অস্থায়ী কর্মীর ভরসায় চলছে জেলার ট্রাফিক
তুন নিয়োগ হচ্ছিল না। উল্টে, অফিসার-কর্মীর বেশ কিছু পদ ছিল শূন্য। ক’বছর আগেও অবস্থা এমন ছিল যে পশ্চিম মেদিনীপুরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতেও ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন থাকত না। দুর্ঘটনা ঘটত। এ নিয়ে পথচলতি মানুষের মধ্যে অসন্তোষও চরমে উঠছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা হলেও পাল্টেছে। এনভিএফে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের একাংশকে ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তাঁদের প্রশিক্ষণও হয়। ফলে, এখন অন্তত শহর ও শহরতলির গুরুত্বপূর্ণ মোড় অর্থাৎ যে সব এলাকা ‘দুর্ঘটনাপ্রবণ’, সেখানে এনভিএফের দেখা মেলে। কোথাও দু’জন। কোথাও বা তারও বেশি। যাঁরা ট্রাফিক সামলানোর কাজ করেন। কিন্তু এ ভাবে কতদিন চলবে? শূন্যপদে কি কর্মী নিয়োগ হবে না? প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি জেলা পুলিশের কাছে।
শূন্যপদের পরিস্থিতি ঠিক কেমন? জেলায় ডিএসপি’র (ট্রাফিক) একটি পদ রয়েছে। সেই পদই শূন্য। ডিএসপি’র (ট্রাফিক) দায়িত্ব সামলাচ্ছেন মনোরঞ্জন ঘোষ। তিনি ডিএসপি (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)। ইন্সপেক্টর রয়েছেন একজন। এসআইয়ের পদ রয়েছে ১৬টি। এরমধ্যে ১৫টি পদই শূন্য। এএসআইয়ের পদ রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ৪টি পদই শূন্য। এই পরিস্থিতিতে ট্রাফিক সামলাতে ভরসা সেই হোমগার্ড-এনভিএফ। আগে ৫৫ জন হোমগার্ড ছিল। এনভিএফ ছিল ৪৫ জন। ক’মাস আগে মেদিনীপুর-খড়্গপুরে ১০০ জন করে এনভিএফকে ট্রাফিক সামলানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ট্রাফিকের দু’টি ইউনিট রয়েছে। একটি মেদিনীপুরে। অন্যটি খড়্গপুরে। দুই শহরেই ট্রাফিক ব্যবস্থা সে ভাবে গড়ে ওঠেনি বলে অভিযোগ। নজরদারির অভাবে শহর ও শহরতলিতে দ্রুত গতিতে গাড়ি চলাচল করে। সমস্যায় পড়েন পথচলতি সাধারণ মানুষ। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর একাংশ আবার ‘বেদখল’ হয়ে গিয়েছে। ফলে, যাতায়াতের এলাকা কমে এসেছে। সঙ্গে রয়েছে অটোর সমস্যা। কারণ, শহর ও শহরতলিতে এখন অটোর সংখ্যা বেড়েছে। সাধারণত, একটি অটোয় চার জন যাত্রী তোলার কথা। সেখানে ১২ জন যাত্রী তোলা হয়। বেপোরোয়া অটো চলাচলের ফলে একদিকে যেমন পথচলতি সাধারণ মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে, তেমনই অটো উল্টে যাত্রীদেরও প্রাণহানির আশঙ্কা থেকে যায়। ফলে এ নিয়ে সতর্ক হওয়া জরুরি।
কিন্তু সতর্ক করবে কে? পুলিশি সহায়তায় পরিবহণ দফতর অটো চালকদের সতর্ক করতে পারে। তবে সেই দফতরেরই পরিকাঠামো ‘বেহাল’। অন্তত অভিযোগ এমনই। জেলার সদর শহর মেদিনীপুরে দফতরের কার্যালয় রয়েছে। তবে ঘাটাল, ঝাড়গ্রাম, খড়্গপুরের মতো এলাকায় কোনও কার্যালয়ই নেই। ফলে, সব সময় রাস্তায় নেমে অভিযান চালাতে পারেন না পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। জেলা সদরের দফতরের আবার কর্মীর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। জেলা পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিকের বক্তব্য, “কিছু সমস্যা রয়েছে। তবে তার মধ্যেই নজরদারি চালানো হয়। যে সব চালক বিধি লঙ্ঘন করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হয়। জরিমানা আদায় করা হয়।”
কর্মী বাড়ন্ত
পদ মোট পদ শূন্যপদ
ডিএসপি
ইন্সপেক্টর
এসআই ১৬ ১৫
এএসআই ১২
কনস্টেবল ৩৬
গাড়ির চালক
একই বক্তব্য ডিএসপি (ট্রাফিক) মনোরঞ্জন ঘোষের। তাঁর কথায়, “বিভিন্ন এলাকায় মাঝেমধ্যে অভিযান চালানো হয়। চালকদের সতর্ক করা হয়।” পশ্চিম মেদিনীপুরে সব মিলিয়ে প্রায় ৮৫০টি অটো চলাচল করে। অধিকাংশই অবশ্য মেদিনীপুর, খড়্গপুর, ঘাটালের মতো শহরে। ঝাড়গ্রামে অটো রয়েছে। তবে সংখ্যায় কম। মেদিনীপুর-খড়্গপুরে আগের থেকে অটোর সংখ্যা বেড়েছে। নতুন রুট চালু হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে মোটর বাইকের দৌরাত্ম্য। জেলায় এখন পাল্লা দিয়ে মোটর সাইকেলের সংখ্যা বাড়ছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ২০০৯ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২৩ হাজার ৫০৯টি মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। ২০১০ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১১ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ২৮ হাজার ৯৮০টি মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন হয়। আবার ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১২ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৩০ হাজার ৫৯৬টি মোটর সাইকেলের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এরফলে দুর্ঘটনাও বাড়ছে। কারণ, একাংশ মোটর বাইক দ্রুত গতিতে চলাচল করে। পুলিশের বক্তব্য, বেপোরোয়া গাড়ি চালানো হচ্ছে দেখলেই চালকদের সতর্ক করা হয়। গাড়ির গতিবেগ নিয়ন্ত্রণে না রাখলে ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল করা হতে পারে বলেও তাঁদের জানানো হয়। প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। আশ্বাস মিলছে। তবে অটোর দৌরাত্ম্য বন্ধে পুলিশ-পরিবহণ দফতরের নজরদারি আদৌ আরও বাড়ে কি না, সেটাই দেখার। ট্রাফিকের হাল ফেরাতে অফিসার-কর্মীর শূন্যপদে কবে নিয়োগ হয়, দেখার সেটাও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.