ন্যাশনালের পর এনআরএস
সাগরে মজে ডাক্তাররা, শিকেয় উঠল চিকিৎসা
হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারের সংখ্যা ১৩৫ জন। তার মধ্যে ১১৬ জনই রবিবার দিনটা কাটালেন তাজপুর সমুদ্রসৈকতে! ফেরার কথা সোমবার দুপুরে। ফলে এই দেড় দিন নীলরতন সরকার হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা এক রকম শিকেয়। বহু রোগীকে অন্যত্র রেফার করতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ ভাবে দল বেঁধে ছুটি নিতে পারেন কি?
স্বাস্থ্যকর্তারা স্বীকার করেছেন, একসঙ্গে এত জন চিকিৎসকের ছুটি মঞ্জুর হওয়ার কথা নয়। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “এটা হওয়ার কথা নয়। কী ভাবে এক সঙ্গে এত জন ছুটি নিলেন, আমি জানি না। অধ্যক্ষ বলতে পারবেন।” আর মেডিক্যাল কলেজটির অধ্যক্ষ শ্রীকান্ত পুরকায়েত এ দিন জানিয়ে দিয়েছেন, এ সম্পর্কে তাঁর কাছে কোনও তথ্য ছিল না। শ্রীকান্তবাবু এবং সুশান্তবাবুর কাছে এ-ও জানতে চাওয়া হয়, ফিরে এলে ওই জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? দু’জনের কেউ-ই কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এখানেই অবশ্য শেষ নয়। তাজপুরে এই সংক্রান্ত খবর সংগ্রহ করতে গেলে জুনিয়র ডাক্তাররা এক বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকে মারধর করেছেন বলেও অভিযোগ।
জুনিয়র চিকিৎসকদের দল বেঁধে ছুটি নেওয়া অবশ্য নতুন নয়। বছরখানেক আগে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররাও এ ভাবে কর্তৃপক্ষকে না-জানিয়ে ছুটি নিয়েছিলেন। অভিযোগ ছিল, ওষুধ সংস্থার টাকায় তাঁরা বেড়াতে গিয়েছেন। এনআরএসের ক্ষেত্রেও একই অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থার উপরে ওষুধ সংস্থা ও ব্যবসায়ীদের দাপট বরাবরই ছিল। কিছু দিন আগেই সরকারের উদ্যোগে সস্তায় ওষুধ বিক্রি ঠেকাতে গোটা রাজ্যের ওষুধের দোকান এক দিনের জন্য বন্ধ করে দিয়েছিলেন ওষুধ ব্যবসায়ীরা। রাজ্য সরকার কার্যত তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থাই নিয়ে উঠতে পারেনি। তারও আগে ন্যায্য মূল্যের জেনেরিক বা সস্তা ব্র্যান্ডের ওষুধের দোকানে প্রেসক্রিপশন পাঠালে খুন হয়ে যাওয়ারও হুমকি পেয়েছেন সরকারি হাসপাতাল এসএসকেএমের চিকিৎসকরা। এনআরএসে দেড় দিনের জন্য চিকিৎসা পরিষেবা কার্যত শিকেয় তুলে দেওয়ার মধ্যে সেই দাপটেরই প্রকাশ দেখছেন ক্ষুব্ধ চিকিৎসকদের একটি মহল। অভিযোগ উঠেছে, ওষুধ সংস্থার অর্থ ও আয়োজনেই বিনোদনের ব্যবস্থা হয়েছে আর তার ডাকে সদল সাড়া দিয়েছেন ওই জুনিয়র ডাক্তাররা। এ সম্পর্কে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার বক্তব্য, “নিজেরা গিয়েছেন নাকি কারও টাকায় গিয়েছেন, তা জানি না। খোঁজ নিয়ে বলতে হবে।”
কী হয়েছে এনআরএসের ক্ষেত্রে?
হাসপাতাল সূত্রের খবর, শনিবার রাতে চারটি বাস বোঝাই করে কলকাতা থেকে তাজপুর রওনা হন ওই জুনিয়র ডাক্তাররা। এ দিন ভোরে ১১৬ জনের দলটি তাজপুরের দু’টি হোটেলে এসে ওঠে। একটি ভ্রমণ সংস্থা তাদের তরফে হোটেলে বুকিং করেছিল। দুপুরে সমুদ্রের ধারে স্থানীয় এক সাংবাদিক চিকিৎসকদের ছবি তুলতে গেলে গণ্ডগোল বাধে। জুনিয়র ডাক্তাররা ওই সাংবাদিকের মোবাইল, ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে পুলিশ। দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে।
এই সময় কলকাতায় সরকারি হাসপাতালটিতে কী ভাবে ভুগতে হয়েছে রোগী ও তাঁদের পরিবারকে?
এ দিন সকালে টিটাগড় থেকে বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে এনআরএসে এসেছিলেন স্বপন তপাদার। তাঁর বাবা খাট থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। হাসপাতাল থেকে ডাক্তাররা ছুটিতে গিয়েছেন বলে জানিয়ে তাঁদের অন্যত্র রেফার করে দেওয়া হয়। একই অভিযোগ স্নায়ুরোগে আক্রান্ত বীণাপানি হালদারের পরিবারেরও। তাঁকে নিয়েও পরিবারের লোকেদের ছুটতে হয় অন্য হাসপাতালে। প্রশ্ন উঠেছে, রোগীদের পরিবারের এই যে হয়রানি হল, তার জবাবদিহি করবে কে? এত জনকে একসঙ্গে ছুটিই বা দিয়েছেন কে? রবিবার অন্তত এই সব প্রশ্নের কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা অবশ্য দাবি করেছেন, জুনিয়র ডাক্তাররা ছুটিতে গিয়েছেন জানার পরে বহু সিনিয়র এসে পরিস্থিতি সামলেছেন।
কর্মসংস্কৃতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই বলছেন, এই নিয়ে সরকারের মনোভাব কী, সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তাঁদের বক্তব্য, বন্ধে কাজে না এলে সরকারি কর্মীদের মাইনে কেটে নেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু কাজে আসার তোফা হিসেবে অনেকেই পেয়ে যান বাড়তি ছুটির আশ্বাসও। তাই প্রশাসনেরই একাংশের মন্তব্য, স্বাস্থ্য দফতরেই বা এর প্রভাব পড়বে না কেন?
মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই রয়েছে এই দফতর। ক্ষমতায় আসার পর আচমকা হাসপাতাল পরিদর্শন শুরু করেছিলেন তিনি। যদিও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। তবে সম্প্রতি ওষুধের দোকান পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী। স্বাস্থ্য দফতরেরই কারও কারও বক্তব্য, মুখ্যমন্ত্রী নিজে চাইছেন, কর্মসংস্কৃতি ফিরুক। তখন সরকারি হাসপাতালের এত জন জুনিয়র চিকিৎসক একসঙ্গে ছুটি নেওয়ার সাহস পান কী ভাবে?
সমস্যা হল, এর জবাব দেওয়ার জন্য রবিবার কাউকে পাওয়া যায়নি!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.