কোথাও চৈত্রের ভোরে ফিরে আসছে শীতের আমেজ, কোথাও বা বসন্ত আটকে ক্যালেন্ডারের পাতাতেই। কলকাতা থেকে লন্ডন, মার্চের শেষ লগ্নে মিল শুধু একটাই আবহাওয়ার ভেল্কি।
বুধবার ভোরে কলকাতা ও সংলগ্ন বহু এলাকাই ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল। ঘুম ভেঙে অনেকেই বসন্তের চেনা ভোরের ছবিটা খুঁজে পাননি। তার জায়গায় যেন ফিরে এসেছিল পৌষের হিমেল সকাল। আবহাওয়া এমনতর ভেল্কি দেখাচ্ছে অন্যান্য দেশেও। দক্ষিণ গোলার্ধের অস্ট্রেলিয়া খরা ও বন্যার মিশেলে জেরবার। জার্মানিতে কোথাও ঝকঝকে রোদ, তো কোথাও এক হাঁটু বরফ। ব্রিটেনেও তুষারপাতের বিরাম নেই। অনেক জায়গায় দিনের তাপমাত্রাও থাকছে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক নীচে। গত পঞ্চাশ বছরে এমনটা হয়নি। ১৯৬২ সালের মার্চ মাসে ব্রিটেনে গড় তাপমাত্রা নেমে গিয়েছিল ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে। আবহবিদেরা মনে করছেন, ’৬২-র আসন এ বার হাতছাড়া না হলেও তার আশপাশেই ঘোরাফেরা করবে চলতি মরসুম।
কেন এই অদ্ভুতুড়ে আচরণ করছে আবহাওয়া?
আবহবিজ্ঞানীদের দাবি, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের বদল ঘটেছে। তার ফলেই বেশ কিছু ক্ষেত্রে শীত বিদায়ে দেরি হচ্ছে। পূর্ব ইউরোপ ও স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে কনকনে হাওয়া এসেই চলেছে। ভারতের ক্ষেত্রেও এই বায়ুপ্রবাহের বদল ধরা পড়েছে। মৌসম ভবনের আবহবিদেরা জানিয়েছেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর অনেক বেশি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা (ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে বয়ে আসা বায়ুপ্রবাহ, যা আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরে ঢোকে) এ দেশে এসেছে। এ বছর পরপর পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জেরে যেমন উত্তর ভারতে বৃষ্টি হয়েছে, তেমন একাধিক বার শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গও। দিন কয়েক আগেও একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কাশ্মীরে ঢুকেছিল। সেটি নেপালের দিকে সরে গিয়েছে। আবহবিজ্ঞানীরা এ দিন জানান, পাকিস্তান ও সংলগ্ন এলাকায় ফের একটি ঝঞ্ঝা হাজির হয়েছে।
বুধবার ভোরে কলকাতা ঠান্ডা পেল কেন? আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ জানান, উত্তরবঙ্গ থেকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল পর্যন্ত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা রয়েছে। তার এক পাশে ঠান্ডা বাতাস বইছিল।
অন্য দিকে সাগর থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস ঢুকেছে। এই দুয়ের মিশেলেই কোনও কোনও এলাকায় কিছু ক্ষণের জন্য কুয়াশা তৈরি হয়েছে। আবহবিদদের ব্যাখ্যা, বায়ুপ্রবাহের সাময়িক বদলও এ ধরনের পরিস্থিতির জন্য দায়ী। ইদানীং দক্ষিণবঙ্গে দখিনা হাওয়া বইলেও রাতের দিকে উত্তুরে হাওয়া বইছে বলে আবহবিদরা জানান।
অথচ গত বছর ছবিটা ছিল একেবারে উল্টো। গত মার্চে ব্রিটেনের অধিকাংশ জায়গাতেই গড় তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে ছিল, যা কিনা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি। অ্যাবেরডিনশায়ার-এর উদাহরণ তুলে ধরছেন বিজ্ঞানীরা। ওই এলাকায় গত বছর মার্চে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ২৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সেখানে এ বছর মার্চে সেখানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে হয়েছে -১২.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ ৩৬.৫ ডিগ্রির ফারাক।
কী করে এমন হচ্ছে? আবহবিদেরা বলছেন, গত বছর বিলেতে উচ্চচাপের প্রভাব ছিল। যার ফলে আকাশ অনেক বেশি পরিষ্কার ছিল, রোদের তেজও ছিল বেশি। মিলেছিল দখিনা হাওয়াও। এ বছর কনকনে হাওয়ার বিরাম নেই। এ দিন ছিল দিন-রাত্রি সমান। আগামিকাল, বৃহস্পতিবার থেকে দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে থাকবে। তবে তাতেও বিলেতের শীত পালাবে কি না, তা নিয়ে নিশ্চিত নন আবহবিজ্ঞানীরা। |