নদীতে জোয়ার এলে গতি বেড়ে যায় নৌকো কিংবা ভেসে থাকা খড়কুটোর। সাইবার দুনিয়ায় অবশ্য ছবিটা ভিন্ন। সেখানে তথ্যের জোয়ার এলে গতি কমে যাওয়াটাই রীতি। ঠিক যেমনটা হচ্ছে গত সপ্তাহ খানেক ধরে। সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, সম্প্রতি অবাঞ্ছিত মেসেজের জোয়ারে কমে যাচ্ছে ইন্টারনেটের গতি। ব্যাহত হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থাও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অবাঞ্ছিত মেসেজ বা স্প্যামের জোয়ার কোনও সাধারণ ঘটনা নয়। বরং এক দল বুদ্ধিমান ‘দুষ্কৃতীর’ মগজাস্ত্রের হানা। সংবাদসংস্থার খবর, গত কয়েক দিন ধরে চলা হ্যাকারদের এই আক্রমণের সামনে কার্যত নাজেহাল বিশ্বের তাবড় তাবড় সংস্থাগুলি। এই আক্রমণের উৎস কোথায়, সেটাও ধরতে পারছে না তারা। কেন এই আক্রমণ?
সে বিষয়ে কোনও নিশ্চিত কারণ খুঁজে না পাওয়া গেলেও সংবাদসংস্থা জানাচ্ছে, ইন্টারনেট সুরক্ষাপ্রদানকারী লন্ডনের একটি সংস্থা সম্প্রতি ‘স্প্যাম’ (অবাঞ্ছিত ই-মেল বা মেসেজ) আটকানোর জন্য একটি ব্যবস্থা বের করেছিল। ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলির ‘ব্ল্যাক লিস্ট’-ও বের করেছিল। তার পর থেকেই এই আক্রমণ শুরু হয়েছে। ওই সংস্থার সিইও স্টিভ লিনফোর্ড জানিয়েছেন, সপ্তাহ খানেক ধরে তাঁদের সংস্থার উপরে লাগাতার ‘সাইবার আক্রমণ’ চলছে।
বিভিন্ন সংবাদসংস্থা জানিয়েছে, ‘স্প্যাম’ আটকানোর জন্য যে ব্যবস্থা রয়েছে, তাতে একের পর এক স্প্যাম পাঠানো হচ্ছে। লাগাতার স্প্যামের বন্যায় উপচে পড়ছে সার্ভার। সংবাদসংস্থা সূত্রের খবর, প্রতি সেকেন্ডে ৩০০ জিবি তথ্য এসে জমা হচ্ছে বলে এক পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা জানিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মত, যে কায়দায় এই আক্রমণ চলছে, প্রযুক্তির ভাষায় তাকে বলা হয় ‘ডিস্ট্রিবিউটেড ডিনায়াল অফ সার্ভিস’। সেটা কী?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনও কম্পিউটার বা নেটওয়ার্কের পরিষেবা তার গ্রাহকদের কাছে পৌঁছনো বন্ধ করে দেয় হ্যাকারেরা। কখনও কখনও গোটা ব্যবস্থাটাকেই সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয় তারা। বেশির ভাগ সময়েই দেখা গিয়েছে, অনলাইন ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা, ক্রেডিট কার্ড প্রভৃতি ব্যবস্থায় এই ধরনের হানা হয়েছে। তবে কোনও স্প্যাম প্রতিরোধকারী সংস্থার উপরে হানা অভিনব।
বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক হানায় একাধিক কম্পিউটার থেকে স্প্যাম আসার ফলে উৎসটা চিহ্নিত হচ্ছে না। সংবাদ সংস্থা ‘রয়টার্স’কে বিশ্বের প্রথম সারির একটি সংস্থার প্রধান ভ্লিসিদিস জানিয়েছেন, হাতেগোনা কয়েকটি কম্পিউটার এই কাজ করলে তা আটকানো সহজ। কিন্তু অনেক অনেক কম্পিউটার এর মধ্যে জুড়ে গেলে প্রতিরোধ করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
তবে এই আক্রমণ যে নেহাত মামুলি কোনও হ্যাকার গোষ্ঠীর নয়, সে ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিত বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তি কর্তারা। অ্যান্টিভাইরাস পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থা ক্যাসপারস্কি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চলতি আক্রমণ এ যাবৎ কালের ‘সাইবার-হানা’গুলির মধ্যে অন্যতম বড়। |