চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১...
সময়ের হাত ধরে আরও জটিল হয়ে উঠছে জীবন
ময় যত এগোচ্ছে জীবন তত জটিল হচ্ছে। শিল্প জীবনের দর্শন। তাই শিল্প প্রকাশেও জটিলতা বাড়ছে। একবিংশ শতকে ‘অলটারনেটিভ আর্ট’ বা বিকল্প রূপকল্প সেই জটিলতা থেকেই উদ্ভূত। কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় প্রকাশের সেই জটিলতা শিল্পকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করছে। সাধারণ দর্শকের বোঝার সীমা থেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পক বা কিউরেটরের কিছু দায়িত্ব থাকে। তিনি তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে কোনও প্রদর্শনীর বা বিশেষ কোনও প্রদর্শের তাৎপর্য সহজ ভাষায় দর্শককে বোঝানোর চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু অনেক সময়ই এর বিপরীতটাই ঘটে। প্রদর্শনীর ভূমিকা দর্শককে বিভ্রান্ত করে।
বিড়লা অ্যাকাডেমিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল বিকল্প রূপকল্পমূলক একটি সম্মেলক প্রদর্শনী। এটি কিউরেট করেছেন শাহীন মেরালি। প্রদর্শনীর শিরোনাম ‘দ্য ইন্ডিয়ান প্যারালাক্স অব দ্য ডাবলিং অব হ্যাপিনেস’। এই প্রদর্শনীর অনেক কাজ এবং ‘কিউরেশন’ পূর্বোক্ত জটিলতার আদর্শ দৃষ্টান্ত। ‘প্যারালাক্স’ কথাটির অর্থ দৃষ্টিকোণের পরিবর্তনের ফলে কোনও বস্তুর অবস্থানের আপাত পরিবর্তন। এর সঙ্গে এই প্রদর্শনীর কী সম্পর্ক বোঝা দুরূহ। সুখ দ্বিগুণিত করার ব্যাপারটা অবশ্য কিছুটা বোঝা যায়। শিরোনামের তাৎপর্য বোঝাতে গিয়ে মেরালি ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট রিয়েলিটি’র কথা বলেছেন। ।
প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের দশ জন শিল্পী। চিত্রভানু মজুমদারের একটি ইনস্টলেশনভিত্তিক কাজের শিরোনাম ‘রেড ব্লেজ: দ্য ক্যারেজ অব নাইটস’। গ্যালারির মেঝেতে রেললাইন পাতা। তার উপর মালবোঝাই একটি ট্রলি। সেটি চলছে। এক প্রান্তে গিয়ে বাফারে ধাক্কা খেয়ে অপর প্রান্তে ফিরে আসছে। সেখানেও ধাক্কা খেয়ে আবার যাচ্ছে উল্টো দিকে। আজ ভারতীয় উন্নয়ন এ রকমই। কোনও গন্তব্যে পৌঁছচ্ছে না। কেবলই ধাক্কা খেয়ে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে যাচ্ছে। পরিণতি শূন্য। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে করা অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই রচনাটিতে, সমস্যা হচ্ছে, দর্শকের কল্পনার কোনও সুযোগ নেই। তাঁর চিত্রভিত্তিক অন্য দু’টি রচনা কিন্তু এই শূন্যতাকেই অনেক সহজে প্রকাশ করে।
শিল্পী: প্রবীর গুপ্ত
প্রবীর গুপ্তের ‘উই আর ইন দ্য সেম বোট টুগেদার ব্রাদার’ শীর্ষক বহুমাত্রিক ইনস্টলেশনটি এক ইহুদি পরিবারের কলকাতায় অবস্থানের গল্প নিয়ে করা। এই কাহিনির অছিলায় শিল্পী আবিশ্ব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক প্রতিবাদী পরিমণ্ডল রচনা করেছেন। এখানে উপস্থাপনায় যে জটিলতা রয়েছে, তাকে একেবারেই বাহুল্য মনে হয় না। তাঁর ‘স্মাইলিং পিপল’ শীর্ষক চিত্র ও আলোকচিত্র-ভিত্তিক রচনাটি অত্যন্ত বলিষ্ঠ এবং শ্লেষাত্মক।
মিঠু সেন অত্যন্ত স্বকীয়তাসম্পন্ন শিল্পী। তাঁর ‘ওভার ড্রেমট, ওভার ডেড’ শিরোনামে ড্রয়িংভিত্তিক বড় পরিসরের দ্বিমাত্রিক রচনাটি এখনকার মানবিক পরিস্থিতির করুণ শূন্যতাকে অভিব্যক্ত করেছে।
জিতিশ কল্লাতের রচনা দু’টি যেমন। তাঁর ‘অ্যানাটমি অব আ ফোর্টনাইট’ বা ‘ওয়ান আওয়ার’ শীর্ষক ত্রিমাত্রিক রচনাদু’টি ভঙ্গি দিয়ে ভোলাবার দৃষ্টান্ত। রাবার স্ট্যাম্প জুড়ে জুড়ে করা রীনা সাইনি কল্লাতের মাকড়সার জালও গভীর কোনও অভিঘাত সৃষ্টি করে না। ‘সিন্যাপস’ শিরোনামের ভিডিয়ো প্রজেকশনে রীনা চোখের পাওয়ার নির্ধারণের জন্য যে অক্ষরমালা পড়তে দেওয়া হয়, সেই পাঠকে পুনরাবৃত্ত করে সামাজিক বাস্তবতার কিছু সূক্ষ্ম দিক তুলে ধরেছেন।
রেমেন চোপড়ার মিশ্রমাধ্যম ও আলোকচিত্র-ভিত্তিক ছবি দু’টির শিরোনাম বেশ দীর্ঘ ও জটিল ‘লিভস উইদিন টাইম ইফ টাইম লিভস উইদিন ইট, অ্যান্ড দেন উই ক্যান জাস্ট রাইট’। কিন্তু তুলনায় অনেক সহজ ও সমৃদ্ধ। তা হলে এই আরোপিত অতিকথনের প্রয়োজন কী? হেমা উপাধ্যায়ের টুকরো কাগজে কোনও বার্তা মুখে নিয়ে সার বেঁধে বসে থাকা নানা রঙের মাটির পাখি নিয়ে করা রচনাটি স্নিগ্ধ এক নান্দনিক আবহ তৈরি করে। বিভা গলহোত্রা ও মণীশ নাই-এর রচনায় কোনও সুস্থিত চিন্তার প্রকাশ নেই। শেবা ছাছি একে ৪৭ রাইফেলের ইতিহাসের সূত্রে যে সন্ত্রাসের ইতিহাস ব্যক্ত করেছেন।
অনেক সময়ই মনে হয় ভঙ্গি দিয়ে চোখ ভোলাবার প্রবণতা অনেক ক্ষেত্রেই বিকল্প রূপকল্পের একটা সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.