বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সুনীতার ভিডিওয় স্পেস
স্টেশনের অন্দরমহল

গায়ে একটা কালো ফুলশার্ট আর খাকি রঙের হাফ প্যান্ট। মাথার উপর ভাসছে অবিন্যস্ত চুল। মাধ্যাকর্ষণহীন ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে প্রায় ভাসতে ভাসতেই ক্যামেরার সামনে হাজির হলেন সুনীতা উইলিয়ামস, নাসার ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী। উদ্দেশ্য একটাই, আমজনতাকে এক বার ঘুরিয়ে দেখানো আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের অন্দরমহল।
মানুষ মহাকাশে পৌঁছেছে বহু দিন হল। আস্তানাও গেড়েছে মহাশূন্যে, যার পোশাকি নাম ‘ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন’। মানুষের বসবাসযোগ্য এই কৃত্রিম উপগ্রহটি পৃথিবীর কক্ষপথে পাক খাচ্ছে। নভশ্চররা সেখানে গিয়ে গবেষণা করেন, খতিয়ে দেখেন মহাকাশের হাল-হকিকত। পত্র-পত্রিকায় সে সব খবরের আনাগোনাও আছে যথেষ্ট। কিন্তু মহাকাশচারীদের সংসার চলে কী ভাবে, কোথায় ঘুমোন, কী খান, প্রাতঃক্রিয়ার বন্দোবস্তই বা কেমন এ সব জানতে পারেন না কেউই। মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে কৌতূহলীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হত সুনীতাকে। তাই গত নভেম্বরে মহাকাশ থেকে ফেরার আগে রীতিমতো ভিডিও করে এনেছেন অন্দরমহলের ছবিটা। সম্প্রতি ইন্টারনেটে জনসমক্ষে এসেছে সেটি। তাতেই ধরা পড়ল স্পেস স্টেশনের শোবার ঘর, রান্নাঘর, এমনকী বাথরুমও।
সুনীতার ভিডিও-র একটি দৃশ্য।
ভিতরটা দেখতে একটা বিশাল টানেলের মতো। দু’পাশের দেওয়ালে এক হাত অন্তর অন্তর এ দিকে সে দিকে হাতল লাগানো। মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় চলতে ফিরতে ওই হাতলগুলোই ভরসা। এমনই একটা হাতল ধরে রীতিমতো কৌশলে পাক খেয়ে চৌকো দেখতে দরজাটা পেরোলেন সুনীতা। গন্তব্য বেডরুম। মেঝের নীচে ঘর। দরজার পাল্লা দু’টো খোলাই ছিল। কায়দা করে ঢুকলেন। এক হাত ছোট্ট জায়গাটাকে অবশ্য ঘর বলা ঠিক হবে কি না জানা নেই, বরং অনেকটা কফিনের মতো দেখতে। একটা ফোন বুথে যতটুকু জায়গা থাকে, এখানেও তাই। তার একপাশে একটা স্লিপিং বেড রাখা। সুনীতা বললেন, “এখানে শুলে ঠিক শোয়ার অনুভূতি হয় না। মনে হয় দাঁড়িয়েই রয়েছি। যে দিকে ইচ্ছে মাথা করেও শোয়া যায়। তাতেও আলাদা কোনও অনুভূতি হয় না।” কায়দা করে সামনের দেওয়ালটায় একটা ল্যাপটপ, পছন্দের কিছু বইপত্র রাখা। একপাশে কিছু জামাকাপড়।
ঘুম থেকে উঠে প্রথম কাজ মুখ ধোওয়া, দাঁত মাজা। মহাকাশেও তার অন্যথা ঘটে না। নিজের শোবার ঘর থেকে বেরিয়ে সুনীতা এগোলেন বাথরুমের দিকে। দেওয়ালে একটা ফোল্ডিং ব্যাগ ঝোলানো। ব্যাগটা খুলতেই তাতে অনেকগুলো খাপ। তার মধ্যেই পেস্ট-ব্রাশ, চিরুনি, আরও টুকিটাকি জিনিস রাখা। পেস্ট জিনিসটা চিটচিটে, তাই ব্রাশে লাগাতে বিশেষ অসুবিধা হয় না। ব্লাডব্যাঙ্কে রক্ত যে ধরনের ব্যাগে থাকে, এখানে তেমন জিনিসে থাকে জল। ব্যাগের সামনে একটা টিউব লাগানো। পেট টিপে জল বার করতেই বিন্দু