বর্তমান প্রজন্মকে নিজেদের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সঙ্গে নতুন করে পরিচয় করাতে মঙ্গলবার রাজনগরের বাগানপাড়ায় সাড়ম্বরে পালিত হল আদিবাসীদের বসন্তকালীন ‘বাহা পরব’। উৎসবের উদ্যোক্তা ওই গ্রামেরই বাসিন্দা তথা রাজনগর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দেবীশ্বর পাঁউরিয়া এবং ওই আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দারা। বহু বছর পরে সেখানে এত বড় আকারে পালিত হল এই উৎসব। তবে অনুষ্ঠান সফল করতে এগিয়ে এলেন পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের আদিবাসীরাও।
এ দিন সকালেই গ্রামের মহিলা ও পুরুষ নাচ-গান করতে করতে আদিবাসী পুরোহিত নাইকে-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের দেবী জাহেরে-র থানে আসেন। পালিত হয় নানা ধর্মীয় আচার। তারপরে দেবীর প্রসাদ খেয়ে ফের শুরু হয় নাচগান। চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। |
রাজনগরের বাগানপাড়ায় বাহা পরব। —নিজস্ব চিত্র। |
নাচ গানের মাধ্যমে দেবীকে প্রসন্ন করে অর্শীবাদ চাওয়া হল, যাতে এ বার বৃষ্টি ভাল হয় এবং ফসল ভাল হয়। দেবীশ্বরবাবু বলেন, “এই বাহা পরব আমাদের কাছে খুবই পবিত্র ও প্রাচীন একটি উৎসব। শাল গাছে যখন ফুল আসে, অর্থাৎ বসন্ত কালে মূলত ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমায় এটি পালন করা হয়ে থাকে। তবে এখন কেউ কেউ চৈত্র মাসের পূর্ণিমাতেও তা পালন করেন। কিন্তু বছরের পর বছর শুধু মূল পুজো বাদ দিলে সে ভাবে আর এই পরব পালিত হচ্ছিল না। বর্তমান প্রজন্ম যাতে নিজেদের শিকড়ের সঙ্গে পরিচিত হতে পারে, সেই আগ্রহ নিয়েই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।” দুমকার কুলহোড় গ্রামের একটি আদিবাসী দলকে আমন্ত্রণ করে আনা হয়, যাতে বাহা-র নাচ ও গান রীতি মেনে হয়।
উৎসব দেখতে ভিড় জমালেন আশ পাশের কালপাহাড়ি, হড়হড়ে, ততুরপাড়া, সুন্দরখেলে, হীরাপুর, মাদারপর-সহ বেশ কয়েকটি আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দারা। নাচগানের মজা নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা পেটভরে খেলেন জাহেরা-র প্রসাদ। সব মিলিয়ে খুশি মনসা মুর্মু, বাহামতি মুর্মু, ছিতেরানী হাঁসদা-রা। আর নামী অদিবাসী নৃত্য শিল্পী বাগানপাড়ার কালিদাসী পাঁউরিয়া বা হীরপুরের সুখমনি কিস্কুদের আশা, “পরের বার বাইরের অতিথিদের যাকতে হবে না। নিজেরাই দল করে বাহা পরব করব।” |