কম বয়সে বিয়ে শুনলেই রুখছেন স্বনির্ভর মহিলারা
যেখানেই নাবালিকার বিয়ের ব্যবস্থা হচ্ছে বলে খবর পাচ্ছেন, ওঁরা ছুটে যাচ্ছেন। গত দু’বছরে রুখেছেন অন্তত ৩৫টি। রাজনীতি ও প্রশাসনের চালকেরা তো বটেই, মন্দিরের কর্তা থেকে মসজিদের ইমাম পর্যন্ত সকলেই মেনে নিচ্ছেন ওঁদের কাজের গুরুত্ব।
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে রেজিনগর মোড় থেকে সর্বাঙ্গপুর যাওয়ার রাস্তায় কিলোমিটার চারেক এগিয়ে গেলেই কাশীপুর পঞ্চায়েত এলাকা। সেখানেই ছাগল ও মুরগি পালনের জন্য ‘সরস্বতী স্বনির্ভর গোষ্ঠী’ গড়েছিলেন মামনি ঘোষ, পাপিয়া মণ্ডল, বন্দনা প্রামাণিক, সমাপ্তি মণ্ডল, শ্যামলী মণ্ডলেরা। কিন্তু এখন সে কাজের বাইরে তাঁদের অন্যতম বড় কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কোনও নাবালিকার বিয়ের কথাবার্তা চলছে শুনলেই ছুটে যাওয়া। গোষ্ঠীর প্রধান, গোপালপুর গ্রামের তিরিশ ছুঁই-ছুঁই মামনি একাই ১৫টি বিয়ে রুখেছেন। তাঁর দেখাদেখি ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দলের অন্যেরাও।
কাশীপুর পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রধান টুম্পা মণ্ডলের মতে, “নাবালিকা বিয়ে রুখতে মহিলারা এগিয়ে আসায় কাজ হয়েছে।” বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের আনিসুর রহমান বলেন, “ওই গোষ্ঠীর মহিলাদের চেষ্টাতেই একের পর এক বিয়ে ঠিক হয়েও পরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে।” বেলডাঙা ২-এর বিডিও অরিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, “এটা বড় কাজ। কোনও প্রকল্পের মাধ্যমে ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া যায় কি না, দেখছি।”
গোপালপুর উত্তর নগর মসজিদের ইমাম জুলফিকার শেখ বলেন, “প্রতিটি সচেতন মানুষেরই উচিত, এ রকম বিয়ে বন্ধ করতে এগিয়ে আসা। আমাদের কাছে পরামর্শ চাইলেই বিয়ে বন্ধ করতে বলি।” গোপালপুর মন্দির কমিটির প্রধান মৃণালকান্তি ঘোষের দাবি, “নাবালিকা বিয়ে কমেছে। তার জন্য শিক্ষার প্রসার ছাড়াও স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের ভূমিকা আছে। আমরাও বোঝাচ্ছি।”
সরস্বতী স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যারা।—নিজস্ব চিত্র।
কিন্তু স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা হঠাৎ এগিয়ে এলেন কেন?
মামনির মনে পড়ে, “আমার বাড়ির পাশে একটি মেয়ে স্কুলে পড়ার সময়ে প্রেমিককে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়েছিল। পরে সন্তান হতে গিয়ে মারা যায়। অনেক ছোট বয়সের এই ঘটনাটা আমি ভুলতে পারিনি। তাই কম বয়সে বিয়ে শুনলে স্থির থাকতে পারি না।” তাঁর দলের মহিলারা কেউ গোপালপুর, কেউ বা পাশের ঝিঁকরা গ্রামের বাসিন্দা। সকলেই ছোটবেলা থেকে দেখেছেন, কম বয়সে বিয়ের পরিণতি কত খারাপ হতে পারে।
মামনির অভিজ্ঞতা, “১৩ থেকে ১৬ বছরের মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা মূলত গরিবদেরই বেশি। বাধা দিতে গেলে তাঁরা বলেন, কী ভাবে মেয়ে ঘরে রাখব? খাওয়া-পরা আর পড়াশোনার খরচ তো সোজা নয়!” কিন্তু এই সব প্রশ্নের মুখোমুখি হলে কী জবাব দিতে হবে, তা-ও তাঁরা বুঝে নিয়েছেন। মামনি বলেন, “বাড়ির কর্তাকে উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করি, মেয়ের কী ভয়ানক ক্ষতি হতে পারে। তাতেও কাজ না হলে পঞ্চায়েত সদস্যের, কখনও বা পাড়ার মোড়লদেরও সাহায্য নিয়েছি।”
শুধু বাইরের সমর্থন নয়। পাশে দাঁড়াচ্ছে পরিবারও। মামনি নিজেই জানান, স্কুল-পড়ুয়া দুই ছেলেমেয়ের দেখাশোনা থেকে শুরু করে বাড়ির নানা কাজকর্মের অনেকটাই করেন তাঁর স্বামী দিলীপ ঘোষ। এ ছাড়া শাশুড়ি স্বর্ণময়ী দেবী তো আছেনই। দিলীপের কথায়, “যতটুকু পারি, ওকে সাহায্য করার চেষ্টা করি। দু’এক বার বিয়ের খবর পেয়ে আমিও ওকে সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছি।”
এ ভাবেই এক দিন আটকে গিয়েছিল কাশীপুরে রঘুবীর মণ্ডলের ১৪ বছরের মেয়ের বিয়ে। তাঁর কথায়, “পাড়ার সোনার কারবারি এক পাত্রের খোঁজ এনেছিল। আমিও চাইছিলাম বিয়ে দিতে। কিন্তু ওই মেয়েরা এসে এমন বোঝাল!” এখন কিন্তু তাঁর মনে হয়, বিয়েটা না দিয়ে ভাল হয়েছে। তাঁর উপলব্ধি, “অল্প বয়সে বড় মেয়ের বিয়ে দিয়ে সমস্যা হয়েছে। ছোট মেয়েটা পড়াশোনা করুক। পরে বরং ভাল পাত্র দেখে বিয়ে দেব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.