বিন্দু জল বেরিয়ে এল। সুনীতা এক রকম পেস্টে মাখিয়েই দিলেন জলটা। এর মধ্যেই কয়েকটা জলের বিন্দু পেস্টে না লেগে শূন্যে ভাসতে লাগল। একটা বড় বুদ্বুুদ্ ভাসছিল। সুনীতা সেটা খেয়ে ফেললেন। বাথরুমে কোনও বেসিন নেই। তাই কুলকুচি করে ফেলার উপায় নেই। হয় গিলে ফেল, না হয় টাওয়েলে মুছে নাও। খানিক কৌতূকের সুরেই সুনীতা বললেন, “মাস খানেকের তো ব্যাপার। সবাই গিলে ফেলার অপশনটাই বেছে নিয়েছে। অনেকটা মাউথ ফ্রেশনারের মতো লাগে।”
চুল আঁচড়ানোতেও বেশ ঝক্কি। চিরুনি চালাতেই মাথার উপরে ভাসমান চুলগুলো ঝাঁটার কাঠির মতো খাড়া হয়ে গেল। মুচকি হেসে সুনীতা বললেন, “দেখতেই পাচ্ছেন, এখন কেমন সুন্দর লাগছে।”
রান্নাঘরটাও ঘুরে দেখালেন সুনীতা। কী নেই সেখানে সব্জি, রুটি, মাংস, আলাদা আলাদা প্যাকেটের মধ্যে অজস্র খাবার। কোনওটা শুকনো। জল দিয়ে বানাতে হবে। কোনওটা আবার বানানোই আছে। গরম করে নিলেই খাওয়ার উপযোগী। নানা স্বাদের লজেন্সও রয়েছে। শুধু মার্কিন খাবারই নয়, চাইলে মিলবে জাপানি কিংবা রাশিয়ান ডিশও। তবে কী ভাবে রান্না হয়, সে বিষয়ে আর বিশদ জানাননি সুনীতা।
টয়লেটটাই বা বাদ যায় কেন? “আসুন দেখে যান,” বলে একটা ফোন-বুথের মতো দেখতে জায়গার সামনে হাজির হলেন সুনীতা। এটাই টয়লেট। দরজা নেই, পর্দা দিয়ে সামনেটা ঢাকা। পর্দা আবার উপরে-নীচে দু’দিকেই লাগানো। ভিতরে ঢুকে এক পাশ থেকে পর্দাটা ঠেলে সরিয়ে দিলেই ‘নিশ্ছিদ্র গোপনীয়তা’। টয়লেটে ঢুকলেই চোখে পড়ে ছোট্ট একটা গোল জানলা। কাচের বাইরে উঁকি মারছে মহাকাশ আর উজ্জ্বল চাঁদ।
স্পেস স্টেশনের শৌচাগার কিন্তু ফাইভ স্টার হোটেলের চেয়ে বহুগুণ দামি। ‘ওয়েস্ট কালেকশন সিস্টেম’-এর দামই ১ কোটি ২৫ লক্ষ পাউন্ড।
কী এই ‘ওয়েস্ট কালেকশন সিস্টেম’? নামেই স্পষ্ট এটি বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহের যন্ত্র। নাম না করে সুনীতা ‘মূত্র’ এবং ‘মল’কে যথাক্রমে ১ নম্বর এবং ২ নম্বর বলে সম্বোধন করতে শুরু করেন। আগে ১ নম্বর বর্জ্যটিকে মহাকাশে মুক্ত করা হত এবং ২ নম্বরটিকে পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হত। কিন্তু বিষয়টি খুবই অস্বাস্থ্যকর। তা ছাড়া স্পেস স্টেশনের বাতাসেও দ্বিতীয়টির উপস্থিতি প্রতি মুহূর্তে টের পাওয়া যেত। তাই এখন ওয়েস্ট কালেকশন সিস্টেমে ১ এবং ২-দু’টিকেই সংগ্রহ করে মহাশূন্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। তাতে গবেষণাকেন্দ্রে বায়ুদূষণও হয় না, আবার অস্বাস্থ্যকরও হয় না, কারণ ব্যাকটিরিয়া মহাশূন্যে বেঁচে থাকতে পারে না। যন্ত্রের দু’টি অংশ। ‘১’-এর জন্য রয়েছে বিশেষ পাইপ। ‘২’-এর যন্ত্রটা অনেকটা কমোডের মতোই, তবে আকারে ছোট। যন্ত্রের নিজস্ব ‘সাকশন পাওয়ার’ বা টেনে নেওয়ার ক্ষমতা আছে। তাই মাধ্যাকর্ষণের অনুপস্থিতিতে বর্জ্য বিপথগামী হয় না।
তবে যন্ত্র যে কখনও বেগড়বাই করে না তা নয়, এ-ও জানালেন সুনীতা। তখন গ্লাভস হাতে সাফাইয়ের কাজে নামতে হয় মহাকাশচারীদেরই।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.