্রা মিত্রের ইচ্ছে আর উদ্যোগেই ’৯৬-তে তাঁর প্রথম ক্যাসেট ‘এ আলোকে এ আঁধারে’। সুচিত্রার কাছে চিরকাল শেখার পাশাপাশি প্রায় সতেরো বছর শিখেছেন পূর্বা দামের কাছেও। ‘কী সুর বাজে আমার প্রাণে আমিই জানি, মনই জানে’, নিজের অ্যালবামে গাওয়া রবীন্দ্রনাথের এই গানটি উল্লেখ করে মনীষা বলেন: ‘তাঁর গান আমায় অনুভূতির গভীরে টেনে নিয়ে যায়।’


কবি
কবিতায় নতুন আন্দোলন গড়ে তুলতে গিয়ে তাঁর অনেক বন্ধু যখন নিজেদের লেখায় আত্মকেন্দ্রিকতা আর আত্মজৈবনিকতার ছবি ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত, আলোক সরকারকে কিন্তু তখন টানছে লেখার ভিতর দিয়ে এক শুদ্ধ সত্তার খোঁজ। সেই পথে তাঁর নিকট সহমর্মী দীপঙ্কর দাশগুপ্ত, তরুণ মিত্র, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত— অচিরেই কলকাতার দক্ষিণ প্রান্ত থেকে এর ফল হিসেবে প্রকাশ পাবে ‘শতভিষা’ পত্রিকা। ভাঙাচোরা শহুরে বাস্তবের মাঝেই এই সর্বাঙ্গীণ শুদ্ধতা আর একই সঙ্গে এক মহাজাগতিক ইশারার হাতছানি নিজেকে গুটিয়ে রাখা এই কবিকে তাই আজীবন তাড়া করে গিয়েছে। সম্প্রতি তাঁর বিরাশি পূর্ণ করার এক সম্মানসভায় এ কথাই বললেন এ সময়ের চিত্রকর-কবি-সাহিত্যিকেরা। টেরাকোটা আর মাটির বিবিধ কারুকাজে ভরপুর ঘরোয়া সভাকক্ষটিতে সে সম্মানসভাও শুদ্ধ আনন্দ আর বসন্তের বর্ণে-গন্ধে ভরপুর হয়ে উঠল। ফিরে ফিরে এল রাসবিহারী অ্যাভিনিউতে তাঁদের বিখ্যাত বসতবাড়ি, পারিবারিকতা আর তাঁর প্রয়াত অগ্রজ কবি অরুণকুমার সরকারের কথাও আলোকের অনেক কবিতাতেই যে পরিবেশের আদল আর ঐতিহ্যের ছাপ খুঁজে পাবেন পরবর্তী কালের কবিতারসিকেরা। পুরনো কলকাতা আর তার ক্ষয়িষ্ণু সমাজের এই শিকড়ে পা রেখেই সৃষ্টিশীলতার আকাশে উড়ান আলোক সরকারের। এই পরিপার্শ্ব থেকে আহরণ যেমন করেছেন, তেমনই তাকে অতিক্রম করে গিয়েছেন বারে বারে। ‘আলোককে কোনও বাঁধা-ধরা ছকে ফেলা যাবে না’ বললেন অমিয় দেব। মুগ্ধ হয়ে বসে আলোকের নিজের কথা শুনলেন সুদূর বর্ধমান থেকে ছুটে আসা এক সময়ের ছাত্ররা; গৌতম বসু, হেমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সতীর্থরা। সভাকক্ষের সীমানা ছাড়িয়ে বাইরেও মাঝে মাঝেই ভেসে গেল পারমিতা রায়ের রবীন্দ্রগান।
   

Content on this page requires a newer version of Adobe Flash Player.

Get Adobe Flash player


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.