দু’-এক বছর নয়, ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে লাইসেন্স ছাড়াই চলছে বহু করাতকল। তা জানেন বন দফতরের কর্তারাও। দফতরের অভিযানে সাময়িক বন্ধ হয় কলগুলি। কিন্তু রেশ কাটলেই যে কে সেই! অভিযোগ, দফতরের গাফিলতির পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রশ্রয়েই অবৈধ কলের এত বাড়বাড়ন্ত।
জেলায় রূপনারায়ণ, মেদিনীপুর ও খড়্গপুর এই তিন বিভাগে খাতায় কলমে মোট ৪৭৩টি করাতকল থাকলেও প্রকৃত সংখ্যাটি অনেক বেশি। গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা, ডেবরা, দাসপুর, নয়াগ্রাম, সাঁকরাইল, চন্দ্রকোনা রোড, হুমগড়ে ২০৮টি অবৈধ করাতকল রয়েছে বলে অভিযোগ। রাতের অন্ধকারে আবার কখনও দিনের বেলাতেই সরকারি বনাঞ্চল থেকে মূল্যবান গাছ পাচার হয়ে চলে যাচ্ছে সেই লাইসেন্স এবং লাইসেন্সবিহীন করাতকলগুলিতে। ফলে দু’দিক দিয়েই রাজস্বের বড়সড় ক্ষতি হচ্ছে। বন দফতরের তথ্য অনুযায়ী, ফি বছরই লক্ষ লক্ষ টাকার গাছ চুরি হয়ে যায়। এমনকি এলাকার মানুষও প্রচুর বেআইনি কাঠ ভর্তি ট্রাক আটক করে প্রশাসনের হাতে তুলে দিয়েছেন। তা সত্ত্বেও কাঠ পাচার পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন দফতরের এক কর্তা বলেন, “রাজনৈতিক চাপেই অবৈধ কল থেকে গাছ পাচার-- কিছুই বন্ধ করা যাচ্ছে না।” তাঁর অভিযোগ, “জঙ্গলগুলিতে একাধিক কাঠ মাফিয়া আছেন। তদন্তে তাদের নামও মিলেছে। কিন্তু রাজনৈতিক চাপেই সব সহ্য করতে হচ্ছে। নইলে অবৈধ কল বন্ধ করতে একদিনও লাগবে না।” |
করাতকল মালিকদের পালটা দাবি,বন দফতরই তাঁদের আইনি স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত করছে। গড়বেতার ওড়গঞ্জার প্রদীপ মল্লিক বলেন, “১৫ বছর ধরে করাতকল চালাচ্ছি। লাইসেন্সের জন্য নিয়ম মেনে আবেদনও করেছি। কিন্তু পাইনি।” ঘাটালের শীতল বাগ, নবকলার ইসরাইল খান, গুয়াইদহের আনামত মণ্ডল, আলি আজম চৌধুরীদের একই বক্তব্য। তাঁদের একটি সংগঠনও আছে। পশ্চিমাঞ্চল (মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া) করাতকল মালিক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক আবদুল রসিদ মণ্ডল বলেন, “তিন জেলার মালিকরা দীর্ঘ দিন ধরে লাইসেন্সের জন্য লড়ছেন। পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও বন দফতর লাইসেন্স দিচ্ছে না।” মেদিনীপুর, খড়্গপুর এবং রূপনারায়ণপুর বিভাগের ডিএফও-রা বলেন, বনাঞ্চল থেকে দু’কিলোমিটারের মধ্যে কোনও ভাবেই লাইসেন্স দেওয়া যায় না। তা ছাড়া তাঁদের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষমতাও নেই। তাঁরা আবেদনগুলি রাজ্যস্তরের স্টিয়ারিং কমিটিতে পাঠিয়ে দেন। বেআইনি করাতকল বন্ধ করা প্রসঙ্গে তাঁরা জানান, “আমরা মাঝেমধ্যেই অভিযান চালাই। তখন বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু উপযুক্ত কর্মীর অভাবে পুরোপুরি সেগুলি বন্ধ করা যায়নি।”
লাইসেন্স-প্রাপ্ত করাতকলগুলিও নানা অবৈধ উপায় নেয় বলে অভিযোগ। যেমন, প্রথমে একটি মেশিনের জন্য ছাড়পত্র পেলেও পরে অনুমতি ছাড়াই মেশিন-সংখ্যা বাড়িয়ে নেয়। লাইসেন্সযুক্ত মালিক সংগঠনের নেতা প্রকাশ চৌধুরী বলেন, “লাইসেন্স আছে এমন করাতকলগুলি নিয়ম মেনে চলছে কি না তা দেখার দায়িত্ব বন দফতরের। নিয়ম না মানলে প্রয়োজনে তারা অভিযান চালিয়ে সেগুলি বন্ধ করে দিতেই পারেন।”
অবৈধ করাতকল প্রসঙ্গে তৃণমূল বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতো অবশ্য দায় চাপিয়েছে সিপিএমের উপর। তাঁর অভিযোগ, “ওই কলগুলি সিপিএমের আমলে তৈরি। আমরা এসে সব বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এখন আবার কিছু খুলেছে বলে শুনেছি।” একই বক্তব্য বিধায়ক মৃগেন মাইতিরও।
সংকীর্ণ রাজনীতি বিপন্ন করছে গাছেদের প্রাণও, এমনই ইঙ্গিত মিলছে গোটা মদিনীপুরে।
|
কাঠপাচারের পাঁচকাহন |
• লাইসেন্স ছাড়াই অবাধে চলছে দু’শোরও বেশি করাতকল।
• লাইসেন্সপ্রাপ্তরাও অনুমতি ছাড়া বাড়াচ্ছে কলের সংখ্যা।
• কল চলে জেনারেটরে। বিদ্যুৎসংযোগে নিয়ন্ত্রণ করে লাভ নেই।
• যথেষ্ট কর্মীর অভাবে বন দফতরের নজরদারি দুর্বল।
• রাজনৈতিক চাপে অধরা কাঠমাফিয়ারা। |
|
খাদ্যের সন্ধানে নীলাচল পাহাড় থেকে নেমে আসা অসুস্থ চিতাবাঘকে উদ্ধার করল বন দফতরের কর্মীরা। শনিবার কামাখ্যার কালীপুর এলাকায়, জনবসতিতে চিতাবাঘ ঢুকে পড়ায় আতঙ্ক ছড়ায়। তবে অসুস্থ থাকায় সে কাউকে আক্রমণ করেনি। বাসিন্দারা তাকে খাবার ও জল দিয়ে বন দফতরকে খবর দেন। চিড়িয়াখানায় নিয়ে গিয়ে চিতাবাঘটির চিকিৎসা করা হচ্ছে। |