ভিন রাজ্যের পাইকারি ক্রেতাদের দেখা না পেয়ে দিশেহারা চাষিরা বাজারে রিকশা ভ্যান বোঝাই করে আনা সব্জি মাঠে ও রাস্তায় ফেলে দিলেন। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটে ধূপগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজারের অধীন ময়নাগুড়ি উপ নিয়ন্ত্রিত বাজার চত্বরে। চাষিদের ফেলে দেওয়া সবজিতে এ দিন ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের অনেকটা অংশ ঢেকে যায়। পরিস্থিতি দেখে থমকে যান দূরপাল্লার গাড়ির চালকরা। রাস্তার দুধারে কয়েকশো ট্রাক ও বাস দাঁড়িয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান চলাচল স্বাভাবিক করে।
জলপাইগুড়ি জেলা নিয়ন্ত্রিত বাজার কমিটির চেয়ারম্যান তথা অতিরিক্ত জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার নেই। কারণ সরকার সব্জি কেনে না। বাজারে পাইকারও আনে না।”
চাষিরা জানান, ময়নাগুড়ি উপ নিয়ন্ত্রিত বাজার দিল্লি, বিহার, ভূটান, অসমের পাইকারদের উপরে নির্ভর করে। সপ্তাহে মঙ্গলবার ও শুক্রবার সেখান থেকে শতাধিক ট্রাক বোঝাই সব্জি বাইরে যায়। গত শুক্রবারও ভাল বাজার হয়েছে। এ দিন বাইরের ক্রেতারা আসেননি। সামনে স্থানীয়রা সামান্য সব্জি কেনেন। ক্ষুব্ধ চাষিরা রাস্তায় উচ্ছে, টম্যাটো, লঙ্কা ও বেগুন ফেলে প্রায় ঢেকে দেন। ময়নাগুড়ির চুড়াভাণ্ডার গ্রামের প্রবীণ টম্যাটো চাষি সুরেন রায় বলেন, “কয়েকদিন আগের বৃষ্টিতে খেতে প্রচুর টম্যাটো পেকেছে। গত শুক্রবার অল্প এনেছিলাম মঙ্গলবার তিন বস্তা এনেছি। কিন্তু পাইকার নেই। এত টম্যাটো বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার মত ভ্যান ভাড়া নেই। তাই রাস্তায় ফেলে দিয়েছি।” |
রাস্তায় সব্জি ফেলে এ ভাবেই প্রতিবাদ জানালেন চাষিরা। মঙ্গলবার ময়নাগুড়িতে দীপঙ্কর ঘটকের তোলা ছবি। |
এ দিন দীর্ঘক্ষণ পাঁচ বস্তা বোঝাই বেগুন নিয়ে অপেক্ষার পরে বাকালি গ্রামের চাষি বিমল বর্মনের মত অনেকে চিত্কার করে বলতে শোনা যায়, “এত সব্জি কোথায় রাখব? একটা হিমঘর তৈরি হল না আজও। বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে ভ্যান রিকশা ভাড়ায় যে খরচ হবে সেটা কোথায় পাব?” এলাকার কেপিপি পঞ্চায়েত সদস্য গণেশ রায় বলেন, “অনেককে জানিয়েছি। পুলিশ ছাড়া কেউ আসেনি।”
এই ঘটনার পরে চাষিরা প্রশ্ন তুলেছেন কেন এতদিনেও ময়নাগুড়িতে হিমঘর হয়নি? ময়নাগুড়ির তিন দফায় বিধায়ক ছিলেন আরএসপির কৃষক নেতা বাচ্চামোহন রায়। তিনি ফি ভোটে প্রতিশ্রুতি দিলেও কাজের কাজ করেননি বলে চাষিদের অভিযোগ। বাচ্চামোহনবাবুর যুক্তি, “চেষ্টা করেও সরকারি উদ্যোগে হিমঘর তৈরি করাতে পারিনি। বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সঙ্গেও কথা বলেছিলাম। সেই কাজও হয়নি।” ময়নাগুড়ি বর্তমান আরএসপি বিধায়ক অনন্তদেব অধিকারী কলকাতায় রয়েছেন। তিনি বলেন, “এমন হয়েছে নাকি! দেখি বিষয়টি নিয়ে কৃষি বিপণন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”
কিষাণ তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বাবলু রায় বলেন, “বামফ্রন্টের অপরিকল্পিত কাজের জন্য চাষিদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আমরা সবে ক্ষমতায় এসেছি। এর মধ্যে প্রতিটি ব্লকে কিষাণ মান্দি গড়ে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার। সেটা হলে সংরক্ষণের সমস্যা অনেকটাই মিটবে।” |