|
|
|
|
জ্ঞানেশ্বরী মামলা |
কমিটি-নেতা অসিত মাহাতোর জামিন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
ছ’মাস জেলে থাকার পর জ্ঞানেশ্বরী মামলায় জামিন পেলেন জনগণের কমিটির নেতা অসিত মাহাতো। সোমবার মেদিনীপুর সিজেএম আদালত তাঁর জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এসে পৌঁছনোর পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেয়েছেন। তাঁর আইনজীবী কৌশিক সিংহর বক্তব্য, “মিথ্যে মামলায় অসিত মাহাতোকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।”
জনগণের কমিটির এক সময়ের মুখপাত্র অসিতকে গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর জ্ঞানেশ্বরী মামলায় গ্রেফতার করে সিবিআই। শুরুতে আদালতের নির্দেশে তাঁর সিবিআই হেফাজত হয়েছিল। পরে জেল হেফাজত। ওই দিন লালগড় থেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। জানা গিয়েছে, ছ’মাস কেটে গেলেও এই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট দাখিল করতে পারেনি সিবিআই। অন্যদিকে, মামলার মূল চার্জশিটেও তাঁর নাম ছিল না। এই প্রেক্ষিতেই সোমবার মেদিনীপুর সিজেএম আদালতে অসিত মাহাতোর জামিনের আবেদন জানান আইনজীবী কৌশিক সিংহ। তাঁর বক্তব্য, “কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই অসিত মাহাতোকে এই মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার চার্জশিট আগে হয়েছে। সেখানে আমার মক্কেলের নাম নেই। আগেও বিভিন্ন মিথ্যে মামলায় ওঁকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিন মেলে। ফের আরও একটা মিথ্যে মামলায় যুক্ত করা হয়।” সোমবারই আদালত জামিনের আবেদন মঞ্জুর করে। মঙ্গলবার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এসে পৌঁছয় মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে। এ দিন বিকেল থেকেই সংশোধনাগারের সামনে অপেক্ষা করছিলেন অসিত মাহাতোর স্ত্রী অনিকা মাহাতো। জেল থেকে বেরোনোর পর সন্ধ্যায় স্বামীর সঙ্গে নিয়ে তিনি বাড়ির পথে রওনা দেন। |
|
মঙ্গলবার মেদিনীপুর জেল থেকে বেরনোর পরে অসিত।—নিজস্ব চিত্র। |
২০১০ সালের মে মাস থেকে প্রায় দেড় বছর ‘ফেরার’ থাকার পর ২০১১ সালের ১৩ নভেম্বর লালগড় ও শালবনি থানার সীমানাবর্তী একটি এলাকা থেকে জনগনের কমিটির এই নেতাকে গ্রেফতার করেছিল যৌথ বাহিনী। ঝাড়গ্রাম থানায় একটি ইউএপিএ মামলা-সহ লালগড়, শালবনি ও গোয়ালতোড় থানা এলাকায় রাষ্ট্রদ্রোহ, খুনের চেষ্টা, অপহরণ ও হামলা-নাশকতা মিলিয়ে মোট ৩৮টি মামলায় অভিযুক্ত অসিত পাঁচ মাস জেলবন্দি থাকার পর সব ক’টি মামলায় জামিন পেয়ে গত বছরের এপ্রিলে মেদিনীপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগার থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। এরপর লালগড়ের ধরমপুর অঞ্চলের ভুলাগাড়া গ্রামের বাড়িতে ফেরেন। এলাকায় ফিরে নিজের জমিতে চাষবাস শুরু করেন। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। গত বছর ১৪ অগস্ট লালগড়ের ধরমপুরে অনুষ্ঠিত তৃণমূলের এক কর্মী-সভায় যান। দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায় ও জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি তথা শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতোর উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন কমিটির এই নেতা। ওই সভায় এলাকার নানা অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্যও রাখেন তিনি। এরপরই এলাকার কিছু প্রাক্তন জনগণের কমিটির সদস্য, বর্তমানে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ বাধে। অসিত-ঘনিষ্ঠদের বক্তব্য, এ জন্য ফের তাঁকে জ্ঞানেশ্বরী মামলায় জড়ানো হয়।
অসিত মাহাতো এক সময় ঝাড়খণ্ড পার্টির সক্রিয় সমর্থক ছিলেন। পরে বিজেপিতে যোগ দেন। ২০০৯ সালের গোড়ায় সিপিএমের রোষে এলাকা ছাড়া হন। ওই বছরের জুন মাসে এলাকায় ফিরে এসে জনগণের কমিটিতে নাম লেখান। ২০০৯ সালের অক্টোবরে কমিটির মুখপাত্র ছত্রধর মাহাতো গ্রেফতার হওয়ার পর কমিটির মুখপাত্র হন অসিত। ২০১০ সালের ২৭ মে রাতে ঝাড়গ্রামের সরডিহা এবং খেমাশুলি স্টেশনের মাঝে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। ঘটনায় মারা যান ১৫০ জন। আহত হন শতাধিক মানুষ। রেল দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে যায় অসিতের নাম। ওই সময় থেকে লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যান অসিত। ওই বছর জ্ঞানেশ্বরী কান্ডে ‘ফেরার’ অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম অসিত মাহাতোর খোঁজ দিলে এক লক্ষ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পোস্টার দেয় সিবিআই। পরবর্তীকালে অবশ্য উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণের অভাবে চার্জশিট থেকে তাঁর নাম বাদ রাখা হয়। এই মামলার বিচার চলছে মেদিনীপুরের বিশেষ জেলা ও দায়রা আদালতে। মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে আগামী ৮ এপ্রিল। ওই দিন থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্যায়ের সাক্ষ্যগ্রহণ। চলবে ১২ এপ্রিল পর্যন্ত।
|
পুরনো খবর: কাঠগড়ায় মাওবাদীরাই, বলি ৮১ প্রাণ |
|
|
|
|
|