চাকরির দাবিতে ফের বন্ধ সেতুর কাজ
ফের জমিদাতাদের বাধায় বন্ধ হয়ে গেল ব্রাহ্মণী সেতুর উপরে নির্মীয়মাণ রেল সেতুর কাজ। মঙ্গলবার সকালে নলহাটি থানার জগধারী গ্রাম লাগোয়া ওই রেল সেতুর কাছে পৌঁছে চাকরির দাবিতে কাজে বাধা দেন জমিদাতাদের একাংশ। বাধা পেয়েই দুই নির্মাণকারী সংস্থার কর্মীরা কাজ বন্ধ করে দেন। এ ভাবে বারবার কাজে বাধা পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে দুই নির্মাণকারী সংস্থাই। ক্ষুব্ধ রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীও। এ দিন সন্ধ্যায় ফোনে বলেন, “রাজ্য যদি সাহায্য করে, তা হলে রেলের কাজ হতে কোনও বাধা নেই। আর তাঁরা যদি মনে করেন রেলকে কোনও সাহায্য করবেন না, তাহলে রেল কী করে কাজ শেষ করবে!”
ওই সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত রেল ‘ইন্সপেক্টর অফ ওয়ার্কস’ মুকেশ কুমার বলেন, “সেতুটি অবিলম্বে নির্মাণ না করা হলে যে কোনও সময় পুরনো সেতু ভেঙে পড়ে বিপর্যয় ঘটতে পারে। তা বুঝেও এলাকাবাসীর একাংশ কখনও ক্ষতিপূরণের দাবিতে, কখনও চাকরির দাবিতে বারবার কাজ বন্ধ করে দিচ্ছেন।” সেতু নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্যতম একটি সংস্থার ম্যানেজার সুদীপ চট্টোপাধ্যায় আবার বলেন, “২০০৮ সাল থেকে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে কমপক্ষে দশ বারের বেশি কাজে বাধা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে সেতুটি নির্মাণে অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।” এ দিকে পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের ডিভিশন্যাল রেলওয়ে ম্যানেজার অনির্বাণ দত্ত বলেন, “শুনেছি কাজ বন্ধ হয়েছে। তবে পুরো বিষয়টি খোঁজ না নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”
বারে বারে বাধায় থমকে যাচ্ছে নলহাটির এই রেল সেতুর কাজ।—নিজস্ব চিত্র।
সাহেবগঞ্জ-বর্ধমান লুপ লাইনের নলহাটি ও স্বাধীনপুর স্টেশনের মাঝে নলহাটি থানার জগধারী গ্রাম সংলগ্ন ওই রেল সেতুটি ব্রাহ্মণী নদীর উপর অবস্থিত। ২০০৬ সালের বন্যায় ১০৯ বছরের পুরনো সেই রেল সেতু ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সময় কোনও রকমে মেরামত করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। তখনই সেখানে একটি নতুন সেতুটি নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় রেল। পূর্ব রেলের হাওড়া ডিভিশনের সহকারী বাস্তুকার (নির্মাণ) সঞ্জয় কুমার বলেন, “ওই রেল সেতুটি পূর্ব রেল ও উত্তর-পূর্ব রেলের সংযোগরক্ষাকারী সেতুগুলির অন্যতম। সেতুটি বেহাল দশায় বেশ কিছুদিন ধরে বিহার, ঝাড়খণ্ড-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, মালদহে ট্রেন চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তাই ওই সেতুটি নতুন ভাবে নির্মাণের বিশেষ প্রয়োজন আছে।”
রেল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ডিসেম্বরের পরে ফের ওই সেতু তৈরিতে বাধা পেল রেল। এ দিন সকালেই কাজে বাধা দেন ১৯ জন জমিদাতা। তাঁদের দাবি, সমস্ত নিয়ম মোতাবেক তাঁরা রেলের কাছে আবেদন করলেও চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ কোনও উচ্চবাচ্চ করছেন না। ওই ১৯ জন জমিদাতার অন্যতম জগধারী গ্রামের প্রবীর বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম দত্ত, সুখেন দত্ত-রা বলেন, “আমরা ১৯ জন জমিদাতা ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রশাসনের কাছে আবেদনপত্রও জমা করেছি। রেলের কাছেও আবেদন জমা পড়েছে। প্রশাসন জমি নেওয়ার সময় রেলে চাকরি মিলবে বলে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা চাকরি পাইনি।” আগামী ১ এপ্রিলের মধ্যে প্রশাসন তাঁদের চাকরির বিষয়ে কোনও সদর্থক ভূমিকা না নিলে ওই জমিদাতারা বৃহত্তর আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন।
এ দিকে বারবার রেলের এই গুরুত্বপূর্ণ কাজ আটকে গেলেও স্থানীয় বা জেলা প্রশাসনকে তেমন উল্লেখযোগ্য কোনও ভূমিকা নিতে দেখা যাচ্ছে না। এ দিন ফের কাজ বন্ধ হয়ে গেলেও নলহাটি ১ ব্লকের বিডিও তাপস বিশ্বাস বা রামপুরহাটের মহকুমাশাসক রত্নেশ্বর রায়, কেউই তার খবর জানতেন না। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা শুধু বলেন, “ওখানে কী হয়েছে, খবর নিয়ে দেখছি।” অন্য দিকে, পূর্ব রেলের হওড়া ডিভিশনের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার (কন্সট্রাকশন) রত্নেশ্বর প্রসাদ জানিয়েছেন, ওই সেতুর জন্য ৬২ জন জমিদাতার মধ্যে ৩৪ জনই ক্ষতিপূরণ নিয়ে নিয়েছেন। ১৯ জন চাকরির জন্য আবেদন করেছেন। তাঁদের চাকরির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় স্তরে বারবার বাধা পেয়ে দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ রত্নেশ্বরবাবু বলেন, “তার জন্য এ ভাবে বারবার কাজে বাধা দেওয়াটা ঠিক নয়। আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলাচনায় বসব।” যদিও অধীরবাবু বলেন, “জমি দিলেই যে চাকরি দিতে হবে, এমন কথা প্রযোজ্য নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.